রঘুরাম রাজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাহুল গাঁধী।—ছবি পিটিআই।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে রাহুল গাঁধীর কৌশল ছিল, নরেন্দ্র মোদীর ‘দুর্নীতিমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন’ ভাবমূর্তিতে আঘাত করা। রাফাল-চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান ছিল সেই কৌশলেরই অঙ্গ।
তাতে লাভ হয়নি। ‘টিম রাহুল’ সূত্রের খবর, রাহুল এ বার মোদীর থেকে নিজেকে আালাদা করে তুলে ধরতে চাইছেন। রাহুলের এই নতুন ‘ব্র্যান্ডিং’ কৌশলেরই অঙ্গ হল, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রঘুরাম রাজনের সঙ্গে করোনা-সঙ্কট, অর্থনীতির সমস্যা নিয়ে তাঁর আলাপচারিতা জনসমক্ষে তুলে ধরা। রাহুল সেখানে নিজে বলছেন কম। শুনছেন বেশি। দুই অর্থনীতিবিদের থেকে সব কিছু বুঝে নিতে চাইছেন।
‘টিম রাহুল’-এর এক তরুণ নেতার কথায়, “এখানেই মোদীর সঙ্গে রাহুলজির ফারাক। প্রধানমন্ত্রী কারও সঙ্গেই পরামর্শ করেন না। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও নয়। রাহুলজি যখন ১২ ফেব্রুয়ারি করোনা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন, তখন সবাই হেসেছিলেন। এখন সবাই তাঁর দূরদর্শিতা বুঝছেন।” লকডাউনের পরে রাহুল সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর প্রথম ভিডিয়ো কনফারেন্সে এইখানেই জোর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মোদীজি কারও সঙ্গে কোনও বিষয়ে আলোচনা করেন না। নিজেই সিদ্ধান্ত নেন। তিনি করোনা-সঙ্কট আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। কারণ, দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছিলেন। আবার, অতিমারির মোকাবিলায় সরকারের কার্যকারিতা নিয়েও বাগযুদ্ধে যেতে চাননি।
নিজেকে পরিণত রাজনীতিক হিসেবে তুলে ধরতে রাহুলের এই ‘ব্র্যান্ডিং’ কৌশল কি কাজে দিচ্ছে? প্রবীণ ব্রিগেডের সদস্যদের যুক্তি, তরুণ ব্রিগেড ফের রাহুলকে সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনতে চাইছে বটে। কিন্তু রাহুলের তুলনায় সনিয়া গাঁধীর কথার ওজন এখনও বেশি। উদাহরণ, কংগ্রেস পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনের ভাড়া বহন করবে বলে সনিয়ার ‘মাস্টারস্ট্রোক’। তা সফল করতে দলের কোষাধ্যক্ষ আহমেদ পটেল প্রদেশ কমিটিগুলিকে জানিয়েছেন, শ্রমিকদের ভাড়ার খরচ জোগাতে প্রয়োজনে এআইসিসি-ও সাহায্য করবে।
কংগ্রেসের অনেক নেতা অবশ্য সনিয়ার এই সিদ্ধান্তের পিছনেও রাহুলের মস্তিষ্ক দেখতে পাচ্ছেন। তাঁদের যুক্তি, রাহুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী। কংগ্রেসের তরফে শ্রমিকদের ভাড়া মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তার প্রকৃত উদাহরণ। কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার শ্রমিকদের বাসভাড়া হিসেবে কর্নাটক রাজ্য পরিবহণকে ১ কোটি টাকার চেক দিয়েছিলেন। সনিয়া সেটাই সারা দেশে ‘মডেল’ হিসেবে তুলে নেন। সনিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে যেতে বিজেপিকেও অনেক মেপে পা ফেলতে হয়। এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, “রাহুল চেষ্টা করছেন ঠিকই। কিন্তু নিজেকে নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে হলে তাঁকে এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)