—ফাইল চিত্র।
বছর দুয়েক আগে নেটিজেনদের সঙ্গে নিজেই আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন পোষ্য ‘পিডি’-র। তারই ক্লোজআপে নেওয়া একটি ছবি রাহুল গাঁধীর মোবাইলের স্ক্রিনে। আজ লোকসভায় বাজেট পেশের সময়ে বিরোধী শিবিরের প্রথম সারিতে সনিয়া গাঁধীর পাশে বসে সেই মোবাইলেই ব্যস্ত থাকলেন রাহুল গাঁধী।
নির্মলা সীতারামন তখন তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতার মাঝপথে। অর্থনৈতিক দিশার বদলে বাজেটে রাজনৈতিক বার্তার ঘনঘটায় অনেকেই ধৈর্য হারাচ্ছেন। সনিয়া গাঁধী খসখস করে কিছু একটা লিখে ফেললেন নোটপ্যাডে। সেটি পড়ে মায়ের চিবুকে আদরও করলেন রাহুল। তার পর বাজেট শেষে সনিয়া বেরিয়ে গেলেন। একটু পরে রাহুলও। হাতের ব্যাগটি ফেলে গিয়েছিলেন সনিয়া, রাহুল সেটিকে পকেটে পুরে নিলেন। কিন্তু বেরিয়ে কেউই কোনও মন্তব্য করলেন না।
এআইসিসি দফতরে পি চিদম্বরম, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালারা সাংবাদিক বৈঠক করতে এলেন। কিন্তু নয়া সভাপতি বা দলের চলতি সঙ্কট নিয়ে তাঁরাও মুখ খুলতে চাইলেন না। বাজেট সত্ত্বেও কংগ্রেস শিবিরে আজও আলোচনার বিষয় ছিল এটাই— রাহুলের পরে দলের হাল কী হবে?
এআইসিসি দফতরেই রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নবীন নেতা জানালেন, ‘‘তিনটি বিষয় স্পষ্ট। এক, রাহুল ইস্তফা ফেরত নেবেন না। ফলে অন্য কেউই সভাপতি হচ্ছেন। দুই, ওয়ার্কিং কমিটি যখনই রাহুলের ইস্তফা মঞ্জুর করবে, সেই সময়ে গোটা এআইসিসি-ও ভেঙে যাবে। অর্থাৎ পুরনো টিমের কেউই থাকবেন না। এমনকি প্রদেশ সভাপতিরাও নন। তিন, এখনও পর্যন্ত দলের ঝোঁক যে দিকে, তাতে কোনও প্রবীণ নেতাই সম্ভবত পরবর্তী সভাপতি হবেন।’’
এই মুহূর্তে দলের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে মল্লিকার্জুন খড়্গে, অশোক গহলৌত এবং সুশীলকুমার শিন্দের নামই সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে ঘুরছে। তবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়ে গহলৌত সভাপতি পদ নিতে রাজি না-ও হতে পারেন। শিন্দের নাম আগেই গাঁধী পরিবারে আলোচিত হয়েছে। আবার লোকসভার সাংসদেরা খড়্গেকে চাইছেন গত পাঁচ বছরে লোকসভায় তাঁর সক্রিয় ভূমিকা দেখে। যদিও এক নেতার কথায়, ‘‘এঁদের থেকে মুকুল ওয়াসনিকের মতো নবীন নেতা অনেক বেশি কার্যকর হবেন— যাঁর সংগঠনে কিছুটা দখল আছে। খড়্গে কিংবা শিন্দের যেটি নেই।’’
রাহুল-শিবিরের নেতারা মনে করছেন, কংগ্রেসে এখন ফের প্রবীণতন্ত্রের দাপট প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বিশেষ করে আহমেদ পটেল এবং তাঁর গোষ্ঠীর নেতাদের। সভাপতি হওয়ার পর থেকে সনিয়ার একদা রাজনৈতিক সচিব পটেলের ডানা ছাঁটতে শুরু করেছিলেন রাহুল। এমনকি জনার্দন দ্বিবেদীকে রাহুলের কোপ থেকে বাঁচাতে পারেননি পটেল। যদিও অশোক গহলৌতকে দলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখতে পেরেছিলেন। এখন গহলৌত-পটেলের অক্ষ ফের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ দিকে রাহুল পদ ছেড়ে দিয়েছেন। সনিয়াও নাক গলাতে চাইছেন না।
চার পাতার খোলা চিঠিতে রাহুল জানিয়েছিলেন, তিনি একাই লড়েছেন। সঙ্গে কাউকে পাননি। গত কাল মুম্বইয়ে গিয়েও দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। কর্মীরা রাহুলকে সভাপতি পদে থাকতে আর্জি জানান। রাহুল তাঁদের বলেন, ‘‘মুম্বইয়ে এত বৃষ্টি হচ্ছে এত দিন ধরে, আপনাদের কেন রাস্তায় দেখা গেল না? মানুষের পাশে না-দাঁড়ালে দলের শক্তি বাড়বে না।’’ সেখানেই এক ঘনিষ্ঠ নেতাকে রাহুল জানিয়ে দেন, সভাপতি ছাড়া অন্য যে কোনও পদ দিলে তিনি কাজ করতে রাজি।
আগামিকাল পটনা যাবেন রাহুল। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীর দায়ের করা মানহানির মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে।