১০ শহরে অমৃতপাল সিংহকে ধরতে হন্যে হয়ে ঘুরেছে পুলিশ। তাঁকে নিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন মোট ন’জন। — ফাইল ছবি।
টানা ৩৭ দিন পুলিশকে রীতিমতো ঘোল খাইয়েছেন তিনি। তার পর গুরুদ্বারে ভাষণ দিয়ে নাটকীয় আত্মসমর্পণ করলেন অমৃতপাল সিংহ। পঞ্জাব পুলিশের দাবি, আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না অমৃতপালের। চারপাশ থেকে তাঁকে রীতিমতো ঘিরে ধরা হয়েছিল। তবে তার আগে পুলিশকে বার বার ফাঁকি দিয়েছেন অমৃতপাল। ১০ শহরে তাঁকে ধরতে হন্যে হয়ে ঘুরেছে পুলিশ। তাঁকে নিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন মোট ন’জন।
১৮ মার্চ থেকে অমৃতপালের ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’ সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। আর সেই থেকে বার বার নিজের স্থান পরিবর্তন করছেন এই খলিস্তানি নেতা। অভিযান শুরুর পর প্রথম বার অমৃতপালকে দেখা গিয়েছিল একটি মার্সিডিজ় গাড়িতে। সঙ্গে ছিলেন এক সহযোগী। এর পর চারটি গাড়িতে চেপে পালিয়েছিলেন তাঁরা। একটি পুলিশ চেকপয়েন্টে সেই কনভয় আটকায় পুলিশ। কিন্তু ব্যারিকেড ভেঙে পালিয়ে যান অমৃতপালরা।
পুলিশের দাবি, এর পর মার্সিডিজ় থেকে নেমে ব্রেজা গাড়িতে চেপেছিলেন অমৃতপাল। সেখান থেকে নেমে বাইকে চেপে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছিলেন। তার পর আবার অন্য একটি বাইকে চড়েন খলিস্তানি নেতা। ১৮ মার্চ রাতে জালন্ধর থেকে লুধিয়ানায় প্রবেশ করেন অমৃতপাল। যদিও তাঁর চার সঙ্গী থেকে গিয়েছিলেন জালন্ধরেই। ওই রাতে শেইখুপুরার গুরুদ্বারে প্রায় এক ঘণ্টা কাটিয়েছিলেন অমৃতপাল। পুলিশের দাবি, গুরুদ্বারের গ্রন্থি অমৃতপালকে একটি স্কুটি এবং একটি বাইক দিয়েছিলেন। স্কুটিতে চেপে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ পালিয়েছিলেন খলিস্তানি নেতা। বাইক চালিয়েছিলেন গ্রন্থির নেতা। অন্য বাইকে ছিলেন অমৃতপালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী পাপলপ্রীত। তিনি অন্য পথে চলে যান।
এর পরেই একটি ছবি প্রকাশ্যে আসে। যেখানে দেখা যায়, গোলাপি পাগড়ি পরে বাইক চালাচ্ছেন অমৃতপাল। চোখে রোদচশমা। ২০ মার্চ অমৃতপাল হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে পৌঁছন। সেখানে তাঁকে একটি সরকারি বাসে উঠতে দেখা যায়। হরিয়ানায় অমৃতপাল এবং পাপলপ্রীত এক মহিলার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বলজিৎ কউর নামে সেই মহিলাকে পরে গ্রেফতার করা হয়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ২১ মার্চ দিল্লিতে ছিলেন অমৃতপাল। নতুন চেহারা দেখা গিয়েছিল তাঁর। মাথায় পাগড়ি নেই। চুল ছোট করে কাটানো। এর পর ২৩ মার্চ উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে দেখা গিয়েছিল অমৃতপালকে। সেখান থেকে তিনি আবার জালন্ধরে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর ছিল, জালন্ধরে গিয়ে একটি আন্তর্জাতিক চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর আত্মসমর্পণের কথা ভেবেছিলেন অমৃতপাল। কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাঁর খোঁজ পেয়ে যায়। হোসিয়ারপুরে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু ব্যর্থ হয়। সেখান থেকেও পালিয়ে যান অমৃতপাল।
পুলিশ তদন্তে নেমে জেনেছে, আত্মসমর্পণের আগে বেশ কিছু গুরুদ্বারে আশ্রয় নিয়েছিলেন অমৃতপাল। গুরুদ্বার লঙ্গর সাহিব, নান্দেড় সাহিব, পিলভিট, লুধিয়ানার সাহনেওয়ালে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। ২৮ মার্চ হোসিয়ারপুর থেকেও পালিয়ে যান অমৃতপাল। যদিও তাঁর সঙ্গী পাপলপ্রীত গ্রেফতার হন। পুলিশ জেনেছে, পঞ্জাবে দ্বিতীয় বার প্রবেশের আগে উত্তরপ্রদেশের পিলভিটের মোহনপুর গুরুদ্বারে আশ্রয় নিয়েছিলেন অমৃতপাল। সেই গুরুদ্বারের প্রধান মোহন সিংহের গাড়িতেই পালিয়েছিলেন তিনি। অমৃতপাল ফাগওয়ারা এসেছিলেন একটি স্করপিও গাড়িতে চেপে। সেটি চালিয়েছিলেন জোগা সিংহ নামে এক ব্যক্তি। পরে তাঁকে লুধিয়ানার সাহনেওয়াল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অমৃতপালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতির মধ্যে বৈষম্য ছড়ানো, খুনের চেষ্টা, পুলিশকে আক্রমণ এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি সূত্র দাবি করছে, রবিবার ভোরে মোগা শহরের একটি গুরুদ্বারের সামনে অমৃতপাল নিজেই পুলিশের কাছে গিয়ে ধরা দেন। তার পর তাঁকে গ্রেফতার করে অমৃতসরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, অমৃতপালকে অসমের ডিব্রুগড়ের জেলে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। সেখানে তাঁর অন্য সহকারীদেরও রাখা হয়েছে। অমৃতপালের দলের আরও আট সদস্যকে অসমের জেলে রাখা হয়েছে।