ফাইল চিত্র
ফের কংগ্রেস সভাপতি পদের দায়িত্ব নেবেন কি না, তা স্পষ্ট করলেন না। কিন্তু দলের নেতাদের কংগ্রেসের মতাদর্শ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ভাবনা থাকা দরকার বলে আজ সওয়াল করলেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দলের নেতারা যখন এক সুরে তাঁকে ফের সভাপতি পদের দায়িত্ব নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন, তখন রাহুল বলেছেন, কংগ্রেস নেতারা আসল জায়গায়, দলের মতাদর্শের প্রশ্নেই আপস করে ফেলছেন।
রাহুলের এই ভাবনা থেকেই আজ ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দলের নেতা-কর্মীদের ‘প্রকৃত জাতীয়তাবাদ’, ‘ভারতের ভাবনার জন্য লড়াই’ ও ‘কংগ্রেসের মতাদর্শ’-র মতো বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, পুরো বিষয়টাই রাহুলের মস্তিষ্কপ্রসূত। দলের ওয়ার্কিং কমিটি তাতে স্রেফ সিলমোহর বসিয়েছে। রাহুল মনে করছেন, বিজেপি জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে ভোটের মেরুকরণ করছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কথা বলে আসা কংগ্রেস তার মোকাবিলা করতে পারছে না। দলিত, বঞ্চিতদের হয়ে রুখে দাঁড়াতে পারছে না। এই জন্যই কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দরকার। রাহুল আজ মন্তব্য করেছেন, দিল্লির বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম বা সংবাদপত্র কংগ্রেসের রাজনীতি ঠিক করতে পারে না।
সভাপতি পদের বিষয়ে বিবেচনা করবেন বলে জানালেও রাহুল আজ দলের নেতাদের বলেছেন, ‘‘যদি আপনারা দমিত স্বর তুলে ধরতে তৈরি থাকেন, তা হলে আমিও তৈরি।’’ পঞ্জাবের নতুন মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের গল্প শুনিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘আমি যখন পঞ্জাবের চরণজিৎ সিংহ চন্নীকে ফোন করে বললাম, দল আপনাকে মুখ্যমন্ত্রী করছে, তখন উনি কেঁদে ফেলেছিলেন। ওঁর বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে কোনও দলিতকে মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে। চন্নী বলেন, উনি গরিব পরিবারের, দলিত। এর আগে কমল নাথ, ভূপেশ বঘেল, অশোক গহলৌতকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার খবর দিয়েছি।’’
কংগ্রেসের নেতাদের দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে রাহুল আগে বলেছিলেন, যারা ভয় পাচ্ছেন, তারা যেতে পারেন। আজ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বিক্ষুব্ধ নেতাদের অন্যতম আনন্দ শর্মা বলেন, যাঁরা দল ছেড়ে যাচ্ছেন, তাঁদের সমস্যা বোঝার জন্য কথা বলা উচিত। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা রাহুলের সুরেই বলেন, যাঁরা যাওয়ার, তাঁরা যেতে পারেন।
রাহুলের বক্তব্য, আরএসএস কখনও কোনও দলিত, মহিলা বা সংখ্যালঘুকে প্রধানমন্ত্রী করবে না। কিন্তু কংগ্রেস যে সবাইকে নিয়ে চলে, সেটা বোঝানো দরকার। তার জন্যই মতাদর্শগত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কংগ্রেসের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুরুতে প্রতিটি রাজ্যের পাঁচ জন অভিজ্ঞ নেতাকে প্রশিক্ষক হিসেবে বেছে নেওয়া হবে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, নভেম্বর মাসে প্রথমে তাঁদের প্রশিক্ষণ হবে ওয়ার্ধায়, মহাত্মা গাঁধীর প্রতিষ্ঠিত সেবাগ্রামে। তার পরে এই প্রশিক্ষকরা রাজ্য, জেলা ও ব্লক স্তরে প্রশিক্ষণের কাজ করবেন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাহুল এই সেবাগ্রামেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন।