রামমন্দিরের গর্ভগৃহে সষ্টাঙ্গে প্রণাম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সোমবার অযোধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
“আজ শুধু এক ব্যক্তিই মন্দিরে যেতে পারবেন! তিনিই ঠিক করে দেবেন কে কোন মন্দিরে ঢোকার অধিকারী।”
অসমের নগাঁওতে বটদ্রবা সত্রে ঢোকার মুখে পুলিশের বাধা পেয়ে নরেন্দ্র মোদীকে নাম না করে এ ভাবেই আক্রমণ করলেন রাহুল গান্ধী।
এবং রাহুলের ক্ষোভ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার উক্তি, ‘‘রামময় দিনে রাবণের কথা মুখে আনা উচিত নয়।’’
রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিনে এ ভাবেই মন্দির-রাজনীতিতে তপ্ত হল অসম। রামমন্দিরে যে সময়ে প্রধানমন্ত্রী প্রাণপ্রতিষ্ঠার পুজো দেবেন, সেই সময়ে রাহুল কোথায় থাকবেন সে দিকে চোখ ছিল দেশের।
সোমবার সকালে বটদ্রবায় শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জন্মস্থানে পুজো দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও রবিবারই মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছিলেন বিকেল ৩টের আগে রাহুল গান্ধীকে মন্দিরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে না। তার পরেও সকালে রাহুল সদলবলে মন্দিরের দিকে রওনা হন। কংগ্রেসের দাবি ছিল, ভক্তকে ভগবানের কাছে যেতে বাধা দিতে পারে না সরকার। কিন্তু রাস্তা আটকায় পুলিশ। রাহুল কর্তব্যরত অফিসারের কাছে জানতে চান, “আমি কী ভুল করেছি যে আমায় যেতে দেওয়া হবে না? আমরা কোনও অশান্তি চাই না। আমাদের মন্দিরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। শুধুই প্রার্থনা করতে যাচ্ছি। কোনও জোর করছি না।” কিন্তু অনড় পুলিশ কোনও কারণ দেখায়নি।
রাহুল, জয়রাম রমেশ প্রতিবাদে হয়বরগাঁওতে পথে বসে পড়েন। সেখানেই তাঁদের ঘিরে ধরে মহিলারা নামগান করতে থাকেন। পরে কলিয়াবরের সাংসদ গৌরব গগৈ ও বটদ্রবার বিধায়ক শিবামণি বরা বটদ্রবায় গিয়ে পুজো দেন। গৌরব সেখান থেকে রাহুলের প্রতিবাদস্থলে এসে বলেন, “বটদ্রবার সব পুজারী বলেছেন, তাঁদের আশীর্বাদ রাহুলের সঙ্গে আছে। আমরা বলি রাহুল নিজে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার বাধা দিয়েছে।”
বটদ্রবা মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে যে চিঠি ডিজিপি সমাজমাধ্যমে তুলে ধরেন সেখানে বলা ছিল সকাল থেকে মন্দিরে প্রচুর ভক্তের ভিড় থাকবে। বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠনের অনুষ্ঠান চলবে। তাই রাহুল গান্ধীকে বিকেলের আগে ঢুকতে যাওয়া যাবে না। গৌরব বলেন, “আমরা সকাল ১০টা পর্যন্ত দেখলাম ওখানে কোনও ভিড়ই ছিল না। বাইরেও কোনও ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা ধর্মীয় কার্যসূচী ছিল না। বরদোয়ায় শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জন্মস্থল নিয়ে অসম সরকারের এই মিথ্যের রাজনীতি এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে।” গৌরব আরও জানান, বেরোনোর সময় মহিলা পুজারী বরদোয়ার তরফে রাহুলকে ফুলাম গামোসা দেন। পুরোহিতেরা জানান, পুজোর পরে প্রসাদ রাহুলকে পৌঁছে দেবেন। মন্দিরের তরফে গামোসা পেয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, “শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের আদর্শকে শ্রদ্ধা জানাতেই অসমে এসে তাঁর জন্মস্থানে পুজো দেব ভেবেছিলাম।’’
বটদ্রবায় ঢুকতে না পেরে রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা মারিগাঁও জেলার দিকে রওনা হয়। সেখানেও যাত্রার পোস্টার ছিঁড়ে, রাহুলের ছবিতে কালি মাখানো হয়েছিল। রাহুল পথে অন্য কোনও উপাসনাস্থলেও যেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছিল। তাই ডিজিপি ঘোষণা করে দেন, রাহুল যেহেতু জ়েড প্লাস নিরাপত্তা পান তাই আয়োজকদের বলা হচ্ছে, পূর্ব নির্ধারিত কার্যসূচিতে যেন হঠাৎ বদল না আনা হয়। রাহুল মরিগাঁও, জোড়াবাট হয়ে মেঘালয়ের নংপোয় গিয়ে জনসভা করেন।
রাহুলকে মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আজ শুধুই রামের দিন। ৫০০ বছরের দাসত্ব থেকে আজ মুক্তি হল। শুরু হল রাম রাজ্য। তাই রামময় দিনে কারও রাবণের কথা উল্লেখ করা উচিত নয়। রাবণের কথা কাল-পরশু ভাবা যাবে।”
কংগ্রেস বলে, অসমে এমনই রাম রাজ্য চলছে যেখানে সংবিধানের শাসন, গণতন্ত্রের আদর্শ সবই ধ্বংস করা হচ্ছে। রাম বা শঙ্করদেব- কেউই এমন স্বৈরাচারী রাজ্যশাসনের নমুনায় খুশি হতেন না।