কাশেম সোলেমানি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের নিহত সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেমানি দিল্লিতেও জঙ্গি হামলায় মদত দিয়েছেন বলে দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে দিল্লির কূটনৈতিক অস্বস্তি আরও বাড়ল বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
গত কাল ইরাকে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন সোলেমানি। ইরানের রেভোলিউশারি গার্ডের অন্যতম নেতা সোলেমানি পশ্চিম এশিয়ায় একাধিক হামলায় মদত দিয়েছিলেন বলে গত কালই দাবি করেছিল আমেরিকা। আজ ফ্লরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটানো সোলেমানির জঘন্য নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নয়াদিল্লি ও লন্ডনে জঙ্গি হামলার ছকেও মদত দিয়েছিলেন।’’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিয়ে এখনও মুখ খুলতে রাজি নয় দিল্লি। কিন্তু কূটনীতিকদের একাংশের মতে, ২০১২ সালে দিল্লিতে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স অ্যাটাশের স্ত্রীর গাড়িতে বিস্ফোরণের দিকেই ইঙ্গিত করছেন ট্রাম্প। আততায়ীরা চুম্বক দিয়ে ওই গাড়িতে বিস্ফোরক আটকে রেখেছিল। ডিফেন্স অ্যাটাশের স্ত্রী, তাঁর গাড়িচালক ও দুই পথচারী আহত হন। সে দিনই জর্জিয়ায় ইজ়রায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চেষ্টা করা হয়। এর পরে ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, এই দু’টি ঘটনার পিছনেই ইরানের মদত রয়েছে।
কূটনীতিকেরা জানাচ্ছেন, দিল্লির ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। সৈয়দ মহম্মদ আহমেদ কাজ়মি নামে এক ভারতীয় সাংবাদিককে ওই ঘটনায় গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ। পরে তিনি জামিন পান। যে পাঁচ ইরানি হামলা চালিয়েছিল তাদের হয়ে নজরদারি করার অভিযোগ উঠেছিল কাজ়মির বিরুদ্ধে। দিল্লি পুলিশ সূত্রে আরও দাবি করা হয়, যে পাঁচ ইরানি হামলা চালিয়েছিল তারা ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড বাহিনীর সদস্য। কূটনীতিকদের মতে, ওই ঘটনার সঙ্গে ইরান সরকারের যোগ এখনও প্রমাণিত হয়নি। ফলে ভারত সরকারের পক্ষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলা কঠিন।
কূটনীতিকেরা আরও জানাচ্ছেন, ইরানের সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা আনা এখন ভারতের স্বার্থের অনুকূল নয়। কারণ, চাবাহার বন্দরে বিপুল বিনিয়োগ করেছে দিল্লি। আবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপে ভারত এখন ইরান থেকে তেল কেনা কমালেও পরে আবার তেলের জন্য তেহরানের উপরে নির্ভরতা বাড়ানো হতে পারে। আবার আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি পাকা করতে এক বছর ধরে চেষ্টা করছে ভারত। তাই রাশিয়ার মতো কয়েকটি দেশ সোলেমানি-হত্যার কড়া সমালোচনা করলেও সে পথে হাঁটেনি ভারত। অন্য দিকে গত কালই পাকিস্তান-সহ বেশ কয়েকটি দেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে পাক সেনাপ্রধান কমর বাজওয়ারও। পাক সেনার মার্কিন প্রশিক্ষণের প্রকল্পও ফের শুরু করা হয়েছে। কূটনীতিকদের মতে, পাকিস্তান-সহ মুসলিম বিশ্বের কিছু দেশকে পাশে রাখার কৌশল নিয়েছে আমেরিকা। ফলে পরোক্ষে ভারতের উপরে চাপ বেড়েছে। দিল্লির হামলায় সোলেমানির জড়িত থাকার কথা বলেও ট্রাম্প চাপ বাড়াতে চেয়েছেন।