রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
বাজেট অধিবেশনের শুরুতেই সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে রাহুল গান্ধী এ বার আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে চিনা সংস্থার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।
আজ কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত একটি চিনের সংস্থা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো তৈরির কাজ করছে। এই সংস্থার নাম পিএমসি প্রজেক্টস (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেড। সংস্থাটি এ দেশে বন্দর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ পরিবহণ লাইন, রেলের লাইন, কন্টেনার টার্মিনালের মতো পরিকাঠামো তৈরির সঙ্গে যুক্ত। এই সংস্থাটি আদানি গোষ্ঠীর প্রধান সংস্থা আদানি এন্টারপ্রাইজ়েস-এর দফতর থেকে কাজ করে। কিন্তু সংস্থার মালিক চিনের নাগরিক চাং চিয়েন-টিং। তাঁর বাবা চাং চুং-লিং একাধিক আদানি গোষ্ঠীর সংস্থার ডিরেক্টর। বহু বছর ধরে গৌতম আদানির দাদা বিনোদ আদানির ব্যবসার শরিক তিনি।
রাহুল টুইট করে প্রশ্ন তুলেছেন, পিএমসি প্রজেক্টস কি আসলে ‘প্রধানমন্ত্রী চাইনিজ়’ প্রজেক্টস? তাঁর প্রশ্ন, কেন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো চিনের সংস্থা তৈরি করছে ও নিয়ন্ত্রণ করছে? কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অবশ্য রাহুলের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, রাহুল বারবার একই অভিযোগ তোলার ‘অপরাধ’ করে চলেছেন।
কংগ্রেস আজ সরাসরি সাংবাদিক সম্মেলন করেই অভিযোগ তুলেছে, পিএমসি প্রজেক্টস গুজরাতের মুন্দ্রা, দাহেজ, হাজিরা, কান্ডলা বন্দর, গোয়ার মার্মাগাঁও মন্দর, অন্ধ্রের বিশাখাপত্তনম বন্দর, মহারাষ্ট্রের বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থা, গুজরাতের রেল ও সড়ক পরিকাঠামো প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের যুক্তি, জেপিসি তদন্ত হলে এই সমস্ত নথি বিরোধীদের কাছে চলে আসত। সেই কারণেই মোদী সরকার জেপিসি-তে রাজি হয়নি।
উল্টো দিকে অর্থমন্ত্রী সীতারামনের যুক্তি, রাহুল যদি মনে করেন, আদানিদের সমস্ত প্রকল্প পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা ভুল। ২০১৯-এর আগেও রাহুল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছিলেন। তা থেকে শিক্ষা নেননি। সীতারামনের প্রশ্ন, কেরলে আদানির বন্দরের বরাত পাওয়া বা রাজস্থানে আদানির সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত নিয়ে রাহুল সরব হন না কেন? কেরলের কংগ্রেস সরকারই দরপত্র ছাড়াই ভিঝিনজাম বন্দরের বরাত থালায় সাজিয়ে আদানিদের দিয়েছিল। রাহুল কেন সেই বরাত বাতিলের দাবি তুলছেন না? কংগ্রেসের যুক্তি, কেরলে আদানিরাই একমাত্র দরপত্র দিয়েছিল। অর্থমন্ত্রী মিথ্যে রটাচ্ছেন।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী আসলে কেন চিন নিয়ে নীরব, তা প্রতিদিন স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ আদানির সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। যে চিন দেশের জওয়ানদের উপরে হামলা করে, ভারতের জমি দখল করে বসে রয়েছে, সেই চিনের নাগরিকের সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় আদানির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা একসঙ্গে ব্যবসা করেন। রমেশের প্রশ্ন, গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রকল্প চিনের সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া কি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা নয়?