দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে আমলা-নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ নিয়ে আম আদমি পার্টি (আপ) এবং কংগ্রেসের টানাপড়েনের আঁচ পড়েছিল গত শুক্রবার পটনায় হয়ে যাওয়া বিরোধীদের মহা-বৈঠকেও। সেখানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ ছিল, আপের আহ্বায়ক তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী যেন কয়েক দিনের মধ্যে দিল্লিতে বসে চা-বিস্কুট খেয়ে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করে নেন। কারণ, সব সমস্যার সমাধান চায়ের কাপে হয়ে যায়। আপ সূত্রের খবর, রাহুলকে চায়ে আমন্ত্রণ জানালেও এখনও পর্যন্ত তাতে নীরবই রয়েছেন কংগ্রেসের এই প্রাক্তন সভাপতি।
দিল্লির আমলা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্র যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, তা রুখতে অ-বিজেপি দলগুলির বড় অংশের সমর্থন জোগাড় করে ফেলেছেন কেজরীওয়াল। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি কংগ্রেস। এই বিষয়ে মতান্তর মিটিয়ে ফেলতে পটনায় রাহুলকে চায়ের টেবিলে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কেজরীওয়াল, এমনটাই দাবি আপ নেতৃত্বের। কিন্তু রাহুল তথা কংগ্রেসের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। আপের সূত্র উদ্ধৃত করে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশের সব চেয়ে বড় বিরোধী দলের সামনে দু’টি দাবি রেখেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এক, আমলা নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ নিয়ে কংগ্রেসকে প্রকাশ্যে তাদের অবস্থান জানাতে হবে। দুই, সরকার সংসদে ওই অধ্যাদেশ পেশ করলে কংগ্রেসকে তার বিরোধিতা করতে হবে।
আপের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এক বার নয়, বেশ কয়েক বার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চেয়ে রাহুলকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কেজরী। কারণ, তিনি মনে করেন, এই ধরনের মতান্তর আলোচনার মাধ্যমেই মিটিয়ে ফেলা সম্ভব । কিন্তু কংগ্রেসের তরফে কোনও সদ্র্থক সাড়া পাওয়া যায়নি। ওই সূত্রটির আরও দাবি, পটনা বৈঠকে এক প্রথম সারির বিরোধী নেতা পরামর্শ দিয়েছিলেন, মধ্যাহ্নভোজে মুখোমুখি বসুন রাহুল ও কেজরী। সেখানেই বিষয়টির আলোচনা ও নিষ্পত্তি হোক। কিন্তু রাহুল সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর অসম্মতির কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। আপ নেতৃত্বের আশঙ্কা, আমলা-নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ সংসদে এলে কংগ্রেস ভোটদানে বিরত থাকতে পারে বা এ বিষয়ে সাংসদদের হুইপ না-ও জারি করতে পারে। যাতে আখেরে লাভ হবে বিজেপির।
এই পরিস্থিতিতে দুই দলের নেতাদের পরস্পরের প্রতি বাক্যবাণ জারি রয়েছে। বিজেপিকে নিশানা করে এক সময় রাহুল বলেছিলেন, ‘‘ঘৃণার বাজারে আমি ভালবাসার দোকান খুলতে চাই।’’ কংগ্রেস নেতার ওই বক্তব্য অস্ত্র করে আপ নেতা তথা দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজের কটাক্ষ, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, ঘৃণার বাজারে আপনি (রাহুল) ভালবাসা দেবেন। বিরোধী দলগুলি আপনার কাছে ভালবাসা চাইতে যাচ্ছে, কিন্তু আপনি তা দিতে রাজি নন। তা হলে তো ভালবাসা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।’’ চুপ করে নেই কংগ্রেসও। আপ আহ্বায়ককে নিশানা করে দিল্লির কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনবলেন, ‘‘কেজরী এক দিকে আমাদের সমর্থন চাইছেন, আর অন্য দিকে, রাজস্থানে গিয়ে অশোক গহলৌত ও সচিন পাইটলকে আক্রমণ করছেন! আগে তাঁকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’’