মোদীকে কটাক্ষ রাহুলের ফাইল চিত্র
নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নন, ‘নিছক একটি যন্ত্র’ এবং তাঁকে দিয়ে তিন-চার জন বন্ধু শিল্পপতি নির্দিষ্ট কিছু কাজ করিয়ে নিচ্ছেন বলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজ অভিযোগ তুললেন।
সরকারি সম্পত্তি বেসরকারি ক্ষেত্রকে কাজে লাগাতে দিয়ে চার বছরে ৬ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তোলার পরিকল্পনা গত কালই ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি আজ এর বিরোধিতা করেছে সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও। আজ বিরোধীরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ঘুরপথে সরকারি সম্পত্তি বেচে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। বিএমএস সাধারণ সম্পাদক বিনয় কুমার সিন্হারও মন্তব্য, ‘‘এ তো ঘরের গয়নাগাঁটি বেচে দেওয়া।’’
পেগাসাস, কৃষি আইন, পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বিমা ও অন্যান্য সংস্থার বেসরকারিকরণের মতো এ বিষয়েও বিরোধী দলগুলি এককাট্টা হয়ে প্রতিবাদে মাঠে নামতে চাইছে। দিল্লিতে রাহুল গাঁধী, কলকাতায় তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ বিষয়ে বিরোধী দলগুলি নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে এগোবে। সূত্রের খবর, সনিয়া গাঁধীর ডাকে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে সেপ্টেম্বরের শেষে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই সময়ে সরকারি সম্পত্তি বেসরকারি ক্ষেত্রের হাতে তুলে দেওয়ারও প্রতিবাদ হবে।
রাহুল আজ অভিযোগ করেছেন, যে সব সম্পদ নিয়ে দেশের হাতে গোনা কিছু শিল্পপতিই আগ্রহী, জাতীয় সড়ক, রেল, বিমানবন্দর, জাহাজ বন্দর, তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন, টেলিযোগাযোগের ফাইবার নেটওয়ার্ক, মোবাইল টাওয়ারের মতো তেমন সম্পদই বেছে বেছে ব্যবসায়িক কাজে লাগানোর জন্য বেসরকারি ক্ষেত্রকে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘সম্পত্তির তালিকা পড়লেই বোঝা যায়, দেশের কী কী প্রধানমন্ত্রী তাঁর বন্ধুদের বেচছেন। আমার বলারও দরকার নেই, কোন সম্পত্তি কার হাতে যাবে, কাদের জন্য কোন সম্পদ বাছাই করা হয়েছে আর কী ভাবে বিনামূল্যে এই উপহার দেওয়া হচ্ছে।’’
উদাহরণ হিসেবে রাহুল বলেন, ‘‘২৫টি বিমানবন্দর বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। একগুচ্ছ বন্দরের জেটি রয়েছে। আপনারা জানেন, বিমানবন্দর কাকে দেওয়া হচ্ছে, বন্দর কার হাতে রয়েছে।’’
তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় অভিযোগ তোলেন, ‘‘কর্পোরেট সংস্থাই মোদী সরকারের নীতি তৈরি করছে। মোদী সরকার শুধু তা রূপায়ণ করছে।’’ তিনিও নাম না করে ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত শিল্পপতিদের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কাল দাবি করেছিলেন, সমস্ত সম্পত্তির মালিকানা সরকারের কাছেই থাকবে। ওই সব সম্পত্তি পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলেই তা বেসরকারি সংস্থাকে কাজে লাগাতে দেওয়া হচ্ছে। পরে তা সরকারের কাছে ফেরত চলে আসবে। রাহুলের প্রশ্ন, কোথাও ৪০ বছর, কোথাও ৫০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হচ্ছে। তারপরে কী হবে, কে জানে! এটা আসলে বেচে দেওয়াই।
বিজেপি আজ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, ইউপিএ-আমলেও তো বেসরকারিকরণ হয়েছে। এখন তা হলে কংগ্রেসের উল্টো সুর কেন? রাহুল বলেন, ‘‘আমরা বেসরকারিকরণের বিরোধী নই। আমাদের নীতি ছিল, কৌশলগত ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ হবে না। তার মধ্যে রেলও ছিল। কারণ, তা গরিব মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম। সেখানে বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়। আমরা লোকসানে চলা সংস্থা বা যে সব সংস্থার বাজারে উপস্থিতি খুবই কম, তার বেসরকারিকরণ করতাম।’’ রাহুলের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে বাজারে তিন-চারটি সংস্থার একচেটিয়া আধিপত্য তৈরির জন্যই বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে। এর ফলে দেশের চাকরির সুযোগও কমবে। সরকারি সংস্থার কর্তৃত্ব বেসরকারি হাতে চলে গেলে সংরক্ষণ মিলবে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার বলে বিরোধীদের দাবি।