বালি খাদান। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বিধানসভা এলাকায় প্রকাশ্যেই রমরমিয়ে চলছে বেআইনি বালি খাদান—অভিযোগ তুললেন আম আদমি পার্টির (আপ) পঞ্জাবের প্রধান রাঘব চাড্ডা। শনিবার প্রকাশ করা একটি ভিডিয়োয় তা ‘হাতেনাতে দেখানো’-র দাবি করেছেন তিনি। অভিযোগ করেছেন, এতে প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নীর।
ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে, আপ-এর তরুণ ওই নেতা চন্নীর বিধানসভা এলাকায়, চামকৌর সাহিবের জিন্দাপুর গ্রামের কাছে একটি নদীর পাড় ধরে চলেছেন। পাশে যন্ত্র দিয়ে নদীর বালি বোঝাই করা হচ্ছে ট্রাকে। রাঘব দাবি করেন, তাঁদের হিসাব মতো আটশো থেকে হাজারটি ট্রাকে করে বালি পাচার হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের রাঘব বলেন, ‘‘চরণজিৎ সিংহ চন্নীর নিজের এলাকায় বেআইনি বালি খাদানের কারবার ফাঁস হয়ে গেল। এটা একটা বিরাট ঘটনা। পঞ্জাবের রাজনীতিকে নাড়িয়ে দেবে।’’ দাবি করেন, এক বনাধিকারিক সম্প্রতি চিঠি দিয়ে জিন্দাপুরে বেআইনি খাদানের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই আধিকারিক চিঠি দিয়েছিলেন ২২ নভেম্বর। এক দিন পরেই তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয়।’’
বেআইনি বালি খাদান পঞ্জাবের রাজনীতিতে বড় বিষয়। মদ এবং বালির বেআইনি কারবারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে সম্প্রতি কংগ্রেস সরকার ‘মিশন ক্লিন’ ঘোষণা করেছে। গত জুনে শিরোমণি অকালি দলের এক নেতাও ভাটিন্দায় ফেসবুক লাইভ করে গুরু নানক দেব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বেআইনি ভাবে ট্রাকে বালি বোঝাই করার অভিযোগ তোলেন। আকালি দলের তরফে কংগ্রেসের অর্থমন্ত্রী মনপ্রীত সিংহ বাদল ও তাঁর শ্যালকের দিকে আঙুল তোলা হয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ সোনিয়া গাঁধীকে চিঠি
লিখে অভিযোগ করেছিলেন, কংগ্রেসেরই অনেক বিধায়ক, এমনকী মন্ত্রীও বেআইনি বালি খাদানের সঙ্গে জড়িত। তবে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠে, পদে থেকেও নিজে কেন কিছু করেননি। পরে চন্নীর মন্ত্রিসভায় বালি খাদান দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাণা গুরজিৎ সিংহকে আনাতে আপত্তি ছিল পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর।
এ দিন রাঘব উল্লেখ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার
সময় চন্নী ঘোষণা করেছিলেন, বালি-মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত কেউ যেন তাঁর ধারেকাছে না ঘেঁষেন। আপ-নেতার কথায়, ‘‘কিন্তু এখানে আমরা তো দেখছি মাফিয়ারা শাসকের রীতিমতো মদত পাচ্ছে।’’ বেআইনি কারবারের উপরে সরকারের নজরদারির দাবি উড়িয়ে পরে চণ্ডীগড়ে
একটি সাংবাদিক বৈঠকে
রাঘব বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি দাবি করেন, মাফিয়াদের সঙ্গে তাঁর মোলাকাত হয়নি, তা হলে আজ তো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে তিনি নিজেই আসলে মাফিয়া।’’
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বিধানসভা ক্ষেত্রে বালি চুরি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আপ-এর প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও। তাঁর টুইট— ‘মাথার উপর হাত না থাকলে বা ভাগের-কারবার না হলে কি এমনটা আদৌ সম্ভব? অনেকেই
চন্নীকে সব থেকে বড় বালি মাফিয়া বলেন। আমি আগে বিশ্বাস করতাম না। তবে এ বার তাঁর জনতার প্রশ্নের জবাব দেওয়া দরকার।’’ এমন বেআইনি খাদান রাজ্যে মোট কত রয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাঘবও।