পাক্কা সাড়ে তিন ঘণ্টা। তার মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই থম মেরে বসেছিলেন শীলা দীক্ষিতের ছবির সামনে। বিদেশে ছিলেন, শীলার শেষকৃত্যে থাকতে পারেননি। কাল দিল্লি ফিরে রাহুল গাঁধী আজ সকালেই চলে যান সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। সেখানে তখন শীলার ছেলে সন্দীপ ও পরিবারের অন্যরা ছিলেন।
কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন, এত দীর্ঘ সময় সেখানে কাটানোর মধ্যে দলের অনেককে বার্তা দিতে চাইলেন রাহুল। কংগ্রেস সভাপতি হয়ে তিনি দিল্লির সভাপতি পদে শীলাকে নিয়োগ করেছিলেন। শীলার আপত্তির কথা মাথায় রেখেই লোকসভা নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে জোট গড়েননি। কিন্তু মৃত্যুর ক’দিন আগেই শীলা ক্ষোভ প্রকাশ করে চিঠি লেখেন সনিয়া গাঁধীকে। সভাপতি পদ ‘ছেড়ে দেওয়া’র পর রাহুল কারও সঙ্গে দেখা করছিলেন না। দলের ব্যাপারে নাকও গলাচ্ছিলেন না। শীলা চিঠিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, অজয় মাকেন, পি সি চাকোরা তাঁকে কাজ করতে দিচ্ছেন না। সনিয়ার হস্তক্ষেপে চেয়েছিলেন তিনি।
কংগ্রেসের অনেক নেতাই বলছেন, ‘‘প্রয়াত নেত্রীর বাড়িতে সাড়ে তিন ঘণ্টা কাটিয়ে রাহুল আসলে বার্তা দিলেন, তিনি কার পক্ষে রয়েছেন। শীলার সঙ্গে গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠতা বহু দশকের। রাহুল-প্রিয়ঙ্কাদের সঙ্গেও পারিবারিক সম্পর্ক। শীলাকে বেগ দেওয়াটা যে রাহুল পছন্দ করেননি, সেটা আজ বুঝিয়ে দিলেন।’’ শীলা-ঘনিষ্ঠ নেতারা সন্দীপ দীক্ষিতকেই দিল্লির পরবর্তী সভাপতি পদে দেখতে চাইছেন। তবে সে সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছে এআইসিসি।
কংগ্রেসের কর্মসমিতির এক সদস্য বলেন, ‘‘সবে রাহুল ফিরেছেন। তাঁকে ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।’’ দলের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতা কে সি বেণুগোপাল গত কালই রাহুলের সঙ্গে কথা বলেছেন। দলের বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তার মধ্যে আজই রাহুল মুম্বই কংগ্রেস কমিটির কার্যকরী সভাপতি পদে একনাথ গায়কোয়াড়কে নিয়োগ করেন। সেই নিয়োগ পত্রে রাহুলের নাম লেখা হয়নি। কিন্তু ‘কংগ্রেস সভাপতি’ পদটি উল্লেখ করা হয়েছে। তা নিয়ে অবশ্য মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের একটি অংশে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের এক নেতার মতে, ‘‘মিলিন্দ দেওরার ইস্তফা স্বীকার না-করে প্রায় আশি বছরের একনাথকে কার্যকরী সভাপতি নিয়োগের কী অর্থ? এর মাধ্যমে কী-ই বা বার্তা দিতে চাইছেন রাহুল গাঁধী?’’ দিল্লির নেতাদের বক্তব্য, এই প্রস্তাব মহারাষ্ট্র থেকেই এসেছে, রাহুল তাতে সম্মতি জানিয়েছেন। বিদেশ থেকে ফেরার পর রাহুল কতটা সক্রিয় হচ্ছেন, সেটিও এখন মাপতে চাইছেন নেতারা।
ক’দিন আগে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকেও সভাপতি পদে দায়িত্ব নেওয়ার আর্জি জানান নেতারা। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা সে প্রস্তাব খারিজ করে বলেন, উত্তরপ্রদেশে বর্তমান ভূমিকাতেই তিনি কাজ করে যাবেন। ক’দিন আগে সোনভদ্রের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ২৬ ঘণ্টার আন্দোলনের পর ফের রাজ্য সফরে যাচ্ছেন। যদিও আজ তিনি গাড়ির যন্ত্রাংশ শিল্পে দশ লক্ষ লোকের কাজ যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে টুইট করেন। যেটি শুধুই উত্তরপ্রদেশ ভিত্তিক নয়।