ফের সংগঠনে বদলের ডাক রাহুলের মুখে

উত্তরপ্রদেশে বেধড়ক ভাবে হেরে আরও এক বার সংগঠনের খোলনলচে বদলানোর কথা বললেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গাঁধী। পাঁচ রাজ্যের ফল প্রকাশের পর আজ প্রথম বার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ০৪:৩৩
Share:

উত্তরপ্রদেশে বেধড়ক ভাবে হেরে আরও এক বার সংগঠনের খোলনলচে বদলানোর কথা বললেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গাঁধী। পাঁচ রাজ্যের ফল প্রকাশের পর আজ প্রথম বার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন তিনি। বললেন, ‘‘বিজেপির সঙ্গে আদর্শগত লড়াই জারি থাকবে। উত্তরপ্রদেশে দল একটু নীচে গিয়েছে। দু’টি রাজ্যে হারলেও তিন রাজ্যে কংগ্রেস এগিয়ে। এটাই বাস্তব যে, কংগ্রেসের কাঠামো ও সংগঠনের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’’

Advertisement

সংগঠনে বদল আনার কথা বেশ কিছু দিন ধরেই বলে যাচ্ছেন রাহুল। সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপও করেছেন কিছু কিছু। কিন্তু মোদী-ঝড়ের মুখে উত্তরপ্রদেশে অখিলেশের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট ধুয়ে যাওয়ার পরে দলের অনেক নেতাই মনে করছেন, যা করার খুব দ্রুত করতে হবে।

২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগেও কয়েক রাজ্যের বিধানসভা ভোটে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল কংগ্রেসকে। সে সময়েও কংগ্রেস সহসভাপতি এই একই কথা বলেছিলেন। লোকসভা ভোটে দল তলানিতে নেমে যাওয়ার পরেও কংগ্রেসের অনেক নেতা প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন, রয়েসয়ে সংগঠন গোছানোর সময় নেই আর। ঘুরে দাঁড়াতে হলে অবিলম্বে সংগঠনে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করা উচিত। কিন্তু আজ রাহুলের বক্তব্য শুনে কংগ্রেসের সত্যব্রত চতুর্বেদীর হতাশ মন্তব্য, ‘‘যখন করার ছিল তখনই হল না। এখন আর করে কী হবে?’’

Advertisement

রাহুল অনেক দিন ধরেই একটি নবীন-ব্রিগেড তৈরি করতে চাইছেন। কিন্তু প্রবীণ নেতাদের চাপ সামলে দলে ভারসাম্য রাখতে গিয়েই হোঁচট খাচ্ছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশে হার, গোয়া-মণিপুরে এগিয়ে থেকেও সরকার গড়তে না পারা নিয়ে দল যখন মুষড়ে পড়েছে, সেই সময়ে রাহুল আবার পুরোন কাজে হাত দিতে চাইছেন। তা হল, দলে প্রবীণ নেতাদের মাতব্বরি কমানো।

আরও পড়ুন: আড়াই দিন পরে মুখ খুলে রাহুল বললেন, টাকা আর মেরুকরণে জয়ী বিজেপি

ওড়িশার স্থানীয় নির্বাচনে কংগ্রেস খারাপ ফল করেছে ক’দিন আগে। তার দায় নিয়ে বি কে হরিপ্রসাদ আজ দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। দলীয় সূত্রে খবর, রাহুলই তাঁকে উত্তরপ্রদেশের ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছিলেন।

বেশি আসন পেয়েও গোয়ায় যে ভাবে সরকার গড়তে ব্যর্থ হল কংগ্রেস, তা নিয়ে চাপে রয়েছেন দিগ্বিজয় সিংহ। গোয়ার নেতা বিধায়কদের একটা অংশ প্রকাশ্যেই দুষছেন গোয়ার ভারপ্রাপ্ত কংগ্রেসের এই প্রবীণ নেতাকে। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপির নিতিন গডকড়ী এক দিনের মধ্যেই ৯ জনের সমর্থন আদায় করে নিতে পারলেন, কিন্তু দু’দিন ধরে আলোচনা চালিয়েও দিগ্বিজয় সিংহ কেন সরকার গড়ার জন্য মাত্র ৪ জনের সমর্থন জোটাতে পারলেন না? এ নিয়ে রাহুলের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে, এমনকী, প্রকাশ্যেই এ নিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন রাজ্যের নেতাদের অনেকে। ফলে দলেরই লোকজন বলছেন, হরিপ্রসাদের ইস্তফা আসলে দিগ্বিজয়ের মতো প্রবীণদের প্রতি বার্তা— কিছু করে দেখাতে যখন পারছেন না, তখন নবীনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিন।

কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদক আজ বলেন, ‘‘আমাদের দলে এমনিতেই নেতা বেশি, কর্মী কম। আর সমস্যা হল, দলে অনেক বেশি গণতন্ত্র। সনিয়া ও রাহুল গাঁধী আস্থা রাখেন নেতাদের উপর। কিন্তু ওই নেতারা ডোবালে আঙুল ওঠে গাঁধী পরিবারের দিকে।’’ রাহুল নিজেও আজ বলেছেন, পঞ্জাব, মণিপুর, গোয়ায় দলের আঞ্চলিক নেতারাই সফল হয়েছেন। মেরুকরণ ও অর্থের জোরে বিজেপি ওই দু’রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। গোয়া-মণিপুরে বিজেপি যা করছে, সেটাই তাদের দর্শন। এর বিরুদ্ধেই কংগ্রেসের লড়াই।

মণিশঙ্কর আইয়ার মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের একার পক্ষে নরেন্দ্র মোদীকে ঠেকানো সম্ভব নয়। দরকার একটি জোটের। ফলে সংগঠনকে ঢেলে সাজাই যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি বিজেপি-বিরোধী অন্যান্য দলকেও সঙ্গে নিতে হবে। কংগ্রেস নেতাদের মতে, ২০১৯-এর আগে হাতে সময় কম। রাহুলকে যা করার, দ্রুত করতে হবে। আরএসএস এবং অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপি বুথ স্তর পর্যন্ত সংগঠনকে ঢেলে সেজেছে। বাজিমাত করেছে তাতেই।

বিজেপির কাছে হারের আর একটি কারণের কথাও বলছেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। তা হল, নরেন্দ্র মোদীর মতো একটি বিশাল ব্র্যান্ড রয়েছে বিজেপির। যে কারণে বিধানসভা ভোটেও আঞ্চলিক মুখের উপরে ভরসা করতে হয়নি তাদের। দলকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে হলে রাহুলকেও সেই পর্যায়ে পৌঁছতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement