ব্যাঙ্কের লাইনে রাহুল গাঁধী। বললেন, স্যুট বুট পরা কাউকে দেখছেন এখানে? শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
উত্তরপ্রদেশের দলিত বাড়িতে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন এক কালে। এ বার নোট নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শরিক হতে নিজেই ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ালেন রাহুল গাঁধী।
শুক্রবার বিকেলে হঠাৎই দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিটের এসবিআই ব্যাঙ্কে পৌঁছে যান কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। হাতে চার হাজার টাকা নিয়ে নতুন নোটে বদল করাতে গিয়েছিলেন তিনি। এটিএমের সামনে বিপুল ভিড় দেখে সাধারণ গ্রাহকদের সাহায্যও করেন। রাহুলের মতো নেতাকে সামনে পেয়ে ব্যাঙ্কের লাইনেই হুড়মুড়িয়ে তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গ্রাহকরা। ছেঁকে ধরে সংবাদমাধ্যমও।
গত কাল থেকে ব্যাঙ্ক খোলার পর থেকেই সর্বত্র দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েছে। আজও তার অন্যথা হয়নি। আজ অনেক জায়গায় এটিএম খুললেও সেখান থেকে টাকা সাত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গিয়েছে। অনেক এটিএম বন্ধও রাখতে হয়েছে। যার ফলে হেনস্থা আরও বেড়েছে। এই দুর্ভোগের মধ্যে রাহুল নিজে ব্যাঙ্কে গিয়ে সংবাদ শিরোনামে আসারই চেষ্টা করলেন বলে মনে করছেন বিরোধীরা। ব্যাঙ্কে দাঁড়িয়েই নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধে রাহুল বলেন, ‘‘কোনও স্যুট-বুট পরা লোক দেখছেন লাইনে? কোনও এক জন কোটিপতিকেও কি দেখা যাচ্ছে? গরিব মানুষের কষ্ট হচ্ছে, তাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে আমি লাইনে দাঁড়িয়েছি।’’ এর আগেও মোদীর সরকারকে বারবারই ‘স্যুট বুট কি সরকার’ বলে খোঁচা দিয়ে এসেছেন রাহুল। এ দিনও তাঁর দাবি, তিনি আসার আগে এটিএমে ভিড় করা সাধারণ মানুষকে ব্যাঙ্কে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছিল না। তাঁকে দেখে সকলকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়।
উল্টো দিকে বিরোধীদের দাবি, গোটাটাই রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা। রাহুল ব্যাঙ্কে গিয়ে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছেন। বিজেপি মুখপাত্র জি ভি এল নরসিংহ রাও যেমন বলেন, ‘‘রাহুল সভা করে ভিড় জোটাতে পারেন না, তাই এখন ভিড় দেখে নিজেই ছুটে যাচ্ছেন।’’ পাশাপাশি, রাহুল যেমন মোদী সরকারকে বড়লোকের সরকার বলে থাকেন, মোদীরাও রাহুলকে শাহজাদা বলে কটাক্ষ করেন। এ দিন সেই লাইনটি বজায় রেখেই রাহুলের অভিযোগের উত্তর দিয়েছে বিজেপি। প্রকাশ জাভড়েকরের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘যাঁরা চিরকাল বংশগর্বের সুযোগ নিয়ে এসেছেন, তাঁরা তো কোনও দিন লাইনে দাঁড়াননি আগে। রাহুল যদি নিজের দলে লাইন দিতেন, প্রথম স্থানাধিকারীকে যদি দলের দায়িত্ব দেওয়া হতো, দলটার ভাল হতো।’’ মোদীর নোট সংস্কার যে ধনী-গরিবকে একসঙ্গে লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে, সেটাই সরকারের সাফল্য বলে দাবি করছে বিজেপি। দলের সভাপতি অমিত শাহ এ দিন কংগ্রেস, সপা, বসপা এবং আপ সকলেই বিরোধিতার জন্য সমালোচনা করেন।
কংগ্রেসের বক্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই এর বিপরীত। তাদের মতে, সাধারণ মানুষ যখনই বিপদে পড়েছেন, রাহুল ছুটে গিয়েছেন। মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে, তাদের পাশে দাঁড়াতেই গিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের কথা ঘোষণার পরেই রাহুল তার সমালোচনা করে বলেছিলেন, এতে কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী ও গৃহিণীদের ভোগান্তি হবে। সংসদের অধিবেশনেও এই বিষয়ে সরব হবে দল। সুতরাং এ দিন তাঁর ব্যাঙ্কে ছুটে যাওয়াটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই দাবি কংগ্রেসের।