Pulwama Terror Attack

মুহূর্তে হাহাকার নেমেছিল ৪০টি পরিবারে, এই জওয়ানদের কুর্নিশ

সবে ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরছিলেন কেউ। কেউ আবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ছুটিতে যাওয়ার। সংসার পাতার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কেউ। কেউ আবার অবসর জীবনের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সবই অধরা থেকে গেল। গত ১৪ ফেব্রুয়ারিপুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত ওই ৪০ জনকে চিনে নিন ছবিতে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:০৩
Share:
০১ ২১

সবে ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরছিলেন কেউ। কেউ আবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ছুটিতে যাওয়ার। সংসার পাতার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কেউ। কেউ আবার অবসর জীবনের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সবই অধরা থেকে গেল। গত ১৪ ফেব্রুয়ারিপুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত ওই ৪০ জনকে চিনে নিন ছবিতে।

০২ ২১

সুদীপ বিশ্বাস: চাষি পরিবারের ছেলে সুদীপ। ২০১৪-য় সিআরপিএফে যোগ দেন। অভাবের সংসার একটু সুখের মুখ দেখে। ছুটি কাটিয়ে ১৫ জানুয়ারি ফিরে যান জম্মু-কাশ্মীরে। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা চলছিল। বাবলু সাঁতরা: অবসরে বাকি ছিল এক বছর। এ বছর নতুন বাড়ি রং করার কথা ছিল। মা, স্ত্রী এবং ছ’বছরের মেয়েকে রেখে গেলেন তিনি।

Advertisement
০৩ ২১

হেমরাজ মীনা: ১০ ফেব্রুয়ারি বাড়ি এসেছিলেন। দু’রাত কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরে যান। খুব তাড়াতাড়ি ৫ দিনের ছুটি নিয়ে আসবেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৫ বছরের ছেলেকে। আর ফেরা হল না। জয়মল সিংহ: সকালে ফোনে কথা হয় ৫ বছরের ছেলের সঙ্গে। সন্ধ্যায় কথা বলবেন বলেছিলেন। কিন্তু বাবার কাছ থেকে আর ফোন পায়নি ছোট্ট গুরুপ্রকাশ।

০৪ ২১

জিৎ রাম: ৫ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। দুই শিশুকন্যা রয়েছে। সবে ছুটি কাটিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছিলেন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন তিনি। মনোজকুমার বেহরা: মেয়ের বয়স এক। সকালেই স্ত্রীকে ফোন করেন। মেয়ে কেমন আছে জানতে চান। তার পর উঠেছিলেন বাসে। বাবাকে ছবিতে দেখবে মেয়ে! মানতে পারছেন না তাঁর স্ত্রী।

০৫ ২১

প্রসন্নকুমার সাহু: দু’মাসের ছুটি কাটিয়ে কাশ্মীরে কাজে যোগ দিয়েছিলেন ফেব্রুয়ারিতেই। স্ত্রী মীনা ভেঙে পড়েছেন। তবে বাবাকে নিয়ে গর্বিত মেয়ে রোজি এবং ছেলে জগন। রতনকুমার ঠাকুর: ৪ বছরের ছেলে ও গর্ভবতী স্ত্রীকে বাড়িতে ফেলে ডিউটিতে গিয়েছিলেন। বাবা, ভাই এবং এক বোনের দায়িত্বও ছিল তাঁর কাঁধে।

০৬ ২১

তিলক রাজ: ৪ বছর আগে ভালবাসার দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেছিলেন। নিজের বিবাহবার্ষিকীতেই প্রাণ হারালেন। মাথার লাল ওড়না কফিনে জড়িয়ে স্বামীকে বিদায় জানান সাবিত্রীদেবী। অমিত কুমার: ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন। ২০১৭ সালে সিআরপিএফ-এ যোগ দেন। বিয়ের দেখাশোনা চলছিল। ছুটি কাটিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি কাজে যোগ দেন।

০৭ ২১

প্রদীপকুমার: স্ত্রী নীরজার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। আচমকাই তীব্র শব্দ। তার পর আর ফোনে স্বামীকে পাননি নীরজাদেবী। ১০ ও ১১ বছরের দুই মেয়ে রয়েছে তাঁর। প্রদীপ যাদব: দাদাকে নিয়ে গর্বিত ভাই কুলদীপ। কিন্তু প্রদীপ যাদবের ১০ বছরের মেয়ে অতশত বোঝে না। তাই শেষকৃত্যের সময় চিতায় আগুন দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।

০৮ ২১

মহেশকুমার: ছেলের মৃত্যুতে শোকে কাতর মা। তবে স্বামীকে হারালেও, দুই ছেলেকে বাবার মতো সেনাবাহিনীতে পাঠাতে বদ্ধপরিকর স্ত্রী সঞ্জু। কৌশলকুমার: এক দিন আগেই ফোনে কথা হয়েছিল ছেলের সঙ্গে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন দুঃসংবাদ! বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ৮২ বছরের গীতারাম। এটা কি যাওয়ার বয়স! কাঁদতে কাঁদতে প্রশ্ন তাঁর।

০৯ ২১

রমেশ যাদব: ছুটি কাটিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি জম্মু রওনা দেন। ‘পরিবারের খেয়াল রেখো,’— স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীই তো নেই! খেয়াল রাখছেন কিনা দেখবে কে? প্রশ্ন স্ত্রী রেণুর। রাম ভাকিল: ছেলেকে বিশ্বমানের ফুটবল বানাবেন। ভাইপো হবে আইএএস। মনের মধ্যে স্বপ্ন ছিল। তার আগেই চলে গেলেন।

১০ ২১

অবধেশকুমার: একদিনের জন্য বাড়ি এসেছিলেন। বারাণসী থেকে জম্মু রওনা দেন ১২ ফেব্রুয়ারি। তারপরেই দুঃসংবাদ এসে পৌঁছয়। বাবার কী হয়েছে? বার বার প্রশ্ন করেও জবাব পায়নি ২ বছরের নিখিল। সুখজিন্দ্র সিংহ: সাত বছর ধরে পূজা-অর্চনা। তার পর সন্তানের মুখ দেখেন। কিন্তু ৭ মাসের ছেলেকে ফেলেই চলে গেলেন সুখজিন্দ্র সিংহ।

১১ ২১

সঞ্জয় রাজপুত: স্ত্রী সুষমা ও দুই সন্তানকে ফেলে চলে গেলেন সঞ্জয় রাজপুত। চাকরিতে ২৩ বছর হয়ে গিয়েছিল। চাইলে স্বেচ্ছাবসর নিতে পারতেন। কিন্তু নেননি। রাঠৌর নীতিন: উত্তর-পূর্ব থেকে সম্প্রতি কাশ্মীর উপত্যকায় বদলি হয়ে এসেছিলেন। স্ত্রী, ৭ বছরের মেয়ে, ৯ বছরের ছেলে ও এক ভাইকে রেখে গেলেন।

১২ ২১

বিজয় সোরেঙ্গ: ১০ দিনের ছুটিতে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন স্ত্রীকে। আসা হয়নি। ঝাড়খণ্ড সরকার ১০ লক্ষ টাকা দিতে চায়। কিন্তুনেয়নি তাঁর পরিবার। সঞ্জয়কুমার: জম্মু থেকে শ্রীনগর যাচ্ছেন। সকালে স্ত্রীকে ফোন করে জানান। শ্রীনগর পৌঁছে ফোন করবেন বলেও জানান। ছেলে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

১৩ ২১

বসন্তকুমার: ওই বাসে বসেই স্ত্রীকে কুয়াশার ছবি পাঠিয়েছিলেন। সেই শেষ। তার পর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছয় বাড়িতে। ৮ ও ৫ বছরের দুই সন্তান রয়েছে তাঁর। রোহিতাশ লাম্বা: মা, স্ত্রী, দু’মাসের ছেলে ও ভাইকে রেখে গিয়েছেন। গোটা পরিবার শোকস্তব্ধ। তবে দাদার মতোই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান তাঁর ভাই।

১৪ ২১

শ্যামবাবু: ছ’বছর আগে বিয়ে হয়। স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেলেন। পাকা বাড়ি তৈরি করছিলেন। দেখভাল করতে ১ ফেব্রুয়ারি বাড়ি এসেছিলেন। কাজে ফেরেন ১০ ফেব্রুয়ারি। অজিতকুমার আজাদ: খবর দেখে ফোনে তাঁকে ধরতে চেষ্টা করছিলেন স্ত্রী। কিন্তু পাননি। দুঃসংবাদ পান সন্ধ্যায়। স্ত্রী ও দুই কন্যাকে রেখে গিয়েছেন তিনি।

১৫ ২১

বিজয়কুমার মৌর্য: বাবা রামায়ণ সিংহ কুশওয়াহা সেনায় যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ছেলে বিজয় সেই স্বপ্ন পূরণ করেন। সুব্রহ্মণ্যম জি: আইটিআই পাশ করে পাঁচ বছর আগে সিআরপিএফ-এ যোগ দেন। মৃত্যুর সময় বয়স ছিল ২৮ বছর। স্ত্রীর সঙ্গে পোঙ্গল পালন করে সবে কাজে ফিরেছিলেন।

১৬ ২১

কুলবিন্দ্র সিংহ: মাত্র ২৬ বছর বয়সে প্রাণ হারালেন। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন। অশ্বনীকুমার কাওচি: অক্টোবরে বাড়ি আসার কথা ছিল। চলছিল বিয়ের কথাবার্তাও। ছোট ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সকলে।

১৭ ২১

মানেশ্বর বসুমাতারি: কলেজ পাশ করে চাকরির খোঁজ করছে মেয়ে। ছেলে এখনও কলেজে। হামলার সকালেই স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। মোহনলাল: দেহরাদূনে ভাড়াবাড়িতে বাস গোটা পরিবারের। দুঃসংবাদ পেয়ে সেখানে এসে হাজির হন আত্মীয়রা। ১৫ বছরের শঙ্কর বাবার সত্কার করেন।

১৮ ২১

বীরেন্দ্র সিংহ: বাবার কোলে খেলে বেড়ানোর কথা। তার বদলে বাবার সত্কার করতে হল বীরেন্দ্র সিংহের আড়াই বছরের ছেলে ভিয়ানকে। নারায়ণলাল গুর্জর: ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। হামলার দু’দিন আগে ফের চলে যান। তার পরেই বাড়িতে দুঃসংবাদ পৌঁছয়। মা-বাবা আগেই মারা গিয়েছিলেন। পরিবার বলতে ছিলেন এক ভাই ও কাকা।

১৯ ২১

ভাগীরথ সিংহ: খুব শীঘ্র বাড়ি আসবেন। হামলার দিন সকালে ফোনে বাবাকে জানিয়েছিলেন। এলেনও। তবে তিন দিন পর, কফিনবন্দি হয়ে। চার বছর আগে বিয়ে হয়। এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নাসির আহমেদ: একদিন আগেই সতীর্থদের সঙ্গে ৪৬তম জন্মদিন পালন করেছিলেন। আদতে জম্মুর বাসিন্দা তিনি। স্ত্রী সাজিয়া কৌসর ও দুই ছেলেমেয়ে রেখে গিয়েছেন।

২০ ২১

গুরু এইচ: ছুটি কাটিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীর রওনা দেন ৩৩ বছরের গুরু। মা, বাবা এবং দুই ছোট ভাই রয়েছে তাঁর। সি শিবচন্দ্রন: ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন সম্প্রতি। শবরীমালা মন্দিরের আয়াপ্পাকে দর্শনও করে গিয়েছিলেন। সেনার পোশাকেই বাবাকে বিদায় জানায় তাঁর ২ বছরের ছেলে শিবমুনিয়ন।

২১ ২১

মণীন্দ্র সিংহ আত্তারি: জাতীয় স্তরে বাস্কেটবল খেলেছেন একসময়। তা থেকেই ১৫ মাস আগে সিআরপিএফে চাকরি পান। ছোটভাইও সম্প্রতি সিআরপিএফে চাকরি পেয়েছেন। পঙ্কজকুমার ত্রিপাঠী: ছুটি কাটিয়ে এক মাস আগে কাজে ফিরেছিলেন। তার পর বাড়ি এল তাঁর কফিন। স্ত্রী রোহিণী, মা সুশীলা, বাবা ওমপ্রকাশ ত্রিপাঠী, ছোটভাই শুভমকে রেখে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement