‘ভয় পেয়েছে কেন্দ্র’
Rahul Gandhi

ঘৃণার রাজনীতি রুখলেই শহুরে নকশাল: রাহুল

এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব জানিয়েছিলেন, ভীমা-কোরেগাঁও কাণ্ডে অভিযুক্ত দলিত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১৭
Share:

ছবি: পিটিআই।

মহারাষ্ট্র সরকারকে অন্ধকারে রেখে ভীমা-কোরেগাঁও কাণ্ডের তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে গত কালই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ। আজ একই বিষয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে বিঁধলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এবং এনসিপি-র শরদ পওয়ার। রাহুল চান, বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ করুক মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তের চব্বিশ ঘণ্টা পরেও মুখে কুলুপ মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের। শিবসেনার দলীয় মুখপত্রেও আজ এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। বরং দেশ থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের অবিলম্বে বিদায় করার দাবি তোলা হয়েছে! য়া কি না বিজেপিরই ঘোষিত কর্মসূচি।

Advertisement

এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব জানিয়েছিলেন, ভীমা-কোরেগাঁও কাণ্ডে অভিযুক্ত দলিত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। যে কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল এই সংক্রান্ত রিপোর্টও চেয়ে পাঠান। কিন্তু এরই মধ্যে তদন্তভার আচমকা এনআইএ-র হাতে তুলে দিল কেন্দ্র। এর প্রতিক্রিয়ায় রাহুল আজ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘যিনিই মোশ (এমওএসএইচ) জুটির ঘৃণার রাজনীতির বিপক্ষে দাঁড়াবেন, তিনিই শহুরে নকশাল। ভীমা-কোরেগাঁও প্রতিবাদের প্রতীক। এনআইএ-র মাধ্যমে চাপ দিয়ে সরকার তা মুছে ফেলতে পারবে না।’’ আর মুম্বইয়ে শরদের কটাক্ষ, ‘‘নিজেদের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়েই এই পথে হেঁটেছে কেন্দ্র।’’

দলীয় সূত্রের খবর, রাহুল চান, মহারাষ্ট্র সরকার এই একতরফা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করুক। উদ্ধবের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত করার ভার দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপালকে। উদ্ধব সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল গত কাল কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন বটে, তিনি এনসিপি-র নেতা।

Advertisement

মোশ কী?

গত শতকে সাতের দশকের রক/পাঙ্ক গানের সঙ্গে চলত উদ্দাম নাচ, যা প্রায় ধাক্কাধাক্কি-গুঁতোগুতিতে পরিণত হত। ইংরেজিতে সেই নাচকে বলা হয়ে থাকে মোশ (MOSH)। রাহুল তাঁর টুইটে সেই শব্দটিই ব্যবহার করেছেন মোদী ও শাহের পদবি জুড়ে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্ধব ও তাঁর দলের নীরবতায় জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি সাভারকর-মন্তব্যের পরে ফের এক প্রস্ত দড়ি টানাটানি শুরু হতে চলেছে কংগ্রেস-শিবসেনার মধ্যে?

ঠান্ডা লড়াই চলছে শরদ-বিজেপির মধ্যেও। শোনা গিয়েছিল, দিল্লিতে শরদের বাসভবনের নিরাপত্তা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ যা অস্বীকার করেছে দিল্লি পুলিশ। কিন্তু ভীমা-কোরেগাঁও তদন্তের হাতবদলের বিষয়টি সামনে আসার পরে এনসিপি-র এখন অভিযোগ, শরদ ওই ঘটনায় মহারাষ্ট্র পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী শাখার সাহায্য নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার পরেই তড়িঘড়ি এনআইএ-র হাতে তদন্তের ভার তুলে দেওয়া হল। এতে কেন্দ্রের ভয় পাওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: ‘খুব কষ্ট হচ্ছে’, বন্দিদশায় ওমর আবদুল্লার ছবি দেখে প্রতিক্রিয়া মমতার

প্রত্যাশিত ভাবে বিজেপির দেবেন্দ্র ফডণবীস কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পক্ষেই সওয়াল করছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বিরোধী নেতা দেবেন্দ্রর দাবি, তাঁর জমানায় তদন্ত করে পুলিশ ওই সমস্ত শহুরে নকশালদের খুঁজে বার করেছিল। কিন্তু বর্তমান আমলে কাজে বাধা পাচ্ছে পুলিশ। তার উপরে এই কাণ্ডের ঘটনার শিকড় মহারাষ্ট্রে হলেও, অভিযুক্তরা ছড়িয়ে বিভিন্ন রাজ্যে। তাই এর তদন্তভার এনআইএ-কে দেওয়াটা ঠিক সিদ্ধান্ত।

মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁওয়ে দলিতদের বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে ব্যাপক অশান্তি ছড়িয়েছিল ২০১৮ সালে। মরাঠা পেশোয়াদের বিরুদ্ধে জয়কে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করতে সারা রাজ্য থেকে জড়ো হন বহু দলিত। সেখানে উচ্চবর্ণের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে তাঁদের। তার পরে দলিতদের ডাকা বন্‌ধে তিন দিন অচল ছিল মহারাষ্ট্র। সেই ঘটনার সঙ্গে শহুরে নকশালদের যোগ থাকার অভিযোগ ওঠার পরে দেশ জুড়ে অভিযানে নামে পুলিশ। অভিযোগ ওঠে, ওই নকশালদের লক্ষ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীকে হত্যা করা। অভিযান হয় ফরিদাবাদ, গোয়া, রাঁচী, ঠাণে, মুম্বই, হায়দরাবাদ প্রভৃতি শহরে। গ্রেফতার হন সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ, কবি তথা সমাজকর্মী ভারভারা রাও। জেলে যেতে হয় গৌতম নওলাখা, অরুণ ফেরেরা, ভার্নন গঞ্জালভেসদের। প্রশ্ন উঠছে,

অভিযুক্তরা বিভিন্ন রাজ্যের হলে দেবেন্দ্রর আমলেই কেন তদন্তভার এনআইএ-র হাতে দেওয়া হয়নি? যাদের ঘিরে এত বিতর্ক, সেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বা এনআইএ— কোনও তরফেই কিছু বলা হয়নি বিষয়টি নিয়ে।

অমিত শাহের বিরুদ্ধে সোহরাবুদ্দিন শেখের ভুয়ো এনকাউন্টারের মামলার বিচারের দায়িত্বে ছিলেন বিচারক বি এইচ লোয়া। তাঁর রহস্যমৃত্যুর তদন্ত-ফাইলও নতুন করে খোলা হতে পারে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে উদ্ধব সরকার। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এ বার কি তবে সেই লোয়া-মামলাও আচমকা হাতে নেবে কেন্দ্র?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement