Rahul Gandhi

Rahul Gandhi: রাহুল গাঁধীর ডাকে মঙ্গলে বিরোধী সাংসদদের প্রাতরাশ বৈঠক, থাকছে তৃণমূলও

কংগ্রেসের হিসেবে, অন্তত ১৪ থেকে ১৫টি বিরোধী দল রাহুলের বৈঠকে হাজির হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আচমকা রাহুল কেন সক্রিয় হয়ে উঠলেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২১ ০৬:২৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

গত সপ্তাহে সংসদে রাহুল গাঁধী বিরোধী দলগুলির লোকসভা ও রাজ্যসভার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার পরে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পেগাসাস-কাণ্ডে নরেন্দ্র মোদী সরকারের জবাবদিহি ও তদন্ত দাবি করেছিলেন। এ বার বিরোধী দলগুলিকে আরও এককাট্টা করতে সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও সাংসদদের প্রাতরাশে আমন্ত্রণ জানালেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে রাহুলের প্রাতরাশ বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসও উপস্থিত থাকতে চলেছে। গত সপ্তাহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরের মধ্যে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকের আগে, রাহুলের উদ্যোগে হওয়া বিরোধী দলগুলির বৈঠকে তৃণমূল গরহাজির ছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে রাহুলের প্রাতরাশে যোগ দেওয়ার বিষয়ে রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন ইতিমধ্যেই সবুজ সঙ্কেত পেয়েছেন। সূত্রের খবর, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে সকলকে এই বৈঠকে যোগ দিতেই বলা হয়েছে।

Advertisement

আগের বার আলোচনায় না-যাওয়ার পরে এ বার যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন? তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, ‘‘গত বার ওই বৈঠক হওয়ার সময়ে মমতা-সনিয়ার সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু তা হওয়ার পরে এখন দিশা স্পষ্ট। বিজেপি-বিরোধী রাজনীতিতে আমরা কংগ্রেসের পাশে থাকব। কংগ্রেসও আমাদের সঙ্গে থাকবে।’’

রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে জানিয়েছেন, ‘‘লোকসভা ও রাজ্যসভার সমস্ত বিরোধী দলনেতা ও অন্য সাংসদেরা বৈঠকে যোগ দেবেন।’’ ইজ়রায়েলের পেগাসাস স্পাইওয়্যার দিয়ে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ নিয়ে সংসদের বাদল অধিবেশন গত দু’সপ্তাহ কার্যত অচল ছিল। তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম দিনেও তা কার্যত অচল থেকেছে। কেন্দ্র পেগাসাস নিয়ে আলোচনায় নারাজ। এত দিন পীযূষ গয়াল, প্রহ্লাদ জোশীর মতো মন্ত্রীরা বিরোধীদের সঙ্গে দৌত্য করছিলেন। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বৈঠকের পরে প্রবীণ রাজনাথ সিংহকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজনাথ আজ কংগ্রেসের খড়্গে, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, বিরোধীরা পেগাসাস নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাবদিহি ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি থেকে সরবেন না। ফলে সংসদের অচলাবস্থা কাটারও দিশা মেলেনি। বিরোধীরা সংসদের বাইরে ‘মক পার্লামেন্ট’ বা ‘নকল সংসদ’ বসানোর পরিকল্পনা করছেন। রাহুলের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

Advertisement

কংগ্রেসের হিসেবে, অন্তত ১৪ থেকে ১৫টি বিরোধী দল রাহুলের বৈঠকে হাজির হবে। কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, আচমকা রাহুল কেন সক্রিয় হয়ে উঠলেন? এত দিন তো তিনি কংগ্রেস সভাপতির পদে ফিরতেও অরাজি ছিলেন! তিনি কি এ বার বিরোধী জোটের রাশ নিজের হাতে তুলে নিতে চাইছেন? নাকি মমতা বিরোধী জোটের মুখ হয়ে উঠছেন দেখে তাঁর এই সক্রিয়তা? অনেকে মনে করাচ্ছেন, এর আগে রাজনৈতিক নেতাদের সনিয়া বিভিন্ন সময়ে চা-চক্র ইত্যাদিতে আমন্ত্রণ জানালেও, রাহুলের দিক থেকে এমন উদ্যোগ এই প্রথম।

বিরোধী দলের নেতা, সাংসদরা রাহুলের ডাকা বৈঠকে যেতে রাজি হলেও, তাঁরা রাহুলের নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছেন বলে মানতে রাজি নন। এতে রাহুল তথা কংগ্রেসের হাতে বিরোধী জোটের নেতৃত্বের রাশ চলে যাচ্ছে বলেও তাঁরা মানছেন না। এসপি-র রাজ্যসভার নেতা রামগোপাল যাদব বলেন, ‘‘প্রতিদিনই সকালে খড়্গের ঘরে বিরোধী দলগুলির বৈঠক হয়। আর এ তো প্রাতরাশের আমন্ত্রণ।’’ সিপিএম সাংসদ এলামরম করিম জানান, তাঁরাও প্রাতরাশ বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। তবে ডিএমকে সাংসদদের প্রায় সকলে এখন চেন্নাইয়ে থাকায় তাদের তরফে হয়তো কেউ থাকবেন না। এরই মধ্যে আজ শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাউত বলেন, ‘‘রাহুল মহারাষ্ট্র সরকারের কাজে খুশি। শিবসেনার বৃদ্ধি ও কাজ জানতেও ওঁর আগ্রহ।’’

কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, গত দু’এক মাসে বিরোধী জোট নিয়ে আলোচনায় সকলেই বলেছেন, তা কংগ্রেসকে ছাড়া হবে না। কিন্তু কংগ্রেসের হাতে নেতৃত্ব থাকবে, এ কথাও কেউ বলেননি। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার বলেছেন, বিরোধী ঐক্য গড়ে উঠলে তাতে ‘সম্মিলিত নেতৃত্ব’ দরকার। ফলে কংগ্রেসকে বিরোধী জোটের রাশ হাতে রাখতে হলে, রাহুলকেই সক্রিয় হতে হবে। দলের নেতারা অবশ্য মানছেন, বিজেপিবিরোধী জোটের নেত্রী হিসেবে সনিয়ার গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও, রাহুলের তা নেই। তাই মঙ্গলবার শুধুমাত্র রাজনৈতিক বৈঠক ডাকা হলে অনেকের আপত্তি থাকবে বুঝেই রাহুলের তরফে প্রাতরাশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, শীর্ষ নেতৃত্ব সকলকে এই আলোচনায় যোগ দিতে বললেও স্বাভাবিক অস্বস্তির কারণে সম্প্রতি কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসা মৌসম নূর হয়তো যাবেন না। লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে গরহাজির থাকতে পারেন। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলেন বলে হয়তো যাবেন না রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দু শেখর রায়ও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement