এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মোকাবিলায় চাই রাফাল, আদালতে জানাল কেন্দ্র। —ফাইল ছবি
রাফাল চুক্তির নথিই চুরি গিয়েছে! তাও আবার খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অফিস থেকে! বুধবার রাফাল শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে এমনই বিস্ফোরক তথ্য জানাল কেন্দ্র। খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে এমন স্পর্শকাতর নথি চুরির খবর সামনে আসতেই বিস্মিত সংশ্লিষ্ট সব মহল। অ্যাটর্নি জেনারেলের দাবি, বিরোধীরা এই চুরি যাওয়া নথিকে আদালতে প্রমাণ হিসেবে দাখিল করেছে, যা ফৌজদারি অপরাধের সমান। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের সওয়াল, ‘‘পাকিস্তানের এফ-১৬ মোকাবিলা করতে এবং দেশকে সুরক্ষিত রাখতেই রাফাল যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন।’’ মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ মার্চ।
ফ্রান্সের সংস্থা দাসো এভিয়েশনের সঙ্গে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এই চুক্তিতেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এবং আদালতের পর্যবেক্ষণে তদন্তের দাবিতে একাধিক মামলা দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে। সেই মামলায় গত ১৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রকে ক্লিনচিট দেয় সুপ্রিম কোর্ট। মামলাকারীদের সব কটি আর্জিই খারিজ হয়ে যায়। এর পর রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি নিয়ে ফের মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলাতেই বুধবার নতুন করে শুনানি শুরু হয়েছে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বেঞ্চে।
শুনানিতে বুধবার কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল আদালতে বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দফতর থেকে রাফালের গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি গিয়েছে। কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত কোনও কর্মী চুরির সঙ্গে যুক্ত। এই গোপনীয় নথি প্রকাশ্যে আসতে পারে না। অথচ সেই নথিই আদালতে প্রমাণ হিসেবে দাখিল করেছে মামলাকারীরা। এটা আদালত অবমাননা এবং অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের পরিপন্থী। প্রধান বিচারপতি তখন জানতে চান, এর বিরুদ্ধে সরকার কী পদক্ষেপ করেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাফাল বোফর্স নিয়ে আপনার জ্ঞানভাণ্ডার ঝালিয়ে নিন
আরও পডু়ন: ৮০ শতাংশ বোমাই লক্ষ্যে আঘাত করেছে, কেন্দ্রকে রিপোর্ট দিল বায়ুসেনা
অন্যতম মামলাকারী প্রশান্ত ভূষণ পাল্টা যুক্তি দেন, কয়লা কেলেঙ্কারি, টুজি কেলেঙ্কারির মতো মামলায় এমন বহু নথি আদালতে পেশ হয়েছে, যেগুলি বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া সরকারি নথি। সেগুলিও গোপন নথি ছিল। অথচ আদালতে পেশ হলেও তখন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। প্রধান বিচারপতিও প্রশ্ন তোলেন, কোনও মারাত্মক অপরাধ হলেও তখন কি জাতীয় নিরপত্তার ছাতার তলায় আশ্রয় নেওয়া যায়?
গত ২৭ জানুয়ারি ভারতের আকাশ সীমায় ঢুকে পড়েছিল একাধিক পাক যুদ্ধবিমান এফ-১৬। সেই বিমান তাড়া করেছিল ভারতীয় মিগ-২১, প্রযুক্তিগত ভাবে যা পাকিস্তানের এফ-১ ৬-এর চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। এ দিনের শুনানিতে এই বিষয়টিই তুলে ধরে মামলাকারীদের নিশানা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন্, ‘‘পাকিস্তানের এফ-১৬ সম্প্রতি আমাদের দেশের মাটিতে ঢুকে বোমা বর্ষণ করেছে। রাফাল ছাড়া এই যুদ্ধবিমানের হামলা প্রতিহত করা সম্ভব নয়।’’ যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল এও বলেছেন, ছ’য়ের দশকের মিগ-২১ যুদ্ধবিমান এফ-১৬-এর বিরুদ্ধে খুব ভাল কাজ করেছে।
আরও পডু়ন: বোমাবর্ষণের পরও অক্ষত জইশের মাদ্রাসা! উপগ্রহের পাঠানো ছবি ঘিরে ধন্দ
বিরোধী এবং মামলাকারীরা যে এই সব করে আসলে রাফাল যুদ্ধবিমান হাতে পাওয়ার প্রক্রিয়াকেই বিলম্বিত করে দিচ্ছে, সেটাও আদালতকে বোঝাতে চেয়েছেন তবে অ্যাটর্নি জেনারেল। তাঁর যুক্তি, ‘‘জরুরি প্রয়োজনের কথা ভেবেই রাফাল নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়েছিল। প্রথম ব্যাচ সেপ্টেম্বরেই হাতে পাওয়া যেত। তার জন্য ৫২ জন পাইলটকে ফ্রান্সে পাঠানো হবে দু’-তিন মাসের প্রশিক্ষণের জন্য। আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই এত কিছু করা হচ্ছে। অথচ আমরাই আক্রান্ত হচ্ছি।’’
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)