কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী । ফাইল ছবি
গালে বেশ কয়েকদিনের না-কামানো কাঁচা-পাকা দাড়ি। মুখে সেই পরিচিত হাসি।
পাঁচ দিনে ৫০ ঘণ্টার বেশি সময় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হতে আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এআইসিসি-র সদর দফতরে হাজির। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়কে ‘ছোট ব্যাপার’ ও ‘গুরুত্বপূর্ণ নয়’ বলেই উড়িয়ে দিলেন তিনি। কংগ্রেস নেতাদের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামায় ডাক দিয়ে ওয়েনাডের এই কংগ্রেস সাংসদ বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে দেশের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল রোজগার, কর্মসংস্থান।’’
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় গান্ধী পরিবারকে সমনের প্রতিবাদে গত দেড় সপ্তাহ ধরে সক্রিয় হয়ে ওঠা কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের আরও চাঙ্গা করতে আজ রাহুল বলেছেন, ‘‘ইডি-র যে সব অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, তাঁরাও বুঝে গিয়েছেন, কংগ্রেসের নেতাকে ভয় দেখানো যাবে না, দমন করা যাবে না, যাবে না ধমকানোও।’’ দলের সমস্ত নেতা-কর্মীকে নিজের পাশে টেনে রাহুল জানিয়েছেন, পাঁচ দিন ধরে তাঁকে ১২ ফুট বাই ১২ ফুটের একটি কামরায় তিন জন অফিসার প্রশ্ন করেছেন। প্রতিদিন ১১-১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি চেয়ার থেকে নড়েননি। ক্লান্ত হননি। রাহুলের দাবি, তাঁর এই দৃঢ় মানসিকতার রহস্য জানতে চেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের বলেছি, বিপাসনা করি। অভ্যাস আছে। কিন্তু আসল কারণ হল, ওই কামরায় রাহুল গান্ধী একলা ছিল না। সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেসের সব নেতা, কর্মকর্তা। শুধু কংগ্রেস নয়, এই সরকারের বিরুদ্ধে যে নির্ভয়ে লড়ে, সে-ও বসে ছিলেন। এক জনকে ক্লান্ত করা যায়। কংগ্রেসের কোটি কোটি কর্মকর্তাকে ক্লান্ত করা যায় না।’’
রাহুলকে ইডি-র তলবের প্রতিবাদে গোটা কংগ্রেস যে ভাবে রাস্তায় নেমেছিল, এ বার সেই রকম উৎসাহেই দলকে বেকারত্বের সমস্যা নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামাতে চাইছেন তিনি। রাহুলকে ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের সময় কংগ্রেস নেতারা সত্যাগ্রহের ডাক দিয়েছিলেন। আজ কংগ্রেস জানিয়েছে, ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আগামী ২৭ জুন সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের সাংসদ, বিধায়ক ও দলের নেতারা সত্যাগ্রহ করবেন। গত দেড় সপ্তাহে কংগ্রেস নেতাদের অতিসক্রিয়তা দেখে রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছিল, কংগ্রেস যে ভাবে ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন, সে ভাবে আমজনতার সমস্যা নিয়ে রাস্তায় নামে না কেন? রাহুল আজ বলেছেন, “ইডি-টা ছোট মামলা। এটা ছাড়ুন। সব চেয়ে জরুরি চাকরিপ্রার্থী তরুণদের কথা বলা।’’
তিনি যে ভাবে ধৈর্য ধরে পাঁচ দিন ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন, কংগ্রেসের নেতাদেরও সেই ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন সনিয়া-পুত্র। রাহুলের বক্তব্য, ইডি-র অফিসারেরা তাঁর ধৈর্য নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেছেন, ‘কংগ্রেস পার্টিতে ২০০৪ থেকে কাজ করছি। ধৈর্য না এলে আর কী আসবে?’’ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হতে উদগ্রীব সচিন পাইলটকে দেখিয়ে বলেছেন, ‘‘দেখুন, সচিন পাইলট ধৈর্য ধরে বসে রয়েছেন। সবাই বসে রয়েছেন। আমিও বসে রয়েছি।’’ কংগ্রেস নেতাদের আশা, রাহুলকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবাদে যে ভাবে দল নেতৃত্বের পাশে দাঁড়িয়েছে, এককাট্টা হয়ে রাস্তায় নেমেছে, তার পরে রাহুল নিজেও সক্রিয় হয়ে উঠবেন। শীর্ষনেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে যে ক্ষোভ ছিল, তা কেটে গিয়েছে। নেতাদের ধারণা, ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদ দলের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে।
গত কাল সন্ধ্যাতেই কংগ্রেসের সাংসদ-বিধায়কদের দিল্লিতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। আজ রাহুল বলেছেন, ‘‘এই ছোট মামলা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আজ দেশের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রোজগার।’’ তাঁর বক্তব্য, তিন কৃষি আইনের মতো এই অগ্নিপথ প্রকল্পও মোদী সরকারকে প্রত্যাহার করতে হবে। রাহুল বলেছেন, চিন ভারতের জমি দখল করে বসে রয়েছে। অথচ নিজেকে জাতীয়তাবাদী বলা কেন্দ্রীয় সরকার সেনাকে শক্তিশালী করার বদলে দুর্বল করছে। যুদ্ধ হলে এর ফল টের পাওয়া যাবে। দেশের ক্ষতি হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।