রাহুল গাঁধী। ছবি পিটিআই।
‘ঘরে’ অশান্তির আঁচ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই কি ‘বাইরের’ দিকে আরও বেশি করে তোপ দাগছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গাঁধী? না কি অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ প্রশমিত করে দলকে উজ্জীবিত করার কৌশল? আজ চিন নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে রাহুলের টুইটের পর রাজধানীর রাজনৈতিক শিবিরেই উঠছে এই প্রশ্ন।
বিহারের ভোটে ভরাডুবির পরে কপিল সিব্বল থেকে গুলাম নবি আজাদের মতো প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা নাম না করে সনিয়া-রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সনিয়া গাঁধীকে চিঠি দিয়ে অথবা প্রকাশ্যে মুখ খুলে তাঁরা দলের ‘সংস্কারের’ দাবি তুলছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের ‘পরিশ্রমের অভাবের’ দিকেই আঙুল তুলছেন তাঁরা।
কংগ্রেসের নেতাদের ক্ষোভ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও বক্তব্য শোনা যায়নি রাহুলের কাছ থেকে। কিন্তু তিনি চিন প্রসঙ্গে মোদী সরকারকে তোপ দেগেছেন আজ। টুইট করে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসংযোগ-সর্বস্ব সংবাদমাধ্যমের পক্ষে চিনের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। যাঁরা সরকার চালাচ্ছেন, তাঁরা এই সামান্য বিষয়টি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকছেন।’
এই টুইটের পর কংগ্রেসের মুখপাত্র মোদী সরকারের চিন-নীতি নিয়ে দীর্ঘ বিবৃতির খসড়া তৈরি করে রাহুলের অবস্থানকেই প্রচারের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘চিনের পদক্ষেপ নিয়ে ভারত সরকারের এই দীর্ঘ নীরবতা অত্যন্ত মর্মান্তিক। এটা কেন আমরা স্বীকার করে নিতে পারছি না যে সীমান্তে একাধিক সঙ্কটে সরকার ফেঁসে রয়েছে? নেপালের সঙ্গে সমস্যা চলছে, পাকিস্তান সীমান্ত অগ্নিগর্ভ। পাশাপাশি লাদাখে চিন জমি দখল করে বসে রয়েছে। চিনের সঙ্গে আলোচনায় দু’কদম এগিয়ে ভারতকে পাঁচ কদম পিছোতে হচ্ছে।‘ ওই বিবৃতিতে আরও বলা হচ্ছে, ‘ভুটানের ভিতর চিন গ্রাম বানিয়েছে যা ডোকলামের থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে। শিলিগুড়ি করি়ডরের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা হচ্ছে। এই করিডর হাতের বাইরে চলে গেলে ভারত থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।’
চিন প্রশ্নে সাম্প্রতিক অতীতে ধারাবাহিক ভাবে রাহুল গাঁধীকে দেখা গিয়েছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে স্বর চড়াতে। এর আগেও তিনি দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বলেছিলেন লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে সরকারকে জবাব দিতেই হবে। তাঁর যুক্তি ছিল, ২০১৭-তেও চিনা অনুপ্রবেশের পরে কংগ্রেস সংসদে আলোচনার দাবি জানায়। কিন্তু মোদী সরকার তা খারিজ করে দিয়েছিল। অথচ ১৯৬২-তে ভারত-চিন যুদ্ধের পরেও সংসদে আলোচনা হয়েছে।
কংগ্রেসের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতারা অগস্ট মাসে সনিয়াকে চিঠি লেখার পরে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বসেছিল। সেখানে গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মার মতো ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতারা সনিয়া-রাহুলের মুখোমুখি বৈঠকে বসেন। কংগ্রেস সূত্রের দাবি, বৈঠকে সে সময় সকলেই রাহুলের সঙ্গে একমত হয়েছেন যে, কোভিড পরিস্থিতি, অর্থনীতির সঙ্কট ও লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে সরব হতে হবে। বিক্ষুব্ধ নেতারাও কংগ্রেসের মারমুখী কৌশলে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বলেই কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের দাবি। রাহুলের ঘনিষ্ঠ শিবিরের বক্তব্য, চিন নিয়ে তিনি যে অবস্থান নিয়ে চলছেন তাতে দলের সব নেতারই সিলমোহর রয়েছে। এর সঙ্গে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ নিয়ে ক্ষোভের সম্পর্ক নেই।