লোকসভা এবং বিধানসভা মিলিয়ে একদফা উপনির্বাচন পর্ব সদ্য মিটেছে। সেখানে বিরোধীরা যেখানেই একজোট হয়েছে, হেরেছে বিজেপি। উদাহরণ কৈরানা। আর সাফল্যের এই রসায়নকে অস্ত্র করেই ডিসেম্বরে তিন রাজ্যে (মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীশগঢ়) বিধানসভা ভোট এবং আগামী বছরের লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করছেন রাহুল গাঁধী। কৈরানা-মডেলকে সামনে রেখে বিরোধী জোটের রণকৌশল ঠিক করতে আগামী সপ্তাহেই নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসবেন রাহুল, অখিলেশ সিংহ যাদব, মায়াবতী। এই মুহূর্তে বিদেশে রয়েছেন রাহুল। সেখান থেকে ফিরে আগামী বুধবার মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে যাবেন তিনি। তার পরেই বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গে শুরু করবেন বৈঠক।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, রাহুল এখনই ঘটা করে কোনও বিরোধী ফ্রন্ট তৈরি করতে চান না। বরং যে রাজ্যে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, তার সঙ্গে সমন্বয় করে বিজেপি-বিরোধী ঐক্য অটুট রাখতেই আগ্রহী তিনি। কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, এর ফলে রাহুলের নেতৃত্বে খুব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই তৃতীয় ইউপিএ গড়ে উঠতে চলেছে। আর দ্রুত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্টের বিষয়টি। রাহুলের অঙ্ক, বিজেপিকে হারাতে জাতীয় দল হিসেবে কংগ্রেসের ছাতার তলায় থেকে বা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েই আঞ্চলিক দলগুলি লড়বে। যেমনটা হয়েছে ঝাড়খণ্ডে। সেখানে কংগ্রেসের ছাতার তলায় থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ে ভাল ফল করেছে জেএমএম।
আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে হাত মেলানো শুধু নয়। বিজেপি তথা এনডিএ-কে হারাতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী— কৈরানার এই কৌশলেই বাজিমাত করতে চাইছেন রাহুল। ডিসেম্বরে যে তিন রাজ্যে ভোট, সেখানে মায়াবতী এবং অখিলেশের দলের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। কিন্তু সেখানেও মোদী-বিরোধী হাওয়া তুলতে সক্রিয় অখিলেশ-মায়ারা। ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রদেশে একদফা প্রচার করেছেন অখিলেশ। সেখানে কয়েকটি আসনে লড়তেও চান তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে রাহুলের সঙ্গে কথা বলেই এগোবে এসপি। মধ্যপ্রদেশে এসপি-কে কিছু আসন ছেড়ে উত্তরপ্রদেশে অখিলেশের কাছে কিছু বাড়তি আসন চাইতে পারেন রাহুল।
তবে এ সব নিয়ে দীর্ঘ দরকষাকষি করতে নারাজ রাহুল। সে কারণেই কর্নাটকে জেডি(এস)-এর সঙ্গে মন্ত্রক বণ্টনের বিষয়টি দ্রুত মিটিয়ে ফেলে ২০১৯-এর জন্য যৌথ ভাবে ঝাঁপাতে প্রস্তুত কংগ্রেস। কর্নাটকের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল আজই জানিয়ে দিয়েছেন, জেডি(এস)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েই লোকসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বেন তাঁরা।
আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনই কোনও বিরোধী ফ্রন্ট গঠন না করলেও বিজেপি-বিরোধী একটি প্রচার কমিটি গড়ার কথা ভাবছেন রাহুল-অখিলেশ। বিভিন্ন রাজ্যে প্রচার, একত্রে সাংবাদিক সম্মেলন করার মতো বিষয়গুলির সমন্বয় করবে ওই কমিটি। এর ফলে গোটা দেশে জোরালো মোদী-বিরোধী বার্তা পৌঁছনো যাবে বলেই মনে করছেন বহু নেতা।