এআইসিসি-র সদর দফতর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশ্যে মিছিল। ছবি পিটিআই।
গোড়া থেকেই নরেন্দ্র মোদীর অভিযোগ, চাষিদের আন্দোলনের পিছনে হাত রয়েছে কংগ্রেসের। আরও এক কদম এগিয়ে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের দাবি, এতে মদত আছে খলিস্তানি, মাওবাদীদের। এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দাঁড়িয়ে রাহুলের দাবি, ‘‘আগামিকাল যদি (সরসঙ্ঘ চালক) মোহন ভাগবত রুখে দাঁড়ান, তা হলে তাঁকেও সন্ত্রাসবাদী বলবেন মোদীজি।’’ এমএসপি বৃদ্ধির পক্ষে যেখানে সঙ্ঘের কৃষক সংগঠনও সরব, সেখানে এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।
কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রতিবাদে আজ দিনভর সরগরম রইল দিল্লি। রাষ্ট্রপতির হাতে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দু’কোটির বেশি সই-সম্বলিত স্মারকলিপি জমা, মিছিল, ধর্না এ সব তো হলই। রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে মিছিল করে এগোনোর চেষ্টা করতেই প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে আটক করল পুলিশ। ক্ষুব্ধ রাহুলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দেশে আর কোনও গণতন্ত্র নেই। সবটাই কল্পনা।’’ সরকারি সূত্র থেকে কৃষি সংস্কারের পক্ষে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধী, রাহুলের পুরনো বক্তৃতার ভিডিও প্রচার করে বিজেপির পাল্টা প্রশ্ন, কীসের স্বার্থে কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করছেন রাহুল?
একই সঙ্গে রাহুলের অভিযোগ, ‘‘(মোদী) অযোগ্য।... যিনি তিন-চার জন অন্য লোকের হয়ে সরকার চালাচ্ছেন।’’ আচমকা লকডাউন ঘোষণা করে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা ডেকে আনাতেই সেই অযোগ্যতা প্রমাণিত বলে তাঁর দাবি।
কথা ছিল, কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দু’কোটির বেশি সই-সম্বলিত স্মারকলিপি এ দিন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাতে তুলে দেবেন রাহুল। বৃহস্পতিবার দুই সংসদীয় দলনেতা অধীর চৌধুরী ও গুলাম নবি আজাদকে সঙ্গে নিয়ে রাহুল তা করেছেন। কিন্তু তার আগে আচমকা ঠিক হয়, রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার নেতৃত্বে কংগ্রেস নেতারা এআইসিসি-র সদর দফতর থেকে মিছিল করে রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তা শুরু হলে, পুলিশ বাধা দেয়। রাহুল রাষ্ট্রপতির কাছে গেলেও, প্রিয়ঙ্কা-সহ কংগ্রেস নেতাদের আটক করে বাসে তুলে মন্দির মার্গ থানায় নিয়ে যায় দিল্লি পুলিশ। ছাড়া পাওয়ার পরে থানার সিঁড়িতে বসেই প্রিয়ঙ্কার নেতৃত্বে কংগ্রেস নেতা-নেত্রীরা প্রতিবাদ জানানন। ধর্না হয় কংগ্রেস দফতরের বাইরেও। সব মিলিয়ে, ভাই-বোনের নেতৃত্বে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে রাজধানীতে প্রতিবাদী রাজনীতির হাওয়া গরম করে দেয় কংগ্রেস। প্রায় এক মাস আগে কৃষকদের আন্দোলন শুরুর পরে এই প্রথম। এ দিন রাহুল-প্রিয়ঙ্কার পাশে দেখা গেল কংগ্রেসের আজাদ, আনন্দ শর্মা, মণীশ তিওয়ারির মতো ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদেরও। সবাইকে নিয়ে এআইসিসি-র দফতরের লনে বৈঠকও করেন রাহুল। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে তাঁর অভিযোগ, মোদী শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ দু’চারজন মুনাফাখোর পুঁজিপতির রোজগার বাড়াতে কাজ করেন। যাঁরা বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন, তাঁদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলা হবে।’’
বাসে করে থানায় যাওয়ার সময়ে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘কখনও ওঁরা বলেন, বিরোধী হিসেবে আমাদের কোনও শক্তি নেই। কখনও আবার বলেন, আমাদের এত শক্তি যে, দিল্লির সীমানায় এক মাস ধরে কয়েক লক্ষ কৃষক জড়ো করে রেখেছি।’’
রাষ্ট্রপতির কাছে রাহুলের দাবি, অবিলম্বে সংসদের অধিবেশন ডেকে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হোক। ১১টি বিরোধী দলের নেতাও একই দাবি জানিয়েছেন। তিন মাস ধরে সংগ্রহ করা দু’কোটি সই ট্রাকে চাপিয়ে কংগ্রেস নেতারা রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠিয়েছিলেন। পরে তা কৃষি ভবনে পাঠানো হয়। বিজেপি নেতারা সইয়ের সত্যাসত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলায় অধীরের জবাব, ‘‘সরকারের কাছে সিবিআই-ইডি আছে। ফরেনসিক পরীক্ষা করিয়ে নিক।’’ হাথরস-কাণ্ডের প্রায় তিন মাস পরে এই প্রথম রাস্তায় রাহুল-প্রিয়ঙ্কা।