প্রতীকী চিত্র।
বুধবারের বিকেলে এআইসিসি-র সদর দফতরে ঢোকার মুখে নিরাপত্তা কর্মীর সহাস্য প্রশ্ন— “কার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন? কোনও নেতাই তো নেই!”মাইল খানেক দূরে বিজেপির সদর দফতরে তখন সাজো সাজো রব। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ সন্ধ্যায় পৌঁছবেন। দীপাবলির আগেই বিহার জয়ের উৎসবে আলো জ্বলে উঠেছে। আকবর রোডে এআইসিসি-র সদর দফতর শুনশান।
বিহারের ভোটের ২৪ ঘণ্টা পরে শুধু সদর দফতরে নয়। কংগ্রেসের ‘নেতৃত্বহীনতা’ নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল ঘরে-বাইরে। নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়লেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। দলের অন্দরে প্রশ্ন, আর কবে কংগ্রেস আত্মসমীক্ষা করবে? আর কত দিন বিজেপিকে এ ভাবে ‘ওয়াকওভার’ দেওয়া চলবে? এমন নেতৃত্বহীন অবস্থায় কংগ্রেস আর কত দিন চলবে?
বিহারের ভোটে ৭০টি আসনে লড়ে মাত্র ১৯টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের এই খারাপ ‘স্ট্রাইক রেট’-এর জন্যই মহাজোট ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। অন্যান্য রাজ্যে ৫৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি ৪১টিতে জিতেছে। তার মধ্যে ৩১টি আসনই তারা কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। সনিয়া-প্রিয়ঙ্কা বিহার বা অন্য কোথাও প্রচারে যাননি। রাহুল বিহারে মাত্র ৮টি জনসভা করেছিলেন।
আরও পডুন: বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ওয়েইসি লড়বেন বঙ্গে
হিসেব বলছে, রাহুল যে ৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে জনসভা করেছিলেন, তার মধ্যে মাত্র ৩টিতে কংগ্রেস তথা মহাজোট জিতেছে। দলের নেতাদের আশঙ্কা, বিহারের পরে পশ্চিমবঙ্গে বাম, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র সঙ্গে আসন নিয়ে দর কষাকষি করতে অসুবিধা হবে। পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে দর কষাকষিতে কংগ্রেস গত বিধানসভার নিরিখে ৬০ শতাংশ আসনের দাবি করে বসেছে। শুধু সেখানে নয়। বিহারের অভিজ্ঞতা দেখে তামিলনাড়ুতে ডিএমকে কংগ্রেসকে খুব বেশি আসন ছাড়তে চাইবে বলে মনে হয় না।
এনসিপি, বামের মতো শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে আজ বিজেপি নেতারাও মন্তব্য করেছেন, কংগ্রেসের ‘আত্মসমীক্ষা’ প্রয়োজন। এনসিপি-র মজিদ মেমনের মতে, “কংগ্রেসের নিজেদের দুর্বলতা বোঝা উচিত। কংগ্রেস এত আসনে হেরেছে বলেই মহাজোট হেরেছে।” সিপিআই-এমএলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যর যুক্তি, কংগ্রেসকে এখনকার কাজ দিয়ে নিজের জোর প্রমাণ করতে হবে। বিজেপি মুখপাত্র গোপালকৃষ্ণ আগরওয়ালের ঠেস, “মুশকিল হল কংগ্রেস আত্মসমীক্ষায় বিশ্বাস করে না।”
লকডাউনের মধ্যেই কংগ্রেসের ২৩ জন বিক্ষুব্ধ নেতা সনিয়ারকে চিঠি লিখে শীর্ষ নেতৃত্বে সক্রিয়তার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, দ্রুত সভাপতির পদে নির্বাচন হবে। যার অর্থ রাহুল ফের সভাপতি পদে ফিরবেন। কিন্তু সেটা কবে হবে, তার এখনও উত্তর মেলেনি।
বিহারের প্রচারের মধ্যেই রাহুল এক দিন হিমাচল প্রদেশের শিমলায় প্রিয়ঙ্কার কটেজে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। বিহার ভোটের ভরাডুবির পরে রাহুল জয়সলমেরে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন বলে রটে যায়। রাজস্থানের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বুধবার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে রাহুলের একটি বেসরকারি চার্টার্ড বিমানে জয়সলমেরে পৌঁছনোর কথা ছিল। প্রথম দিন সূর্যগড় প্যালেস হোটেলে রাত কাটিয়ে পরের দিন মরুভূমির মধ্যে তাঁবুতে থাকার রোমাঞ্চ উপভোগের পরিকল্পনা ছিল। রাহুলের ঘনিষ্ঠ শিবির থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, পুরোটাই মিথ্যে রটনা। রাহুল দিল্লিতে রয়েছেন। দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
রাহুলের ঘনিষ্ঠ শিবিরের যুক্তি, শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনে কংগ্রেস মূলত কঠিন আসনগুলি লড়েছিল। লোকসভা ভোটের নিরিখে কংগ্রেসের ভাগের ৭০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬৭টি আসনই এনডিএ জিতেছিল। কংগ্রেস শিবিরের প্রশ্ন, কেন আসন সমঝোতার সময় দলের নেতারা কঠিন আসনগুলিই মেনে নিলেন? কংগ্রেসের নিজের প্রার্থী বাছাই নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। তা সত্ত্বেও কেন প্রার্থী বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান অবিনাশ পাণ্ডেকে বিহারে রেখে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিহারের কংগ্রেস নেতা কিশোর ঝা-র অভিযোগ, বিহারের এক অঞ্চলের নেতাকে আর এক অঞ্চলে টিকিট দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ে জাতপাতের সমীকরণও মানা হয়নি। তারই ফল ভুগতে হয়েছে নির্বাচনে।