ধাবায় রাহুল। নিজস্ব চিত্র।
পাঞ্জিপাড়ার ধাবাটি জাতীয় সড়কের ধারেই। সেই জাতীয় সড়ক, যা উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর থেকে এর পরে ঢুকে পড়বে বিহারে। চলে যাবে কিসানগঞ্জে। মহম্মদ রকিমুদ্দিনের দোকানটি ঘিরে হঠাৎই কলরব। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ।
সোমবারের সকালটি অনেক দিন মনে রাখলাম রকিমুদ্দিন। পরে তিনি বলছিলেন, ‘‘প্রথমে চমকে উঠেছিলাম! এত গাড়ি! চার দিকে এত পুলিশ! তার পরে দেখি, রাহুল গান্ধী নামলেন বাস থেকে। দোকানে এসে নিজেই ডেকে নিলেন আমাদের। চা-বিস্কুট দিতে বললেন সবাইকে।’’ তখন ধাবায় বসেছিলেন অনেক ট্রাক-চালক। তাঁদের কাছে ডেকে নেন রাহুল। রকিমুদ্দিনের কথায়, ‘‘খোশ মেজাজে প্রায় ৫০ মিনিট আড্ডা দিয়েছেন রাহুল। নিজের হাতে বানিয়ে ওঁকে চা খাওয়ালাম। দারুণ লাগছে।’’
ট্রাক-চালক হরজিন্দ সিংহের বাড়ি পঞ্জাবের ফিরোজপুরে। গুয়াহাটি থেকে দুর্গাপুর যাওয়ার পথে ধাবায় বসেছিলেন। হরজিন্দ বলেন, ‘‘রাহুল কাছে ডেকে নিলেন। একদম আত্মীয়ের মতো। আমাদের সমস্যার কথা শুনলেন। পথে কী ভাবে পুলিশ আর পরিবহণ দফতরের কর্মীরা হয়রান করেন, সে কথা জানিয়েছি। চালকদের উপর কেন্দ্রের নতুন আইন যে অত্যাচার, বলেছি সে কথা।’’ আর এক গাড়ি-চালক হরিয়ানার হকমত বলেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে। রাহুল আমাদের সঙ্গে চা খেলেন। ছবি তুললেন।’’
ধাবার পিছনে আলুর খেত। পাশে বসে থাকা কৃষক সামসুল আলমকে কাছে ডেকে রাহুল বললেন, ‘‘চাচা, ফসলের ঠিকঠাক দাম মিলছে?’’ সামসুল কথা বলেন এ বিষয়ে রাহুলের সঙ্গে। পরে বললেন, ‘‘এর আগে টিভিতে দেখেছি ওঁকে। এ বার একদম চায়ের আড্ডায়! বিশ্বাসই হচ্ছিল না!’’ রকিমুদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের প্রত্যেকের খবর নিয়েছেন। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে কি না, কী নিয়ে পড়ছে— সব জানতে চেয়েছেন রাহুল।’’
এ দিন রাহুলের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা জয়রাম রমেশ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী, প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি, স্থানীয় নেতা জাভেদ আখতারেরা। জাভেদ বলেন, ‘‘রাহুল চায়ের আড্ডায় অনেকের সঙ্গে কথা বলেন, হাত মেলান।’’
এই ‘চা-চর্চা’ নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। এ দিন বিজেপি জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার বলেন, ‘‘ন্যায় যাত্রা জনমানসে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। ইন্ডিয়া জোট করেছিলেন। এখন জেলায় রাহুলের যাত্রায় কংগ্রেসের ঝান্ডা ঢেকে দিয়ে তৃণমূল ঝান্ডা লাগিয়েছে! এরা নাকি আবার জোটসঙ্গী!’’ তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব কিছু বলতে চাননি।