মোদীর ঘরেই ভিন্ন সুর, ‘উত্তম’ বাজেট নিয়ে ক্ষুব্ধ রাহুল-মমতাও

ইংরেজির ফাঁকে মাঝেমধ্যে কিছু হিন্দিতে ব্যাখ্যা। ভোট-রাজ্যের লোকের কথা ভেবে। কখনও শের-শায়েরি করে হাল্কা চালে কুর্নিশ কুড়োনো।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবারতি সিংহ চৌধুরী

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৪
Share:

ইংরেজির ফাঁকে মাঝেমধ্যে কিছু হিন্দিতে ব্যাখ্যা। ভোট-রাজ্যের লোকের কথা ভেবে। কখনও শের-শায়েরি করে হাল্কা চালে কুর্নিশ কুড়োনো।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী-সহ শাসক শিবিরের নেতাদের বাজেট যতই মোহিত করুন, বিরোধী শিবিরে বসে কিন্তু নির্বিকার ছিলেন রাহুল গাঁধী। বেরিয়ে বললেন, ‘‘এ তো শের-শায়েরির বাজেট! ভেবেছিলাম আতসবাজি ফাটবে। একেবারেই দাগ কাটল না। রোজগারের হদিস নেই, কৃষকদের ঋণ মাফ নেই, নোট বাতিলের ধাক্কা কাটানোর দাওয়াই নেই। ভালো বক্তৃতা আছে, কিন্তু ভিশন নেই!’’ বাজেটের ভিত্তিটা নিয়েই গোড়া থেকে প্রশ্ন তুলে আসছেন রাহুল। নোট বাতিলের ধাক্কার প্রভাব কতটা, তার হিসেব না থাকায় বিস্মিত হয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও।

নরেন্দ্র মোদী এই বাজেটকে যতই ‘উত্তম’ আখ্যা দিন, বিরোধী দলের নেতারা তো বটেই, নিজের ঘরেও কিন্তু বাজেট নিয়ে বিরোধের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাজেটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে আরএসএসের সংগঠন। রাহুল যে সুরে বিরোধিতা করেছেন, সেই একই সুরে আরএসএসের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও সরব হয়েছে। রীতিমতো বিবৃতি জারি করে তারা বলেছে, আসল লক্ষ্যপূরণেই ব্যর্থ বাজেট। নোট বাতিলে এত অর্থ আসা সত্ত্বেও সামাজিক খরচে তার প্রভাব নেই। শহর থেকে গ্রামে ফিরে যাওয়া শ্রমিকদের সুরাহা নিয়েও ব্যবস্থা নেই। অসংগঠিত ক্ষেত্রকে অবহেলা করা হয়েছে। কর ছাড়েও সুরাহা পাননি মধ্যবিত্ত। শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, গরিব সকলেই তাই হতাশ।

Advertisement

একই ভাবে সঙ্ঘের আর একটি শাখা ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ’ও বাজেটে বিদেশি বিনিয়োগের রাস্তা প্রশস্ত করতে এফআইপিবি তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে। সংগঠনের নেতা অশ্বিনী মহাজন বলেন, ‘‘চিন আমাদের দেশে কৌশলগত বিনিয়োগ করতে চাইছে। টেলিকম ক্ষেত্র থেকে উত্তর-পূর্বের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় তারা বিনিয়োগ করতে চায়। এই পরিস্থিতিতে এফআইপিবি তুলে দিয়ে সব অটোমেটিক রুটে নিয়ে যাওয়া একেবারেই কাম্য নয়। সরকারকে এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষাতেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ করেনি সরকার।’’

এ তো গেল সঙ্ঘ। গেরুয়া শিবিরের শরিক শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরেও বাজেটের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘বিজেপি গত বারের বাজেটের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। এ বারে নতুন বাজেট পেশের কী যৌক্তিকতা? নোট বাতিলের ধাক্কা কোনও ভাবেই মেটানো সম্ভব নয়। কৃষক, যুবক, প্রবীণ, মহিলাদের একেবারে অবজ্ঞা করা হয়েছে বাজেটে।’’ এমনকী, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেও আজ বাজেটের সমালোচনা করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তাঁর মতে, বিহার ও পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লব কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে নীরব বাজেট।

সরকারের ঘরেই যখন এমন প্রতিক্রিয়া, বিরোধীরা তো সমালোচনায় মুখর হবেনই! তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন এই বাজেটকে ‘সূত্রহীন, লাভহীন, ভিত্তিহীন, লক্ষ্যহীন, কর্মহীন এবং হৃদয়হীন’ বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন! তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে সরকার বিশ্বাসযোগ্যতাই হারিয়ে ফেলেছে, তারা দেশের ভবিষ্যতের জন্য কোনও রাস্তা দেখাতে পারেনি। টাকা তোলার জন্য করদাতাদের এখনও কিছু নিষেধাজ্ঞা মানতে হবে। অবিলম্বে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত।’’ নোট বাতিল সংক্রান্ত তথ্য নেই কেন, সেই প্রশ্ন তুলে মমতার অভিযোগ, জেটলির বাজেট ‘‘শুধু ফাঁকা বুলিতে ভর্তি!’’ মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েও সিপিএমের পলিটব্যুরোও প্রায় একই সুরে বলেছে, ‘দেশ যখন নোট বাতিলের ধাক্কায় হিমশিম খাচ্ছে, সেই সময়ে
অর্থমন্ত্রী এমন স্ববিরোধী বাজেট করেছেন, যা শ্রমিক শ্রেণির
ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দেবে’। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, ‘‘বড়লোকদের সুবিধা দিয়ে প্রত্যক্ষ কর কমছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আম আদমির বোঝা বাড়িয়ে পরোক্ষ কর বাড়বে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এটাই মোদীর অচ্ছে দিন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement