বিরোধীদের ‘ষড়যন্ত্রের’ জবাব দেবে মানুষ, বলেছিলেন কেজরী। ফাইল ছবি।
কখনও ‘সন্ত্রাসবাদী’, কখনও ‘খলিস্তানি’ আবার কখনও আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে ‘হিন্দুত্বের তাস’ খেলার অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। তবে খড়গপুর আইআইটি-র প্রাক্তন ছাত্রের দাবি ছিল, ‘‘মানুষের ভালবাসার কাছে সব ষড়যন্ত্র হার মানবে।’’
বস্তুত, দিল্লির বাইরে ভিনরাজ্যে এই প্রথম বিজেপি এবং কংগ্রেসকে জোর টক্কর দেওয়া দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল গত কয়েক মাস ধরে টানা খবরের শিরোনামে। বিজেপি, কংগ্রেস, অকালি দল— পঞ্জাবের ভোট ময়দানে লড়াই সহজ ছিল না। তবু বুথফেরত প্রতিটি সমীক্ষায় পঞ্জাবে এগিয়ে ছিল আপ।
দিল্লির শাসনক্ষমতায় এসে সীমিত সাধ্য সত্ত্বেও রাজধানীর মানুষকে পরিষেবা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ। তাঁর আমলেই শুরু হয়েছে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ‘মহল্লা ক্লিনিক’। যেখানে ফি-রবিবার এমসের চিকিৎসকেরা আসেন রোগী দেখতে। বিদ্যুতের মাসিক খরচের দিকেও নজর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ। দিল্লি মডেলের উপর ভিত্তি করেই পঞ্জাবকে চাঁদমারি করেছিলেন তিনি। তাঁর ভবিষ্যতের ‘রোডম্যাপ’ বলছে, এর পর তিনি অভিযান চালাবেন তাঁর নিজের রাজ্য হরিয়ানায়।
বরাবর কংগ্রেস এবং শিরোমণি অকালি দলের ‘শক্ত ঘাঁটি’ পঞ্জাব। তবে এ বার পঞ্জাবের ভোটযুদ্ধ আরও ছিল বেশি জমজমাট, আরও বেশি টানটান। বিজেপি-পিএলসি থেকে অকালি-বিএসপি জোট— বিনাযুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনী ছাড়তে কেউ রাজি নয়। তবু সবাইকে পিছনে রেখে বুথফেরত সমীক্ষায় এগিয়ে ছিল কেজরীবালের আপ।
যদিও পঞ্জাবে কেজরীবালের লড়াইয়ের শুরু সেই ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে। দিল্লি ছাড়িয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে আপ-কে মেলে ধরতে তিনি প্রথম যে রাজ্যে লড়াই শুরু করেন, তা হল এই পঞ্চনদের তীর। এর পর ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে ১১৭টি আসনের মধ্যে ২০টি পায় কেজরীর দল।
কৃষক আন্দোলনে উত্তপ্ত পঞ্জাবে সরকার বিরোধিতা ক্রমশ চওড়া হচ্ছিল। এক দিকে শাসক কংগ্রেসের ছন্নছাড়া দশা, অন্য দিকে কৃষক বিদ্রোহ এবং বেকারত্ব, এই বিষয়গুলিকে একত্রিত করে বারবার ‘দিল্লি মডেল’-এর প্রচার শুরু করেন কেজরী।
২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি ছিল প্রত্যেক পরিবারের অন্তত একজন করে সদস্য সরকারি চাকরি পাবেন। কিন্তু চার বছর পর ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’-র তথ্য বলছে, ২০২১ সালের শেষে পঞ্জাবে বেকারত্ব বেড়েছে ৭.৮৫ শতাংশ। আর ভোটমুখী পঞ্জাবে কেজরীবালের প্রচারের মূল বিষয়ই ছিল বেকারত্ব, মাদক সমস্যা এবং দুর্নীতিমুক্ত সরকার। প্রতিটি ভোট প্রচারে কেজরীবাল তুলে ধরেছেন তাঁর ‘দিল্লি মডেল’-এর কথা। সেখানেই কংগ্রেস এবং অকালি দলের ‘বিকল্প’ হিসেবে পঞ্জাববাসীর কাছে কেজরীর দলের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বেছে বলে মনে করছেন জাতীয় রাজনীতির কারবারিরা।
কেন্দ্রের ‘বিতর্কিত’ তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে চলা কৃষক আন্দোলনের ‘আঁতুড়ঘর’ পঞ্জাবে বারবার ছুটে গিয়েছেন আপ নেতারা। বিশেষত, রাজধানীর বুকে কৃষক আন্দোলনকে খোলাখুলি সমর্থন জানিয়েছেন কেজরীবাল স্বয়ং। তার পর ভোটমুখী পঞ্জাবে শুধুমাত্র কৃষকদের বেশ কিছু প্রকল্পের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন আপ প্রধান। আর ভোটের ফল প্রকাশের এক দিন আগে কেজরীবালের প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে তিন কোটি পঞ্জাববাসীর নাগরিক সুরক্ষার দায় নেবে আপ সরকার। গত চার মাসে বোমা বিস্ফোরণ, সীমান্তে ড্রোনের আনাগোনা থেকে টিফিন বোমা— নানা অশান্তির সাক্ষী পঞ্জাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে আপ।