ব্যবহার করা হয়েছিল মারুতি ইকো ভ্যান গাড়ি। ফাইল চিত্র।
যে বিস্ফোরক দিয়ে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা চালিয়ে ৪৯ জন জওয়ানকে হত্যা করা হয়েছিল, তা ছিল অত্যন্ত উন্নত মানের ‘মিলিটারি গ্রেড’ আরডিএক্স। মিলিটারি গ্রেড, অর্থাৎ এই মানের আরডিএক্স ব্যবহার করে থাকে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতীয় সেনা। প্রাথমিক তদন্তের পরে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা এই নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গেই আরও নির্দিষ্ট হয়ে গেল পুলওয়ামা নাশকতায় পাক যোগসাজশের বিষয়টি। কারণ, পাক সেনার কাছ থেকেই জইশ জঙ্গিরা এই উন্নত মানের আরডিএক্স পেয়েছিল, তা নিয়ে আর কোনও সংশয় থাকল না।
পাশাপাশি, বিস্ফোরক বোঝাই যে গাড়িতে করে সেনা কনভয়ে হামলা চালানো হয়েছিল, সেই গাড়িটি একটি ‘মারুতি ইকো ভ্যান’ ছিল বলেও নিশ্চিত হয়েছেন ফরেনসিক গোয়েন্দারা। ১৪ ফেব্রুয়ারির নৃশংস জঙ্গি হামলার পর প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই রিপোর্টেই পুলওয়ামা বিস্ফোরণ নিয়ে এই চাঞ্চল্যকর তথ্যগুলি উঠে এসেছে বলে জানাচ্ছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম।
প্রাথমিক রিপোর্টটি থেকে জানা যাচ্ছে, যে মানের আরডিএক্স ব্যবহার করা হয়েছিল—তা ‘অত্যন্ত স্থিতিশীল’ গোত্রের। অর্থাৎ, তা হয়তো বেশ কয়েক মাস আগেই ভারতে আনা হয়েছিল, কিন্তু বিস্ফোরণের জন্য সাজানো হয়েছিল নাশকতাস্থলের পাঁচ-সাত কিলোমিটারের মধ্যে। ভারতীয় সেনা বিভিন্ন সামরিক কাজে যে আরডিএক্স ব্যবহার করে, তার প্রতিটি গ্রামই নথিভুক্ত এবং ‘অডিট’ করা। অন্য দিকে পাকিস্তানি সেনার ব্যবহৃত আরডিএক্স যে বিভিন্ন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ব্যবহার করে থাকে, সেই প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন সময়।
আরও পড়ুন: ‘প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ ভারতের’, পুলওয়ামা বিস্ফোরণের দায় অস্বীকার ইমরানের
বিস্ফোরণের পরই ঘটনাস্থল বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় নমুনা সংগ্রহ করতে অসুবিধের মধ্যেও পড়েছিলেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। চূড়ান্ত ফরেনসিক রিপোর্ট এখনও তৈরি না হলেও প্রাথমিক রিপোর্টে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ৫০-৭০ কেজি আরডিএক্স ব্যবহার করা হয়েছিল বলেই তাঁদের অনুমান। কারণ, এই মানের বিস্ফোরক ১০০-৩০০ কেজি হলে তার ভয়াবহতা আরও অনেক বেশি হত।
একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাইরে থেকে আসা এক জন অত্যন্ত উন্নত মানের বোমা বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলের ৫-৭ কিলোমিটার দূরে এই বিস্ফোরক সাজানো হয়েছিল। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, ‘‘বিস্ফোরকের সঙ্গেই ছিল ট্রিগার সুইচ, ডিটোনেটর এবং পাওয়ার ফিউজ।’’ পুলওয়ামায় যে বিস্ফোরণ হয়েছে, কাশ্মীরে এর আগে এই রকম হয়নি, এমনটাই মত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের। গাড়ি বোঝাই বিস্ফোরক নিয়ে এই ধরনের হামলা সাধারণত পশ্চিম এশিয়ায় করে থাকে আইএস এবং আল কায়দার মতো সন্ত্রাসবাদীরা।
আরও পড়ুন: ‘ভারত আক্রমণ করতে পারে, আপনারা থামান’, রাষ্ট্রপুঞ্জে চিঠি পাক বিদেশমন্ত্রীর
বিস্ফোরণের পরই গোয়েন্দাদের একটি অংশের অনুমান ছিল, বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িতে বাইরে থেকে রিমোটের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। পুলওয়ামা কাণ্ডের সাত দিন পর অবশ্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল আহমদ দার গাড়িতে বসেই এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এবং এই কাজ করার আগে সে দু’বার ভাবেনি। ২০০০ সালের বাদামি বাগ এবং ২০০১ সালে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে অনেকটা সময় নিয়েছিল। সেই জন্যই এই দু’টি বিস্ফোরণ আগের দু’টি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, এমনটাই মত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের এই রিপোর্টে নিশ্চিত ভাবেই উদ্বিগ্ন দেশের সামরিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ, কাশ্মীরী জঙ্গিদের হাতে কি তাহলে পৌঁছে গিয়েছে মিলিটারি গ্রেডের আরও কিছু বিস্ফোরক? আরডিএক্স ছাড়াও যার মধ্যে আছে পিইটিএন (পেন্টাএরিথ্রিটল টেট্রানাইট্রেট) এবং টিএনটি (ট্রাইনাইট্রোটলুইন)।