সংসদের বাইরে। মঙ্গলবার পিটিআইয়ের ছবি।
আক্রমণের বিষয় রয়েছে আরও অনেক। কিন্তু তরুণ হাতে কাজ জোগাতে না পারাকেই এখন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সব চেয়ে বড় অস্ত্র করছেন রাহুল গাঁধী।
ক্ষমতায় এলে ১ কোটি মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা করবেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। পরে ফি-বছরে ২ কোটি কর্মসংস্থানের কথাও বলেন। মোদী-জমানার আড়াই বছর পেরিয়ে দেখা যাচ্ছে, রোজগার বাড়ার বদলে ধীরে ধীরে কমছে। তার উপর নোট বাতিলে যে কর্মসংস্থান আরও বড় ধাক্কা খেয়েছে, খোদ মোদী সরকারই তা মানছে। তা সত্ত্বেও মোদী সরকার আজ যে ভাবে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে একটি ‘গরিব-দরদি’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা চালাল, পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে সেটাকে ফানুসের মতো চুপসে দিতে চাইলেন রাহুল। সংসদের যৌথ সভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার পরেই সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘ভারতে সব থেকে বড় প্রশ্ন, রোজগার তৈরি করা, যুবকদের হাতে কাজ দেওয়া। এই ক্ষেত্রেই সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ, এটাই আসল বিষয়।’’
পরে দলের নেতাদের রাহুল নির্দেশ দেন, সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম অর্ধে মাত্র দশ দিন সময় রয়েছে। তার মধ্যেই নোট বাতিলের ধাক্কা ও যুবকদের রোজগার হারানোর বিষয়টি নিয়ে চেপে ধরতে হবে সরকারকে। এ ব্যাপারে বাকি বিরোধী দলগুলিকেও একজোট করতে হবে। সেই মোতাবেক লোকসভায় দলের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাজ্যসভার গুলাম নবি আজাদ জানিয়ে দিয়েছেন, বাজেট পেশের পরেই সংসদের দুই সভায় এই বিষয়টি নিয়ে সরব হবে কংগ্রেস।
বাজেট পেশের আগের দিন অরুণ জেটলি আজ যে আর্থিক সমীক্ষা পেশ করেছেন, তাতে কবুল করে নেওয়া হয়েছে নোট বাতিলের পর কাজ হারিয়েছেন অনেকে। তবে বাজেটে চামড়া, বস্ত্র শিল্পের মতো ক্ষেত্রগুলিতে রোজগার বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। কিন্তু মোদীর আমলে কত রোজগার তৈরি হয়েছে, কিংবা নোট বাতিলের ধাক্কায় কত জন কাজ হারিয়েছেন, সেই খতিয়ান এখনও পেশ করেনি সরকার। রাহুল অবশ্য বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষার ভিত্তিতে এই কাজটি সেরে ফেলেছেন। এবং যার ভিত্তিতেই বাজেটের আগে বেনজির ভাবে দেশের আর্থিক ছবিটি তুলে ধরে আক্রমণাত্মক হওয়ার কৌশল নিয়েছেন তিনি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, গত কাল রাহুলের নির্দেশেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দেশের আর্থিক পরিস্থিতির হাল-হকিকত তুলে ধরেন। চিদম্বরম হিসেব দেন, ২০১০ সালে বার্ষিক নতুন কর্মসংস্থান হতো ১১ লক্ষ। ২০১৬-তে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৫ লক্ষ। মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজে মোদী সরকার নাকি ভাতা দ্বিগুণ করেছে, অথচ এই প্রকল্পে বরাদ্দ কিন্তু দ্বিগুণ হয়নি। ফলে এটা স্পষ্ট, আরও কম লোককে কাজ দেওয়া হয়েছে।’’ গুলাম নবির মতে, মোদী এক সময় ভূরি ভূরি প্রতিশ্রতি দিলেও বছরে ১-২ লক্ষের বেশি রোজগার তৈরি করতে পারছেন না।
রাহুল যেখানে আঘাত করতে চাইছেন, সেটি যে সরকারের দুর্বল জায়গা, তা অস্বীকার করছেন না কেন্দ্রের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণিয়নও। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘নতুন রোজগার তৈরি অবশ্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জনসংখ্যার একটি বড় অংশ যুবক। বৃদ্ধির হার লাগাতার ৭-৮ শতাংশে ধরে রাখা গেলে আপনা থেকেই রোজগার তৈরি হবে। তার জন্য নতুন লগ্নি আনতে হবে। বস্ত্র, চামড়া, ছোট ও মাঝারি শিল্পে যেখানে রোজগারের সুযোগ, সেখানেই জোর দিতে হবে।’’
রোজগার দেওয়ার প্রশ্নে সরকার পিছিয়ে পড়ছে জেনেও মোদী রাজনৈতিক ভাবেই এর মোকাবিলা করার দাওয়াই দিয়েছেন। এ দিন বিজেপির এবং এনডিএ-র শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে বৈঠক করেন মোদী। তাঁর বক্তব্য ছিল, সংসদের ভিতরে-বাইরে জোটের সকলে যেন এক সুরে কথা বলেন। সংসদে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় সরকারের ইতিবাচক দিকগুলির কথা বলা হয়েছে। মানুষের কাছে সেই কথাগুলি পৌঁছে দিতে হবে। বিরোধীদের কাছে বলার মতো কোনও প্রসঙ্গই নেই বলেও এনডিএ-র বৈঠকে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকের পর অনন্ত কুমার বলেন, ‘‘মোদী সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই অনেক রোজগার তৈরি হয়েছে। রাজনীতি না করে প্রয়োজন সে দিকে নজর দেওয়ার।’’ হিসেব যে উল্টো কথা বলছে, আগামী ক’দিন সংসদের ভিতরে-বাইরে সেটাই তুলে ধরবে রাহুলের দল।