পুলওয়ামায় হামলার পর সেনা টহল। ছবি: পিটিআই।
পুলওয়ামার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আধা সেনা কনভয় জাতীয় সড়কে চলাকালীন অন্য যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সিআরপিএফ। পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হামলার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং সতর্কতা ছাড়াই কি জম্মু থেকে ৭৮ বাসে প্রায় আড়াই হাজার আধা সেনা রওনা হয়েছিলেন কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে?
প্রশ্ন উঠেছে কেন এত বড় কনভয় ছিল? কী করে রাস্তার পাশে দিন দুপুরে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি অপেক্ষা করল কনভয়ের জন্য অথচ ওই হাইওয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোনও বাহিনীর চোখে পড়ল না? কাশ্মীর পুলিশের একাংশের দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখই তাঁদের গোয়েন্দা শাখা সতর্ক করেছিল সম্ভাব্য আইইডি হামলার বিষয়ে। সেই সতর্ক বার্তা অগ্রাহ্য না করলে হয়তো এত বড় ক্ষতি এড়ানো যেত, এমনটাই পুলিশের একাংশের দাবি।
বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন সিআরপিএফের আইজি অপারেশন(কাশ্মীর) জুলফিকার হাসান। তিনি বলেন, “ খুব সাধারণ একটি সতর্কবার্তা ছিল গোয়েন্দা দফতরের পক্ষ থেকে। সেখানে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য ছিল না।” বাহিনীর অন্য এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, কনভয় নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা সতর্কতা নেওয়া দরকার সবটাই স্ট্যা্ন্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর মেনে করা হয়েছিল। জাতীয় সড়কে মোতায়েন রোজ ওপেনিং পার্টি রাস্তা এবং তার পাশে প্রতিটি ইঞ্চি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছিল আইইডির খোঁজে। কারণ ওই গোয়েন্দা সতর্ক বার্তায় লেখা ছিল সম্ভাব্য আইইডি হামলার কথাই। অন্য এক শীর্ষ সিআরপিএফ কর্তা বড় কনভয় প্রসঙ্গে তোলা প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ এ যেন কোনও ব্ল্যাক বেল্ট ছেলেকে বলা হচ্ছে রাত আটটার পর অন্ধকারে পার্কে যেও না!”
পাল্টা সেনা এবং আধা সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছে গোয়েন্দাদের ভূমিকা নিয়ে। একটি ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের দলে নাম লেখালো তা ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না গোয়েন্দারা? কয়েকশো কিলোগ্রাম বিস্ফোরক বোঝাই করা হল একটি গাড়িতে অথচ টের পেলেন না গোয়েন্দারা?
আরও পড়ুন: পুলওয়ামা আমরা ভুলব না: কিছু প্রশ্ন
আরও পড়ুন: কবে, কোথায়, কী ভাবে প্রত্যাঘাত, সিদ্ধান্ত নিক সেনা, পূর্ণ ছাড়পত্র: ঘোষণা মোদীর
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রদূতকে তলব, পাকিস্তান আর ‘সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ’ নয়, ঘোষণা ভারতের
গোয়েন্দা ব্যর্থতা না অসতর্কতা সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মাঝেই, একটি বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তকেই দায়ী করেছেন সিআরপিএফের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ। এক শীর্ষ সিআরপি আধিকারিক বলেন, “ যাতে উপত্যকার অসামরিক সাধারণ মানুষ নিজেদের বিচ্ছিন্ন না মনে করেন, সেই কারণে সিআরপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, জাতীয় সড়কে কনভয় চলাকালীন স্থানীয় যানবাহনের চলাচল বন্ধ করা হবে না।” বাহিনীর আধিকারিকদের দাবি, সেই সুযোগ নিয়েই আদিল হোসেন জাতীয় সড়কের সঙ্গে লেদপোরা গ্রামের সংযোগকারী অংশে সার্ভিস রোডে অপেক্ষা করছিল। আর সেই কারণেই সিআরপি-র শীর্ষ কর্তাদের দাবি, জওয়ানদের নিরাপত্তার স্বার্থে আর মানবিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং কনভয়ে রাস্তা দিয়ে নিরাপদে না যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে সমস্ত অসামরিক যানবাহনের চলাচল।
আরও পড়ুন: শ্রীনগরে রাজনাথ, কাঁধে নিলেন জওয়ানের কফিন
আরও পড়ুন: ‘সন্ত্রাসকে ভয় করি না, অন্য ছেলেকেও দেশের কাজেই পাঠাব’, বলছেন নিহত জওয়ানের বাবা
তবে সিআরপি কর্তারা স্বীকার করেন, বহু বছর বাদে ফের উপত্যকায় জইশের হাত ধরে ফিরে এসেছে ফিদাঁয়ে হামলার প্রবণতা। আর মোডাস অপারেন্ডি বদলে জইশ নকল করছে তালিবানি হামলার কায়দা। তাই ভবিষ্যতে এ রকম আরও হামলার চেষ্টা চলবে বলে আশঙ্কা সেনা ও আধাসেনার।