বাঘ-সুরক্ষা ও গণনার পন্থা নিয়ে থাকছে প্রশ্ন

ন্যাশনাল টাইগার কনজ়ারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ) বা জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮— এই চার বছরে দেশে মোট ৪২৩টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০২:৩৯
Share:

গোটা দেশে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩৩ শতাংশ। যা দেখিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন, ভারত বাঘের অন্যতম নিরাপদ আশ্রয়। শুধু তা-ই নয়, বাঘ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলিউডি সিনেমার কথা টেনে এনেছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দেশে সত্যিই বাঘের নিরাপত্তা কতটা? নৃশংসতার সর্বশেষ উদাহরণ সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের পিলিভিটে বাঘিনিকে পিটিয়ে খুন।

Advertisement

ন্যাশনাল টাইগার কনজ়ারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ) বা জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮— এই চার বছরে দেশে মোট ৪২৩টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে আছে ৭৩টি চোরাশিকারের ঘটনা। এর বাইরে ৮৭টি মৃত্যুকে সন্দেহজনক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেগুলি চোরাশিকার কি না, নিশ্চিত করে বলা যায়নি। এর মধ্যে সব থেকে কম চোরাশিকার হয়েছিল ২০১৫ সালে (১২টি)। সে-বার একটিও সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনা ছিল না। ২০১৮ সালে ১৩টি চোরাশিকারের ঘটনা ঘটলেও সন্দেহজনক মৃত্যুর সংখ্যা ৫১। গত বছর এ রাজ্যের লালগড়ে একটি বাঘকে পিটিয়ে ও বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়েছিল। এই তথ্য দেখিয়েই অনেকের প্রশ্ন, সংখ্যা বাড়লেও বাঘের নিরাপত্তা বেড়েছে কি?

বাঘ গোনার পদ্ধতি নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও এনটিসিএ এবং বাঘ-বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, শুমারিতে সর্বাধিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

Advertisement

এক সময় বাঘের পায়ের ছাপ দেখে (পাগ মার্ক) শুমারি হত। কিন্তু পরবর্তী কালে সেই পদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে শুমারির ক্ষেত্রে ক্যামেরা-ফাঁদ এবং‌ তার পাশাপাশি শিকারের সুলভতা,
কিছু ক্ষেত্রে অক্ষত পায়ের ছাপ-সহ নানাবিধ উপকরণ মিলিয়ে গণনা করা হয়। বাঘ-বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী জানান, সুন্দরবনে নরম মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ বদলে যায়। তা ছাড়া পায়ের ছাপ সর্বদা নির্ভুল ভাবে লক্ষ করা যায় না। বর্তমানে বাঘের যাতায়াতের পথে ক্যামেরা লাগানো হয়। প্রতিটি বাঘের ডোরাকাটা দাগ আলাদা হয়। তাই সেই ছবি দেখে আলাদা আলাদা ভাবে বাঘ শনাক্ত করা সম্ভব। সেই সঙ্গে শিকার করা, শিকারের সুলভতা ইত্যাদি দেখা হয়। মধ্য ভারত, মহারাষ্ট্রের শক্ত মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ অক্ষত থাকায় সেটাও কাজে লাগে।

এই পদ্ধতির সমালোচকেরা বলছেন, ক্যামেরা কিছু জায়গায় বসানো হয়। ছোট এলাকার সমীক্ষার উপরে নির্ভর করে বাকি এলাকার বাঘের সংখ্যা আন্দাজ করা হয়। রাশিবিজ্ঞানের নিয়মে এই তত্ত্বে ভুল থেকে যেতে পারে। যদিও এনটিসিএ-র কর্তাদের মতে, প্রতিটি বনাঞ্চলে এ বার এমন ভাবে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল, যাতে সামগ্রিক বড় এলাকার আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে। শুধু ছবি নয়, বিষ্ঠা, পায়ের ছাপের মতো বিষয়ও দেখা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement