রাহুল গাঁধী সভাপতি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। গত দেড় সপ্তাহ ধরে এআইসিসি মঞ্চ থেকে ছোট-বড় মুখপাত্ররা ঠিক এই কথাটিই পাখি পড়ানোর মতো বলে আসছেন। কিন্তু মঞ্চ থেকে নেমেই উল্টো কথা— রাহুল গাঁধী অনড়। কারও কথা শুনছেন না। কারও সঙ্গে দেখাও করছেন না। রাজ্যে রাজ্যে দলের কোন্দল তীব্র আকার নিচ্ছে। তাতে রাশ টানার দায়িত্বই কে নেবেন? গাঁধী পরিবার ছাড়া অন্য কারও কথাই বা কোন নেতা শুনবেন? আর সেখানেই প্রশ্ন উঠছে, কংগ্রেস দলটি আসলে চালাচ্ছেন কে? রোজকারের সিদ্ধান্তই বা কে নিচ্ছেন?
উত্তর আসছে কংগ্রেসের নেতাদের থেকেই। তাঁদের কথায়, ‘‘দল চলছে নিজের গতিতে। রাহুল যাঁকে যে দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন, প্রত্যেকে নিজের মতো করে তা পালন করছেন। কিন্তু কত দিন তা কেউ বলতে পারেন না! শুধু আশা রাখছি, এক সপ্তাহের মধ্যে রাহুল গাঁধী নিজের মত বদল করে রাশ হাতে নেবেন। ভোটমুখী রাজ্যগুলির সংগঠনে আমূল বদল করবেন শীঘ্রই। তিনি চুপ করে বসে থাকার পাত্র নন।’’
লোকসভার ভোট যে দিন শেষ হয়েছে, সে দিন থেকেই বিজেপি নেতৃত্ব নতুন করে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছেন। আজও ‘নমো অ্যাপ’-এর প্রসারের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে দিয়ে একটি ভিডিয়ো তৈরি করে সেটি প্রচার করেছে বিজেপি। সামনে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোট। বিজেপি এখন থেকেই ঘুঁটি সাজাচ্ছে। কিন্তু কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি ইস্তফা খারিজ করলেও রাহুল এখনও নিজের অবস্থানে অনড়। যার ফলে ছন্নছাড়া দল।
কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন, ‘‘রাহুল আগেই তিন রাজ্যের ভার তিন নেতার হাতে ভার তুলে দিয়েছেন। হরিয়ানায় গুলাম নবি আজাদ, মহারাষ্ট্রে মল্লিকার্জুন খড়্গে, ঝাড়খণ্ডে আর পি এন সিংহ। যদি পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক থাকত, তা হলেও এই নেতাদের কথাই মানতেন রাহুল। কংগ্রেস এতটাই গণতান্ত্রিক। ফলে এ বারেও এই নেতারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন।’’ মুখে এ কথা বললেও নেতারা বলছেন, যদি দলের মাথাই সক্রিয় না থাকেন, তা হলে সমস্যা তো থাকেই। আগে রাহুল নিয়মিত নির্দেশ দিতেন, কোন বিষয় সংবাদমাধ্যমে তোলা হবে, কোনটিতে জোর দেওয়া হবে, কোনটি চেপে দিতে হবে। এখন সেই ব্যবস্থা না থাকায় রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাই নিজের মতো করে প্রচার বিভাগ সামলাচ্ছেন।
দলের সংগঠনের নেতা কে সি বেণুগোপালের সঙ্গে দু’বার দেখা করেন রাহুল। তিনিও বলছেন, ‘‘জানি না, কী হবে।’’ এর মধ্যেই রাজস্থানে সবক’টি আসনে হারের পরে নিজের ছেলে বৈভবের পরাজয়ের দায়ও সচিন পাইলটের ঘাড়ে ঠেলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। চেপে ধরতে বলেন, হারের দায় সামগ্রিক। কর্নাটকে দলের কোন্দল বাড়ছে। মহারাষ্ট্রেও নেতাদের ইস্তফা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস বলছে, ‘‘দলে এখন ‘মুন্ডুহীন মুরগি’র অবস্থা।’’ যা শুনে কংগ্রেসের মুখপাত্রের পদ ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া টম ভডক্কন পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মুরগি কী আর আছে?’’