রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
ইন্ডিয়া জোটের ২৮টি দল দেশের ৬০ শতাংশ জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করছে। এই ২৮টি দল এককাট্টা হলে বিজেপির পক্ষে আগামী লোকসভা নির্বাচনে জেতা অসম্ভব বলে আজ রাহুল গান্ধী দাবি করলেন।
আজ মুম্বইয়ে বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’র তৃতীয় সম্মেলনে ১৪ সদস্যের সমন্বয় কমিটি ও নির্বাচনী রণকৌশল কমিটি তৈরি হয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’-র চেয়ারপার্সন বা আহ্বায়ক হিসেবে কাউকে বেছে নেওয়া হয়নি। কাউকে চেয়ারপার্সন বা আহ্বায়ক করা হলে তাঁকেই বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখা হত। বিজেপি বিরোধী নেতানেত্রীরা সে পথে হাঁটেননি।
আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘ইন্ডিয়া’-র দলগুলির তরফে ‘যত দূর সম্ভব’ একসঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা সম্ভব হবে না মেনে নিলেও আজ রাহুল থেকে নীতীশ কুমার, অরবিন্দ কেজরীওয়াল থেকে উদ্ধব ঠাকরে, এক সুরে দাবি করেছেন, ‘ইন্ডিয়া’ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে চলেছে। ঠিক হয়েছে, এ বার মাঠে নেমে পড়তে হবে। রাজ্যের রাজধানী শহরগুলিতে জোটের বার্তা পৌঁছে দিতে ও মোদী সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরতে জনসভা করা হবে। সব দল এক সুরে প্রচারে নামবে।
এই প্রচারের সুর কী হবে? সূত্রের খবর, আজ ইন্ডিয়া-র বৈঠকের শেষ পর্বে রাহুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মানুষের মনে তিনটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করেছেন। এক, মোদী দুর্নীতিমুক্ত, মোদী সরকারের আমলে দুর্নীতি হয়নি বলে প্রচার হচ্ছে। বাস্তবে আদানি-কাণ্ড, সিএজি রিপোর্ট, নীরব মোদী-বিজয় মাল্যদের দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনা অন্য কথা বলছে। দুই, মোদী সরকারের আমলে বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। বাস্তবে মোদী যে দেশেই যাচ্ছেন, সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। তিন, মোদী সরকার ওবিসি-দের জন্য অনেক কিছু করেছে বলে বোঝানো হচ্ছে। বাস্তবে দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের মতো ওবিসি-রাও অবিচারের শিকার হয়েছেন। এই তিনটি বিষয়ে জোর দিতে হবে বলেও রাহুল জানান। ‘ইন্ডিয়া’-র সাংবাদিক সম্মেলনে আদানি গোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া নিয়ে মোদীকে নিশানা করেছেন রাহুল। লাদাখে চিনের জমি দখল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যে বলছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন।
এত দিন কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির মধ্যে সাপে নেউলে সম্পর্ক হলেও, রাহুলের সুরেই অরবিন্দ কেজরীওয়াল বৈঠকের পরে বলেন, দেশের ইতিহাসে এত দুর্নীতিগ্রস্ত ও অহঙ্কারী সরকার আসেনি। আদানি-কাণ্ড নিয়ে রাহুলের আক্রমণকে সমর্থন করে কেজরীওয়াল বলেন, বিদেশি সংবাদপত্রে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এক জন ব্যক্তির জন্য কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ভগবানের থেকে বড় মনে করছেন। তাই দ্রুত পতন হবে। সূত্রের খবর, বৈঠকেও কেজরীওয়াল কংগ্রেসকে উদার মনোভাব নিয়ে দিল্লির আমলা নিয়ন্ত্রণ বিলে আম আদমি পার্টিকে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। বলেন, কংগ্রেস তাঁর পাশে দাঁড়াবে, তিনি তা আশাই করেননি।
বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দিয়েছেন, ‘ইন্ডিয়া’র মূল বিষয় হিসেবে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, কৃষকদের সমস্যা, আর্থিক অনগ্রসর শ্রেণির উন্নতির মতো কিছু বিষয় বেছে নেওয়া হোক। সেগুলি ২ অক্টোবর রাজঘাট থেকে ঘোষণা করা হোক। সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, মনোজ ভট্টাচার্য, জি দেবরাজনের মতো বাম নেতারাও মানুষের সমস্যা নিয়ে সরব হওয়ার পক্ষে জোর দিয়েছেন। তাঁরা নির্বাচনী সংস্কারের পক্ষেও সওয়াল করেছেন। সূত্রের খবর, দিল্লির রাজঘাটে যদি ওই কর্মসূচি ঘোষণা হয়, তারপর ‘ইন্ডিয়া’-র পরবর্তী বৈঠক বিধানসভা ভোটমুখী মধ্যপ্রদেশের ভোপালে হতে পারে।
বিরোধী শিবির আশঙ্কা করছে, জি-২০ সম্মেলনের পরেই নতুন করে সিবিআই, ইডি বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়বে। কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে বলেছেন, আরও হামলা, গ্রেফতারির জন্য তৈরি থাকতে হবে। বিরোধী জোট যত এগোবে, তত কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহার হবে। তৃণমূলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে খড়্গে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানে তা হয়েছে।” রাজ্যের একশো দিনে কাজের প্রকল্পের টাকা পাওনা আটকে রাখা হচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগের প্রতিধ্বনিও শোনা গিয়েছে খড়্গের কথায়।
সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল বলেন, “এখন আমাদের সামনে কাজ হল, যতখানি সম্ভব মসৃণ ভাবে একজোট হওয়া। তার জন্য দু’টি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক, সমন্বয় কমিটি ও তার অধীনে বিভিন্ন কমিটি গঠন। দুই, আসন সমঝোতার আলোচনা ও সিদ্ধান্ত দ্রুত গতিতে সেরে ফেলা। ‘ইন্ডিয়া’ যাতে বিজেপিকে হারাতে পারে, তার জন্য এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
খড়্গে, ঠাকরে, নীতীশ, স্ট্যালিনদের দাবি, বিরোধীদের জোট দেখে নরেন্দ্র মোদী দিশেহারা বোধ করছেন। তিনি ‘ইন্ডিয়া’-কে বারবার নিশানা করছেন। তিনি ‘ইন্ডিয়া’র বেঙ্গালুরু বৈঠকের দিন দিল্লিতে এনডিএ-র বৈঠক ডেকেছিলেন। মুম্বইয়ে বৈঠকের আগে রান্নার গ্যাসের দাম কমাচ্ছেন। বৈঠকের সময় বিশেষ সংসদ অধিবেশনের দিন ঘোষণা করেছেন।
লালুপ্রসাদ মোদীকে কটাক্ষ করে বলেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে মোদী চন্দ্রলোকে যাবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদেরও শুভকামনা রইল, উনি চন্দ্রলোকে চলে যান।” মোদী মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে অভিযোগ তুলে লালু বলেন, “আমার মতো অনেকের টাকা বিদেশের সুইস ব্যাঙ্কে রয়েছে বলেছিলেন মোদী। তা ফেরত নিয়ে এসে সকলের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা পড়বে বলা হয়েছিল। আমরাও স্বামী, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে মিলে ১১ জন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম, ১১ জন ১৫ লক্ষ টাকা করে পাওয়া যাবে। এক পয়সাও মেলেনি।”