কৃষিপ্রধান দেশ হিসাবে পরিচিত হলেও, এই ভারতেই ফসলের ন্যায্য দাম পান না কৃষকরা। ন্যায্য পাওনার দাবিতে কম মিটিং মিছিল করতে হয় না তাঁদের। তাতে গালভরা প্রতিশ্রুতি মেলে বটে, কিন্তু পেট ভরে না।
তবে খুব শীঘ্র এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন কৃষিজীবী মানুষরা। তাও আবার শুধুমাত্র কৃষিবর্জ্য বেচেই। অবিশ্বাস্য ঠেকলেও, এমনই এক উপায় বার করে ফেলেছেন পঞ্জাবের ভূমিপুত্র সুখমীত সিংহ।
টাকা দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিবর্জ্য কেনেন সুখমীত। আর তা দিয়ে তৈরি করেন জৈব জ্বালানি। এতে পরিবেশ দূষণও যেমন কমে, আবার বাড়তি কিছু রোজগারও হয় কৃষিজীবী মানুষের। বাংলার কৃষকদের কাছে এখনও পর্যন্ত পৌঁছতে না পারলেও, পঞ্জাবে ইতিমধ্যেই নাম করে ফেলেছেন সুখমীত।
দেশের শস্যভাণ্ডার হিসাবে পরিচিত পঞ্জাব। সেখানেই জন্ম সুখমীত সিংহের। নামী কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তিনি। সেরে ফেলেন এমবিএ-ও। তার পর চাকরি জুটিয়ে ফেলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সংস্থায়।
কিন্তু কর্পোরেট কালচারের বাইরে বেরিয়ে নিজের লোকেদের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন সুখমীত। কৃষকদের কথাই প্রথমে মাথায় আসে তাঁর। ধান ও গম রফতানির তালিকায় বিশ্বের অন্যতম প্রধান দেশ ভারত। কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাবে এই কৃষিকাজই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে কোথাও কোথাও।
চারা রোপণ থেকে ফসল কাটা— এই পর্যন্ত ঠিকঠাক চললেও, তার পরেই সমস্যা দেখা দেয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। ফসল কাটার পর জমিতে পড়ে থাকা খড়কুটো, ফসলের অবশিষ্টাংশ তথা বর্জ্য নিয়ে বিপাকে পড়েন কৃষকরা। একবারে ঝামেলা মেটাতে অনেকে তাই কৃষিবর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেন, যাতে আলাদা করে লোক লাগিয়ে জমি সাফ করতে না হয়।
কিন্তু তাঁদের এই পদক্ষেপ মারাত্মক ক্ষতি করছে পরিবেশের। কৃষিবর্জ্য জ্বালানোর ফলেই গত কয়েক বছর ধরে কালো ধোঁয়া ও কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন ক্ষতিকারক ক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ আচমকাই বেড়ে যাচ্ছে অনেকটা। তাতে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ।
এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে কৃষিবর্জ্য থেকে জৈব জ্বালানি তৈরির কথা মাথায় আসে সুখমীত সিংহের। ডেনমার্ক-সহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে ঢের আগে থেকেই এই প্রথা চালু রয়েছে। খড় বা গমের শিসের পড়ে থাকা অংশ প্রথমে জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। তার পর সেদ্ধ হয় ২০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
তার পর দলা পেকে যাওয়া ওই অবশিষ্টাংশ বড় একটি সিলিন্ডার ট্যাঙ্কে রাখা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর তাতে মেশানো হয় বিশেষ ধরনের উৎসেচক। তার পর রাসায়নিকের মাধ্যমে সেটিকে গেঁজিয়ে তোলা হয়। ইথানলে দ্রবীভূত করে আরও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা হয় ওই মিশ্রণটিকে।
এই কাজের জন্য চাইলে বিনামূল্যেই কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিবর্জ্য জোগাড় করতে পারতেন সুখমীত সিংহ। কিন্তু তা করেননি তিনি। বরং গবেষণা সারার পর ২০১৮ সালের মার্চ মাসে নিজের সংস্থা এ২পি (এগ্রি টু পাওয়ার) এনার্জি সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠা করেন।
নিজের সংস্থার মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে শুরু করেন কৃষকদের সঙ্গে। এই মুহূর্তে প্রতি একর বর্জ্যে কৃষকদের তিন হাজার টাকা দেন তিনি। অর্থাৎ কারও কাছে ১০ একর জমি থাকলে, শুধুমাত্র বর্জ্য বেচেই বাড়তি ৩০ হাজার টাকা রোজগার করতে পারবেন তিনি।
বর্তমানে পঞ্জাবের ৪৫টি কৃষিজীবী পরিবারের সঙ্গে মিলে কাজ করছেন সুখমীত। এখনও পর্যন্ত ৯০০ টন বর্জ্যের পোড়ানো আটকেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া চ্যালেঞ্জে প্রথম স্থান অধিকার করেছে তাঁর সংস্থা। ৫২২টি সংস্থাকে পিছনে ফেলে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার জিতে নিয়েছে। প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা পুরষ্কার পেয়েছে রাশিয়াতেও।