পুরীর জগন্নাথ মন্দির। —ফাইল চিত্র।
পুরীর মন্দিরের প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, স্নানযাত্রার পরে ১৫ দিন ধরে জ্বরে অসুস্থতার লীলা সম্পন্ন করেন জগন্নাথদেব। এর দু’দিন বাদে রথযাত্রা। মাঝে মন্দিরে জগন্নাথদেবের বিগ্রহে রূপটানের অনুষ্ঠান নেত্র উৎসব ও নব যৌবন উৎসব। অসুস্থতার লীলা শেষে নব যৌবন বেশে শ্রী মন্দিরের রত্নবেদীতেই ভক্তের মুখোমুখি হন প্রভু জগন্নাথ। পুরীর মন্দিরের এই চিরাচরিত রীতিতে এ বছর ব্যত্যয় ঘটেছে।
শ্রী মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মাধব পূজাপান্ডা বলেন, “তিথির ফেরে এ বার একই দিনে নেত্র উৎসব, নবযৌবন বেশ এবং রথযাত্রার অনুষ্ঠান পড়েছে। স্নানযাত্রার ১৫ দিন বাদেই আষাঢ়ের শুক্লা দ্বাদশী বা রথযাত্রার তিথি ফলে সেবাযেতরা একযোগে ঠিক করেছেন এ বছর আর মন্দিরে ঢুকে ভক্তেরা প্রভুর নব যৌবন বেশ দর্শন করবেন না।জগন্নাথদেবের পহুন্ডি বিজে বা রথে আরোহণের অনুষ্ঠান দেখার টিকিটও বিক্রি করা হবে না।” তবে একই দিনে এত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। ফলে,
জগন্নাথদেবের রথের রশিতে টান পড়তেই বিকেল পাঁচটা বা আরও বেশি বাজতে পারে। মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েত রামচন্দ্র দয়িতাপতি, রাজেশ দয়িতাপতিরা বলছিলেন, “রথ টানা শুরু হতে বেশি দেরি হলে সূর্যাস্তের সময়ে কিছু দূর এগিয়ে রথ থেমে পথে অপেক্ষা করবে। পরের দিন আবার রথ টানা হবে। এটা মাথায় রেখেই রাজ্য প্রশাসন দু’দিন ধরে রথযাত্রা সামলানোর ব্যবস্থা করে রাখছেন। তবে সবই জগন্নাথের ইচ্ছা! আচার-অনুষ্ঠান শেষ হয়ে কখনও প্রভু জগন্নাথের রথ চলতে শুরু করবে তা প্রভুই জানেন।”
অতীতে অবশ্য কোনও কোনও বার সব আচার সম্পন্ন করে রথ চলা শুরু করতে দেরি হয়েছে এমন ঘটেছে। আগে রথ চলার রাস্তার মাঝখানে সরদা নদী ছিল, সেই নদী পেরিয়ে যেতেও সময় লাগত।এখন নদী বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনটি রথ তিন কিলোমিটার দূরে গুন্ডিচা মন্দিরে দিনের দিনই পৌঁছে যায়। তবে দেরি হওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে। ১৯০৯ এবং ১৯৭১ সালেও একই দিনে নবযৌবন দর্শন এবং রথযাত্রা পড়েছিল। মাহেশের রথ সাধারণত পুরীর রথ ছাড়ার সঙ্কেত মিললেই পথে নামে। তবে মাহেশের মন্দিরের সম্পাদক পিয়ালকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, “এ বার বিকেল চারটে নাগাদই রথযাত্রা শুরু আমাদের লক্ষ্য। পুরী বা মাহেশ কোথায় কখন রথ টানা হবে, তা জগন্নাথদেবের ইচ্ছা।” মাহেশের মন্দিরে নব যৌবন দর্শনও রথযাত্রার আগের দিন সম্পন্ন হবে।