কেরলে গিয়ে বঙ্গের বাম জোট প্রসঙ্গ এড়ালেন রাহুল

আসন্ন ভোটে বাংলার কংগ্রেস নেতারা যখন বাম-সঙ্গের দাবি করছেন, তখন কেরলে গিয়ে যে পাল্টা চাপের মুখে পড়তে হবে তা প্রত্যাশিতই ছিল। বুধবার হলও তাই। কিন্তু সেই দাবির মুখে পড়েও বঙ্গে বামেদের হাত না ধরার ব্যাপারে দলের কেরল-নেতাদের আজ কোনও প্রতিশ্রুতিই দিলেন না রাহুল গাঁধী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২২:০৯
Share:

নিজস্ব চিত্র

আসন্ন ভোটে বাংলার কংগ্রেস নেতারা যখন বাম-সঙ্গের দাবি করছেন, তখন কেরলে গিয়ে যে পাল্টা চাপের মুখে পড়তে হবে তা প্রত্যাশিতই ছিল। বুধবার হলও তাই। কিন্তু সেই দাবির মুখে পড়েও বঙ্গে বামেদের হাত না ধরার ব্যাপারে দলের কেরল-নেতাদের আজ কোনও প্রতিশ্রুতিই দিলেন না রাহুল গাঁধী। এমনকী বামেদের সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক মন্তব্যও আজ করলেন না। বরং এও বলা যেতে পারে এ যাত্রায় কেরল সফরে গিয়ে উল্টে বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট সম্ভাবনার আলোচনায় আরও হাওয়া দিলেন কংগ্রেসের সহ সভাপতি। বিপরীতে দৃশ্যতই কিছুটা হতাশ করলেন অ্যান্টনি-রমেশ চেন্নিথালাদের!

Advertisement

এবারের কেরল সফরে এ দিন ছিল রাহুলের দ্বিতীয় ও শেষ দিন। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কেরলেও ভোট আসন্ন। সেখানে শাসক কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বামেরাই প্রধান প্রতিপক্ষ। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গতকাল তিরুবনন্তপুরমে কংগ্রেসের জনসভায় বামেদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণে একেবারেই নরম ছিলেন রাহুল। তাঁর সেই কৌশলী অবস্থান দেখে যেমন বাংলায় কংগ্রেস নেতারা আশায় বুক বাঁধেন, তেমনই তলে তলে অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেন কেরল কংগ্রেসের নেতারা। দলের কেরল-নেতাদের মনে এ প্রশ্নও ওঠে যে, তবে কি বাংলায় সি পি এমের হাত ধরার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছেন রাহুল? তার পর রাত পোহাতেই আজ তিরুঅনন্তপুরমে কেরলের প্রদেশ কংগ্রেসের এক্সিকিউটিভ কমিটির নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন রাহুল গাঁধী।

সূত্রের খবর,বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোটের পথ আগলে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আগাম কৌশল নিয়ে রেখেছিলেন সুধীরণ-বেনুগোপালরা। এ ব্যাপারে রাহুলের সামনে তাঁরা প্রায় সমস্বরে আজ দাবি জানান। এমনিতে কেরল কংগ্রেসের পারস্পরিক রেষারেষির অন্ত নেই। কিন্তু বামেদের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে ইদানিং বাংলা কংগ্রেসে যেমন বিরল ঐক্য তৈরি হয়েছে, তেমনই প্রস্তাবিত সেই জোট আলোচনার বিরুদ্ধে আজ তেমনই বিরল ঐক্য দেখান দলের কেরলের নেতারা।

Advertisement

বৈঠকের শুরুতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভি এম সুধীরণ রাহুলকে বলেন, বাংলায় কংগ্রেস যদি বামেদের সঙ্গে আঁতাতের কথা বিবেচনা করে তাহলে ভুল করছে। কারণ, বামেরা বিশেষ করে সি পি এম একেবারেই নির্ভরযোগ্য শরিক নয়। অতীতে বার বার তা প্রমাণ হয়েছে। বিহার ভোটেও মহাজোটের থেকে পৃথক লড়ে সি পি এম ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে আখেরে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। একই মত জানিয়ে, প্রদেশ কংগ্রেসের সহ সভাপতি এম এম হাসান রাহুলকে বলেন, সি পি এমের দর্শন এখন একটাই তা হল রাজনৈতিক হিংসা ছড়ানো।

কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই দলের কেরল নেতাদের সার বক্তব্য শোনার পর রাহুল বামেদের প্রসঙ্গ পর্যন্ত উত্থাপন করেননি। বরং ঘুরে ফিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর ‘বিভাজনের রাজনীতির’ সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে বলেন, মোদী এখন ‘ইভেন্ট’ নির্ভর রাজনীতি করছেন। একটা করে ইভেন্ট হচ্ছে, তার উদযাপন হচ্ছে, তার পর ফের নতুন ইভেন্ট আসছে।

রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ তিরুঅনন্তপুরমে ওই বৈঠকের পর রাজ্য স্তরের শীর্ষ সারির নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা করেন রাহুল। কিন্তু সেখানে তিনি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন, বাংলার ব্যাপারে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি নেননি ঠিকই। তবে একটা বিষয় ঠিক যে, সিদ্ধান্ত যাই হোক সাধারণত একটি রাজ্যের রাজনীতির জন্য অন্য রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের আপস করতে বলার ব্যাপারটা তাঁর ধাতে নেই।

রাহুলের এই অবস্থান দেখে স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার কংগ্রেস নেতারা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে। বামেদের সঙ্গে জোট সম্ভাবনা নিয়েও তাঁদের মনে আশা বাড়তে শুরু করেছে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘কেরলের কংগ্রেস নেতারা রাহুল গাঁধীকে কী জানিয়েছেন, আমি জানি না। তবে বাংলায় কংগ্রেস এবং সি পি এমের নীচুতলার কর্মীদের মধ্যে জোটের আবহ যে তৈরি হয়ে গিয়েছে তা তাঁকে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।’’ আবার প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান বলেন,‘‘রাহুল গাঁধী আমাদের সঙ্গে বৈঠকেই বলেছিলেন যে একেকটি রাজ্যের রাজনৈতিক গতিশীলতা একেক রকম। জাতীয় রাজনীতির জন্য বা কোনও একটি রাজ্যের জন্য অন্য একটি রাজ্যকে আপস করতে বলব না। তাছাড়া বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট হলে কেরলে কোনও ফারাক হওয়ার কথা নয়। কারণ, এজন্য অস্বস্তি হলে কেরলে উভয় দলেরই অস্বস্তি হবে। অর্থাৎ এটি জিরো সাম গেম।’’

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কেরল সফরে গিয়ে রাহুল বামেদের ব্যাপারে যে অবস্থান নিয়েছেন সন্দেহ নেই তা পশ্চিমবঙ্গের সি পি এম নেতাদেরও স্বস্তি দিয়েছে। কাল বাদে পরশু পশ্চিমবঙ্গে সি পি এম রাজ্য কমিটির বৈঠক বসার কথা। তার আগে রাহুল সি পি এম তথা বামেদের উদ্দেশে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য করলে জোটের ব্যাপারে যুক্তি সাজাতে তাঁদের অসুবিধা হত। তাছাড়া সেটা আবার প্রকাশ কারাট তথা দলের কেরল নেতাদের কাছে জোট আলোচনা ভেস্তে দেওয়ার জন্য অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারত। সেদিক থেকে রাহুলের অবস্থানে বাংলায় নতুন সমীকরণের ইঙ্গিতই দেখা যাচ্ছে।

ঘটনা হল, রাহুলের কেরল সফরের ওপর যেমন প্রকাশ কারাটদের নজর ছিল, তেমনই নজর রেখেছিল বিজেপি। বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট হওয়াটা বিজেপি-র কাছে কোনও ভাবেই খুশির খবর হতে পারে না। এই অবস্থায় আজ বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিংহ বলেন, ‘‘রাহুল কেরলে গিয়ে বলেছেন, বামেদের মতাদর্শ অচল হয়ে গেছে। তাই যদি হয় তাহলে বাংলায় কেন তাঁরা বামেদের সঙ্গে জোট সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন? কারণ মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে যে কোনও জিনিসই তো বিষাক্ত হয়ে যায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement