উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। —ফাইল চিত্র।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে চলতি বিতর্কের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরাখণ্ডই একমাত্র রাজ্য, যারা ইতিমধ্যেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিলের খসড়া প্রস্তুত করে ফেলেছে। এই আবহে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ধামীর সাক্ষাৎ ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রহ তৈরি হয়েছে সব মহলে।
এ দিকে কেন্দ্রের তৎপরতা দেখে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রসঙ্গে আলোচনা করতে দিল্লিতে ৭ জুলাই শিখ সমাজের বৈঠক ডেকেছে দিল্লি শিখ গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে প্রাত্যহিক জীবনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় মুসলিমদের মতোই ভুগছে শিখ সমাজও। শিরোমণি অকালি দলের একাংশ ওই আইনের বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন। এ ছাড়া একাধিক শিখ সংগঠনের পক্ষ থেকে নিজেদের প্রচলিত রীতিনীতি ও প্রথাকে বাঁচাতে শিখ পার্সোনাল ল’বোর্ড গঠনের দাবি তোলা হয়েছে।
যদিও বিজেপি সূত্রের মতে, শিখ সমাজের আশঙ্কা অমূলক। ওই আইন মূলত বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ও উত্তরাধিকার— এই তিনটি বিষয়কে মাথায় রেখে প্রণীত হবে। তাই শিখ সমাজে যে আনন্দ বিবাহ আইন রয়েছে, তাতে কোনও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শিখ সমাজের ওই আইনে বিয়ে নথিভুক্তিকরণের কথা বলা হয়েছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতেও একই ভাবে বিয়ে নথিভুক্তিকরণের উপরে জোর দেওয়া হবে। তবে শিখ সমাজের ওই আইন বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নীরব থাকায় ওই ব্যাপারে নিষ্পত্তির জন্য ভারতীয় দেওয়ানি বিধির সাহায্য নিয়ে থাকে শিখ সমাজ।
বিজেপি সূত্রের মতে, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে পুরনো ব্যবস্থা রেখে দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেছে ধামী সরকারের খসড়া বিধি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সরকার নীরব থাকায় শিখ সমাজের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছেন দিল্লি শিখ গুরুদ্বারা ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি হরমীত সিংহ কালকা। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের নীরবতার ফলে আইন ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তাই এ নিয়ে আলোচনায় বসে পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ওই আইন কী বলছে, তা-ও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’’
গত কাল রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন ধামী। পরে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করে মোদীকে উত্তরাখণ্ডে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান তিনি। বৈঠকের শেষে ধামী দাবি করেন, জোশীমঠের পরিস্থিতি, চার ধাম যাত্রা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। কবে তাঁর রাজ্যে দেওয়ানি বিধি রূপায়িত হবে সে বিষয়ে নীরবই থাকেন তিনি। এ দিকে আজ গুয়াহাটি আইআইটি-র একটি অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বলেন, ‘‘দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার সময় এসে গিয়েছে।’’
অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে কেন্দ্র কোন বিষয়গুলি আনার কথা ভাবছে ,তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আজ ফের সরব হয়েছেন বিরোধী নেতারা। অধিকাংশ বিরোধী দলের মতে, সরকারের উচিত অবিলম্বে এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা। বিরোধী সাংসদ কপিল সিব্বলের প্রশ্ন, ‘‘সংবিধানের ১৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে প্রচলিত প্রথাই হল আইন। তা হলে কি ধরে নিতে হবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এনে সেই প্রচলিত প্রথায় ধাক্কা দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার? সরকার নীরব বলেই ধোঁয়াশা বাড়ছে।’’
উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেস নেতা হরিশ রাওয়তের মতে আবার গোটাটাই লোক দেখানো। তাঁর মতে, ‘‘একই দেওয়ানি বিধি নিয়ে এক দিকে উত্তরাখণ্ড সরকার অন্য দিকে কেন্দ্র দু’পক্ষই বিল আনছে। সবাই জানে কোনও একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য বিল আনলে রাজ্যের বিলের গুরুত্ব থাকে না। সে ক্ষেত্রে উত্তরাখণ্ড সরকারের বিল আনার কী প্রয়োজন! সবই ভোটের লক্ষ্যে লোক দেখানো পদক্ষেপ।’’