প্যান্ট গুটিয়ে জলে পা, দুর্গতদের কাছে রাহুল

বন্যা-বিধ্বস্ত শহরটাকে একটু একটু করে গুছিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আজও বৃষ্টি না হওয়ায় সুবিধে হয়েছে প্রশাসনের। বন্যার জল অনেকটাই সরে গিয়েছে। কিন্তু চেন্নাই জুড়ে এখন জমা আবর্জনার পরিমাণ এক লক্ষ টন! এত বড় শহরকে তাই আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা যে বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, মানছেন সকলেই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

চেন্নাই শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৭
Share:

চেন্নাইয়ের বন্যাকবলিত এলাকাগুলি ঘুরে দেখলেন রাহুল গাঁধী। মঙ্গলবার পিটিআইয়ের ছবি।

বন্যা-বিধ্বস্ত শহরটাকে একটু একটু করে গুছিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আজও বৃষ্টি না হওয়ায় সুবিধে হয়েছে প্রশাসনের। বন্যার জল অনেকটাই সরে গিয়েছে। কিন্তু চেন্নাই জুড়ে এখন জমা আবর্জনার পরিমাণ

Advertisement

এক লক্ষ টন! এত বড় শহরকে তাই আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা যে বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, মানছেন সকলেই।

এর মধ্যেই আজ কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী চেন্নাইয়ে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি পরিদর্শনে। তিনি বলেছেন, ‘বন্যার ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি করা একেবারেই উচিত নয়। বরং তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরির যত বেশি মানুষের কাছে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছনো যায়, ততই মঙ্গল।’ বন্যা-বিধ্বস্ত রোডিয়েরপেট, ষন্মুগ নগর, ইচানকাডুর মতো এলাকায় যান রাহুল। কুড্ডালোরে গিয়েও বিলি করেন ত্রাণ। দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে তিনি চেন্নাই পৌঁছন। তার পর গাড়িতে সোজা পৌঁছে যান বন্যা-বিধ্বস্ত মানুষের কাছে। ভিড়ে মিশে যেতে সময় নেননি। কখনও জিনস গুটিয়ে জলে নেমেছেন। কখনও কোলে তুলে নিয়েছেন ছোট্ট শিশুকে। কখনও হাসিমুখে আশ্বাস দিয়েছেন কুড্ডালোরের অসুস্থ বৃদ্ধাকে। বৃদ্ধাও তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন। রাহুলের সঙ্গে ছিলেন এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক মুকুল ওয়াসনিক-সহ তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরির প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা। তামিলনাড়ুর পরে পুদুচেরি যাবেন বলে জানান রাহুল।

Advertisement

কুড্ডালোরের বৃদ্ধাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী। মঙ্গলবার পিটিআইয়ের ছবি।

এ রাজ্যে বৃষ্টির জেরে অনেকেই এখন সহায়সম্বলহীন। কিন্তু মানবিকতা ভুলে যাননি কেউ। তার প্রমাণ এক হিন্দু দম্পতি যাঁরা নিজেদের সদ্যোজাত সন্তানের নাম রেখেছেন সাহায্যকারী মুসলিম ব্যক্তি ইউনুসের নামে।

চেন্নাইয়ে দক্ষিণে উরাপক্কমের বাসিন্দা চিত্রা এবং মোহন প্রায় গলা-জলে আটকে পড়েছিলেন। চিত্রা তখন অন্তঃসত্ত্বা। তাঁদের উদ্ধার করে এমবিএ ছাত্র ইউনুস নিয়ে যান হাসপাতালে। ইউনুসকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওই দম্পতি। শুধু সে দিন চিত্রাকে উদ্ধার করেই মানবিকতা শেষ হয়ে যায়নি ওই তরুণের। আগামী দিনে চিত্রার সন্তানের লেখাপড়ার খরচও বহন করতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। ইউনুসের মুখে উঠে এসেছে সে দিনের কথা: ‘‘আমি নাঙ্গাবক্কমে থাকি। ২ ডিসেম্বরের রাতটা ভুলব না। মনে হচ্ছিল মারাত্মক কিছু একটা ঘটেছে। উরাপক্কম এলাকায় বন্ধুবান্ধবকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিই।’’ বৃষ্টির জেরে তখন উরাপক্কমের ভয়াবহ অবস্থা। তার মধ্যেই এক মহিলার তীব্র আর্তনাদ কানে আসে ইউনুস আর তাঁর বন্ধুদের। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন চিত্রা নামে ওই মহিলার প্রসব-বেদনা শুরু হয়েছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে চিত্রা আর তাঁর স্বামীকে নিয়ে ইউনুস নৌকা করে রওনা দেন পেরাঙ্গলাতুরের দিকে। সেখানেই হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেন চিত্রা। কিন্তু চিত্রা-মোহন তাঁর নামে সন্তানের নামকরণ করেছেন জানার পরে অভিভূত ইউনুস।

দিকে দিকে ত্রাণ বিতরণের মধ্যে মাদ্রাজ হাইকোর্টও আজ তার কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যার জেরে আদালতের ১২০০ কর্মী বিপন্ন। তাঁদের পানীয় জল, চাল, মোমবাতি এবং কম্বল দেওয়া হয়েছে হাইকোর্টের তরফে। —

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement