কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র।
বিদেশের মাটিতে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সংলাপে সেনা হটানোর জন্য আজ চিনকে কড়া বার্তা দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এর মধ্যেই দেশে মোদী সরকারের চিন-নীতি নিয়ে উত্তাল হল পরিস্থিতি। পূর্ব লাদাখে গালোয়ানের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফের চিনা সেনা জোর করে ঢুকতে চেষ্টা করেছে এই মর্মে সংবাদমাধ্যমে আজ একটি খবর প্রকাশিত হলে তা আলোড়ন ফেলে দেয়।
সকালে তা নিয়ে টুইট করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। বলেন, “বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা নীতিকে ভারত সরকার ঘরোয়া রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে দেশ দুর্বল হচ্ছে। এর আগে ভারত কখনওই এত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পৌঁছয়নি।” সঙ্গে তিনি সংবাদপত্রের চিনা সেনা ঢুকে পড়ার চেষ্টা সংক্রান্ত খবরটি জুড়ে দেন।
পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে জানানো হয়, সংবাদটি অসত্য এবং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। গোটা বিষয়টির কড়া নিন্দা করা হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতিতে। সংসদীয় কমিটিতে এ দিন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে না-দেওয়ার প্রতিবাদে রাহুল ও কংগ্রেসের বাকি সদস্যরা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন।
জুয়েল ওঁরামের সভাপতিত্বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ছিল এ দিন। সেখানে ভারত-চিন সীমান্তের আপৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার দাবি জানান ওই কমিটির অন্যতম সদস্য রাহুল। সূত্রের বক্তব্য, বৈঠকে রাহুল দাবি করেন প্রতিরক্ষাসচিব এসে পূর্ব লাদাখের পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিন। পাশাপাশি আজ প্রকাশিত ভারত-চিন সংঘর্ষ সংক্রান্ত সংবাদটিরও উল্লেখ করেন তিনি। বৈঠকে সেনা ক্যান্টনমেন্ট সংক্রান্ত আলোচনার কথা ছিল আজ। সূত্রের খবর, কমিটির সভাপতি জানিয়ে দেন যে নির্ধারিত আলোচ্যসূচির বাইরে গিয়ে ভারত-চিন নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। প্রতিবাদে কমিটির বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন রাহুল এবং ওই কমিটির বাকি কংগ্রেস সদস্য। এর আগে এই একই দাবিতে ডিসেম্বরে সংসদের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকেও ওয়াক আউট করেছিলেন সনিয়া গাঁধীর পুত্র।
তাজিকিস্তানে আজ সাংঘাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) আফগানিস্তান সংক্রান্ত সম্মেলনে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে পার্শ্ববৈঠকে মিলিত হন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৈঠকের পর বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, যথেষ্ট কড়া ভাবেই চিনা সেনাকে পিছোনোর আর্জি জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। বলেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতি যদি বেশি দিন চলতে থাকে, তা হলে ভারত-চিন সম্পর্কে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ১৯৮৮ সাল থেকে এই সম্পর্কের উন্নতির প্রধান স্তম্ভই হল সীমান্তে শান্তি এবং সংহতি অটুট রাখা।”
আজ ভারতীয় সময় সন্ধ্যায় তাজিকিস্তানে সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন জয়শঙ্কর এবং ওয়াং ই। এর আগে এই দুই নেতা মুখোমুখি হয়েছিলেন গত বছর সেপ্টেম্বরে মস্কোয়। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, জয়শঙ্কর আজকের বৈঠকে চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে পুরোপুরি ভাবে সেনা সরানোর ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন বছরের গোড়ায় প্যাংগং লেক এলাকা থেকে সাফল্যের সঙ্গে সেনা পশ্চাদপসরণের দিকটিকে। সেই উদ্যোগটি বকেয়া জটগুলি ছাড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলেই বৈঠকে উল্লেখ করেন জয়শঙ্কর। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটা আশা করা হচ্ছে, এ বার চিনও আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে। যদিও বিদেশমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে সীমান্তে বেশ কিছু এলাকায় পরিস্থিতি এখনও মীমাংসাহীন হয়ে রয়েছে।”