আমেরিকার জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনাসভায় রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র বাকি শরিকদের আসন সমঝোতা হলেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের আসন সমঝোতা হয়নি। তা নিয়ে আমেরিকা সফরে গিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হল লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলাপচারিতায় এক পড়ুয়া রাহুলকে প্রশ্ন করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের সঙ্গে আপনাদের আসন সমঝোতা হয়নি। হিন্দুত্ববাদী দল উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ‘ইন্ডিয়া’ রয়েছে। তা হলে আপনাদের মধ্যে ঐকমত্য কোথায়? শুধু কি নরেন্দ্র মোদীকে হটাতেই সকলে এককাট্টা হয়েছেন?
উত্তরে রাহুল বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া’র দলগুলি অনেক বিষয়ে একমত। সংবিধান রক্ষার বিষয়ে সকলেই একমত। প্রায় সকলে জাতগণনার দাবিতে একমত। তিনি বলেন, ‘‘সব জোটই দর কষাকষির ভিত্তিতে চলে। আদানপ্রদান চলতে থাকে। সেটাই স্বাভাবিক। আমরা আগে সাফল্যের সঙ্গে জোট সরকার চালিয়েছি। ভবিষ্যতে আমরা এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।’’ জোটের মধ্যে বিবাদের জেরে যাতে বিজেপি সুযোগ না পেয়ে যায়, সেই কারণেই আগে ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় এসে তার পরে প্রধানমন্ত্রী বাছাই করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রাহুল জানান। ভবিষ্যতে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর পদের দাবিদার হয়ে ওঠা নিয়ে রাহুল বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া’য় অনেক যোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন।
রাহুল বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনের ফলের পরে এক সেকেন্ডে নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে মানুষের ভয় দূর হয়ে গিয়েছে। অথচ এই ভয় তৈরি করতে বহু সময়, অর্থ, শক্তি ব্যয় করা হয়েছিল। এখন মানুষ বলছেন, আর ভয় করে না। মোদীর ৫৬ ইঞ্চি ছাতি, ভগবানের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের ভাবমূর্তি ভেঙে গিয়েছে। বিজেপি ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে ‘ইন্ডি জোট’ বলে ডাকছে। তা নিয়ে এক পড়ুয়াকে রাহুলের জবাব, ‘‘বিজেপি ইন্ডি অ্যালায়েন্স নাম দিয়েছে। ইন্ডিয়া-র ‘এ’ হল অ্যালায়েন্স। আমরা ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স বলছি। কারণ আমাদের অভিযোগ, মোদী জমানায় ইন্ডিয়া-র ভাবনাই আক্রান্ত।’’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে এক বৈঠকে রাহুলের শিখদের নিয়ে মন্তব্যকে ঘিরে বিজেপি আজ দল বেঁধে আক্রমণে নেমেছে। রাহুল এক শিখকে দেখিয়ে বলেছেন, শিখরা যাতে নিজের ইচ্ছে মতো মাথায় পাগড়ি, হাতে কাড়া পরতে পারেন, গুরুদ্বারা যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই ‘ইন্ডিয়া’ লড়ছে। বিজেপি আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীর মতো শিখ নেতাদের মাঠে নামিয়েছে। পুরীর অভিযোগ, রাহুল বিপজ্জনক কথা বলছেন। তিনি দেশের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তিনি ভুলে গিয়েছেন, কংগ্রেসের জমানায় শিখ নিধন হয়েছিল। কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপালের যুক্তি, মোদী বুদবুদ ফেটে গিয়েছে, এই সত্যিটা রাহুল গান্ধী বলছেন বলেই বিজেপি নড়ে উঠেছে। বিজেপি-আরএসএস বিভাজনের রাজনীতি করছে। আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিংহের অভিযোগ, বিজেপি শিখদের খলিস্তানি বলেছে। শিরোমণি অকালি দলের বক্তব্য, কংগ্রেসের শিখদের সম্পর্কে কথা বলার অধিকার নেই। তবে এটাও ঠিক, মোদী জমানায় বাকি সংখ্যালঘুদের মতো শিখেরাও কোণঠাসা।