কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
বিজেপির বিরুদ্ধে সার্বিক বিরোধী জোট এখনও আধসেদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। তাঁদের মতে, ভিতরে বইছে পারস্পরিক ‘অ্যালার্জি’র চোরা স্রোত। কিন্তু কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আশাবাদী। আমেরিকার মাটিতে তাঁর বক্তব্য, আগামী লোকসভা ভোটে কংগ্রেস তো ‘চমকে দেওয়ার মতো’ ভাল করবেই, পাশাপাশি বিজেপিকে তখ্ত থেকে সরিয়ে দেবে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট। তবে তিনি এ কথাও স্বীকার করছেন যে, জোটের মধ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ ‘জটিলতা’ রয়ে গিয়েছে। তাঁর আশা, কিছু ‘দেওয়া-নেওয়ার’ মাধ্যমে ক্রমশ তা পোক্ত হয়ে উঠবে।
আমেরিকা সফরে গিয়ে ওয়াশিংটন ডিসি-র প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় এই সমস্ত কথা দাবি করেছেন রাহুল। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় পরের (লোকসভা) নির্বাচনে কংগ্রেস খুবই ভাল ফল করবে। মানুষকে অবাক করে দেবে। একটু অঙ্ক কষে দেখুন, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট বিজেপিকে হারাবে।” এর পরেই বিরোধী জোট নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “বিরোধীরা যথেষ্ট ভাল ভাবেই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। সমস্ত বিরোধী দলের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে। যথেষ্ট ভাল গতিতেই কাজ চলছে। এই জোট-আলোচনা জটিল। কারণ, এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে আমরা (পরস্পরের সঙ্গে) ভোটে লড়ছি। ফলে কিছুটা দেওয়া-নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী, একটা সার্বিক বিরোধী জোট গড়ে উঠবে।”
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজীবপুত্র বলেছেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। তাঁর কথায়, “আমাকে হত্যা করা হতে পারে, এ নিয়ে চিন্তিত নই। সবাইকেই একদিন মরতে হবে। আমি আমার বাবা এবং ঠাকুমাকে দেখে এটা শিখেছি। ফলে কিছু করতে চাইলে, মৃত্যুভয়ের কারণে পিছিয়ে যাওয়ার মানে নেই।”
এ দিন সমাজের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ থেকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা— সমস্ত কিছু নিয়েই মোদী সরকারকে বিঁধেছেন রাহুল। গতকাল মোদীর চিন-নীতি এবং ইউক্রেন সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত সরকারের অবস্থানের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আজ কিন্তু তিনি চিন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। রাহুলের কথায়, “চিন আমাদের ভূখন্ড দখল করে বসে রয়েছে। এটা সবার জানা ঘটনা। দেড় হাজার বর্গ কিলোমিটার জমিতে তারা থাবা গেড়ে বসে আছে, যা মেনে নেওয়া যায় না। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী মোদী অন্য রকম ভাবছেন।”
সমাজে ধর্মীয় বিদ্বেষ নিয়ে সরব কংগ্রেস নেতার কথায়, “আমি মনে করি, ভারতবাসীর নিজের-নিজের ধর্মচর্চার অধিকার রয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিজেপি সমাজে ঘৃণার সঞ্চার করছে। তারা সমাজের মেরুকরণ করছে। এই সরকার সবাইকে নিয়ে চলতে চায় না। সমাজকে বিভক্ত করতে চায়, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।” সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য অত্যাবশ্যক এ কথা বলে রাহুলের মন্তব্য, “দেশের প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদমাধ্যমকে দখল করা হয়েছে। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর হেঁটেছি। সরাসরি কথা বলেছি লাখো ভারতীয় সঙ্গে। মূল্যস্ফীতি এবং বেকারিত্বের মতো গুরুতর বিষয় রয়েছে। মানুষ ক্ষুব্ধ।”
নিজের সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে রাহুলের বক্তব্য, “ভারতের ইতিহাসে আমিই প্রথম, যাকে সংসদ অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ দণ্ড দেওয়া হল। সংসদে আদানিকে নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার ঠিক পরেই এই ঘটনা ঘটল। এতেই বোঝা যায়, ভারতে এখন ঠিক কী চলছে।”
বিজেপি অবশ্য বরাবরই বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের বিষয়ে রাহুলের সমালোচনায় খড়্গহস্ত। একে অনেক সময় এমনকি দেশবিরোধী বলেও প্রচার করেছে তারা। তাদের দাবি, বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও ভারতে বৃদ্ধির চাঙ্গা হার হজম হয়নি কংগ্রেসের।