সংসদে তাঁকে বলতে দেওয়া হয়নি। বাকি তিন দিনেও বলতে পারবেন, তেমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। সে জন্যই নোট-বাতিলের রাজনীতিকে এ বার সংসদ থেকে সড়কে নিয়ে গেলেন রাহুল গাঁধী। আবার বিষয়টি নিয়ে একই দিনে ফের সরকারকে তুলোধোনা করলেন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
গোড়া থেকে ‘স্যুট-বুট’ সরকার, বড়লোকদের প্রধানমন্ত্রী বলে মোদী-বিরোধী রাজনীতিতে সুফল পেয়েছেন রাহুল। সেই আক্রমণের মুখে নিজেকে আরও বেশি করে গরিবের ‘মসিহা’ হিসাবে তুলে ধরতে হয়েছিল মোদীকেও। নোট-বাতিলের পরেও গরিব ও ধনীর বিভেদটি বড় করে দেখিয়ে একই তাস খেলতে চেয়েছিলেন মোদী। আজ সেখানেই আঘাত করলেন রাহুল। নোট-বাতিলের পুরো পদক্ষেপটিই বড়লোকদের স্বার্থে বলে ফের তকমা সেঁটে দিলেন মোদীর গায়ে।
দিল্লির উপকণ্ঠে দাদরির সব্জি মন্ডিতে আজ সকালে হাজির হন রাহুল, যেখানে নগদের কারবারই বেশি। বিজেপির চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্কও এই ব্যবসায়ীরা। সেখানে গিয়েই নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তাতিয়ে তোলেন জনতাকে। বলেন, প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের উদ্দেশ্য একটাই— কর্পোরেট ও বড় শিল্পপতিদের সুবিধা করে দেওয়া। ৫-১০ জন বড় শিল্পপতির যে ৮ লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক উদ্ধার করতে পারছে না, সে টাকাই গরিবদের থেকে তুলে আরও ৬-৮ মাস ব্যাঙ্কে ফাঁসিয়ে রাখতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। সে কারণেই এখন ব্যাঙ্ক থেকে টাকা না-দিয়ে ‘ক্যাশলেস’ সমাজ গড়ার কথা বলছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, প্রতি ‘ক্যাশলেস’ লেনদেনের ৫ শতাংশ চলে যাবে বড় শিল্পপতির পকেটে।
সংসদে মোদীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে এই কথাগুলিই বলতে চেয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু দু’পক্ষের বাদানুবাদে তা আর হয়ে ওঠেনি। সংসদ থেকে জনপথে নেমে রাহুল এখন দলের নেতাদের দিয়ে মোদীরবিরুদ্ধে কার্পেট বম্বিং করতে চাইছেন। সেই সূত্র ধরে রাহুল যখন দিল্লির আশপাশে বিজেপির বৈশ্য ভোটব্যাঙ্ক অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামে ঘুরছেন, সেই সময় মহারাষ্ট্রের নাগপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে আর এক দফা আক্রমণ শানিয়েছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ইংরেজি আদব কায়দায় অভ্যস্ত চিদম্বরম মোদীকে বিঁধতে আশ্রয় নেন হিন্দি তর্জমারও। বলেন, ‘‘খোদা পাহাড়, নিকলা চুহা। যদি সব টাকাই ফেরত এসে যায়, তা সেটা আর নোটবন্দি নয়, হল নোটবদলি।’’
নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘সব থেকে বড়’ দুর্নীতি অ্যাখ্যা দিয়ে চিদম্বরমের বক্তব্য— ধনীরা এতে খুশি, গরিবরা সব থেকে বেশি আক্রান্ত। ৪৫ কোটি মানুষের মেরুদণ্ডকে বেঁকিয়ে দিয়েছে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত। মানুষ ক্ষমা করবে না। রোজ ১১ কোটি মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, তবু পর্যাপ্ত টাকা পাচ্ছেন না। গোটা পরিকল্পনা ব্যর্থ বলে দাবি করে চিদম্বরম বলেন, ‘‘ডিম ফাটিয়ে ওমলেট তৈরি হয়ে গেলে সেটিকে আবার ডিমে ফেরানো যায় না। এখন ঠিক সেই অবস্থাই তৈরি হয়েছে।’’
কংগ্রেসের এই আক্রমণের মুখে আজ অর্থনীতিবিদ জগদীশ ভগবতীকে সামনে আনে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়। ভগবতী এ’টিকে ‘সাহসী পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। বড় আর্থিক সংস্কারের ফলে ভবিষ্যতে সুফল মিলবে— এমন সম্ভাবনার কথাও বলেন। আর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কংগ্রেস নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘দশ বছরে যে কংগ্রেস কালো টাকা রুখতে কোনও ব্যবস্থা না-নিয়ে একের পর এক দুর্নীতি করে গিয়েছে, আজ তাদের অস্বস্তি হওয়া স্বাভাবিক।’’ তাঁর দাবি, দেশ কম নগদের দিকে গেলে কর সংগ্রহ বাড়বে। অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে ব্যাঙ্কগুলি। ঘুষ, জাল, সন্ত্রাসের টাকাও কমবে।