অজিত পওয়ার। —ফাইল চিত্র।
এ যেন দুঃস্বপ্নের রাত! ৩টের নাগাদ মধ্যপ্রদেশের উমারিয়ার বীরসিংহপুরে পৌঁছল অ্যাম্বুল্যান্স। গগনভেদী আওয়াজে যেন হাহাকারের বেদনা। দরজা খুলে ২৪ বছরের অনীশ আওয়াধিয়ার নিথর দেহ দেখে ভেঙে পড়লেন পরিজন। পুণেয় আইটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন অনীশ। প্রবল গতিতে ছুটে আসা পোর্শে গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন অনীশ। সঙ্গী অশ্বিনী কোস্তাও আর বেঁচে নেই। তাঁর দেহও পৌঁছেছে জবলপুরের বাড়িতে। গোটা ঘটনায় বাড়ছে ক্ষোভের পারদ। অভিযুক্তের মুক্তিতে অজিত পওয়ার ঘনিষ্ঠ এক বিধায়কের হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠেছে।
শনিবার গভীর রাতে দুর্ঘটনার সময়ে ঘাতক গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে ছিল মাত্র চার মাসের জন্য নাবালক থেকে যাওয়া (১৭ বছর ৮ মাস) এক কিশোর। বড় শাস্তি দূর অস্ত্, ১৫ ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেয়েছে পুণের প্রভাবশালী পরিবারের ওই কিশোর। আদালতের শর্ত ১৫ দিন ইয়েরওয়াড়ায় পুলিশের সঙ্গে যান নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হবে এবং এই দুর্ঘটনা নিয়ে লিখতে হবে ৩০০ শব্দের রচনা। পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিল, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল ওই কিশোর। বেসামাল হয়েই দুর্ঘটনা ঘটায়।
নিম্ন আদালতে দ্রুত রেহাই পেলেও এই ঘটনা ঘিরে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে। কী ভাবে দু’টি প্রাণ কেড়ে নেওয়ার পরেও ওই কিশোর ১৫ ঘণ্টায় রেহাই পেলেন তা নিয়ে বাড়ছে উষ্মা। এক জন নাবালক কী ভাবে পানশালায় প্রবেশের অনুমতি পেল, লাইসেন্স ছাড়া কী ভাবে গাড়ি চালানোর সুযোগ পেল, গাড়িতে কেন নম্বরপ্লেট ছিল না, উঠছে প্রশ্ন।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরকে সাবালক হিসেবেই যাতে আদালত গণ্য করে সেই আবেদন জানানো হবে। দায়রা আদালতে আবেদনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তের বাবাকে। অভিযোগ, তাঁরই পানশালায় মদ্যপান করেছিল নাবালক পুত্র। বিপদ আঁচ করে বাড়ি ছেড়েছিলেন নাবালকের বাবা। ছত্রপতি সম্ভাজিনগর থেকে তাঁকে পাকড়াও করে পুলিশ। একাধিক পানশালা মালিক তিনি। নির্মাণ ব্যবসায়ীও। গ্রেফতার হয়েছেন পানশালার তিন কর্মীও।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে অভিযুক্ত নাবালক পানশালায় মদ্যপান করছিল। এফআইআরে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ও তার বন্ধুরা প্রথমে একটি পানশালায় মদ্যপান করছিল। রাত ১২টা বাজতে সেখান থেকে বেরিয়ে আর একটি পানশালায় গিয়েছিল তারা।
আজ পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনীশের কাকা অখিলেশ। তাঁর কথায়, “দুর্ঘটনা নয়, এ তো খুন।” ক্ষুব্ধ অশ্বিনীর পরিবারও।
শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা সঞ্জয় রাউতের দাবি, প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রেফতারের পরে অভিযুক্তকে পিৎজ়া ও বার্গার খেতে দিয়েছিল পুলিশ। এর পাশাপাশি সঞ্জয় অভিযোগ করেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যাতে কড়া পদক্ষেপ করা না হয়, সেই জন্য অজিত পওয়ার ঘনিষ্ঠ এক বিধায়ক হস্তক্ষেপ করেছেন।
সঞ্জয় রাউত পুণের পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর হুঁশিয়ারি পুলিশ কমিশনারকে সরানো না হলে, পুণের বাসিন্দারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন। রাউতের অভিযোগ, অভিযুক্তের মেডিক্যাল রিপোর্টে কারসাজি করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে, সে মত্ত ছিল না। সরব হয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্র ধঙ্গেকরও।
প্রবল চাপের মুখে পুণের পুলিশ কমিশনার অমিতেশ কুমার জানিয়েছেন, অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবেন বলে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। দুর্ঘটনার সময়ে নাবালকের সঙ্গে গাড়িতে থাকা তার দুই বন্ধুকে সাক্ষী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কোনও পুলিশ অফিসার যদি অভিযুক্তকে সাহায্য করে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন।