পুলওয়ামা হামলার পরের মুহূর্তের ছবি। —ফাইল চিত্র
অনলাইন শপিং সাইটগুলিতে কী না মেলে? এমনকি, বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম, রাসায়নিকও! পুলওয়ামা কাণ্ডে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করার পর সামনে এল এমনই ভয়ঙ্কর তথ্য। পুলওয়ামার মতো ভয়ঙ্কর জঙ্গি হানায় জুড়ে গেল শপিং সাইট ‘অ্যামাজন’-এর নাম। ধৃতদের এক জন অ্যামাজন থেকেই বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও রাসায়নিক কিনেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতদের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।
গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ-এর কনভয়ে জঙ্গি হানায় মৃত্যু হয় ৪০ জনের। ওই হামলায় জড়িত সন্দেহে শুক্রবার শ্রীনগর থেকে ওয়েজুল ইসলাম (১৯) এবং পুলওয়ামা থেকে মহম্মদ আব্বাস রাদার (৩২) নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে এই দু’জনের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে এনআইএ। দু’জনেরই পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ ছিল। ওয়েজুলের সঙ্গে পুলওয়ামা হামলার কিছু দিন আগে যোগাযোগ হলেও মহম্মদ আব্বাস জইশের পুরনো সদস্য।
এদের মধ্যে ওয়েজুল ইসলাম অ্যামাজন থেকে বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম কিনেছিল বলে জানিয়েছে এনআইএ-র গোয়েন্দারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারী বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওয়েজুল স্বীকার করেছে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), ব্যাটারি, অন্যান্য সরঞ্জাম ও রাসায়নিক কিনেছিল অ্যামাজন থেকে। জইশ জঙ্গিদের নির্দেশমতো এই সব সরঞ্জাম কিনতে ব্যবহার করেছিল নিজের আইডি-পাসওয়ার্ড।’’ পুলওয়ামা হামলার পরিকল্পনার অংশীদার হিসেবে ওয়েজুল নিজেই সেই সব সরঞ্জাম জঙ্গিদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল বলেও জানিয়েছে সে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ফরেনসিক তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, বিস্ফোরণের জন্য ব্যবহার করা হয়ছিল অ্যমোনিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রো গ্লিসারিন এবং আরডিএক্স।
আরও পড়ুন: ঝড়ের গতিতে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ, যুদ্ধ চলছে, হুঁশিয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
ওই অফিসার বলেন, ‘‘আব্বাস দীর্ঘ দিন ধরেই জইশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ২০১৮-র এপ্রিল-মে নাগাদ বিস্ফোরক বিশারদ জইশ জঙ্গি কাশ্মীরে এসেছিল। আব্বাসই তাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিল। এ ছাড়া পুলওয়ামা হামলার আগে নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছিল আত্মঘাতী হামলাকারী জইশ জঙ্গি আদিল আহমেদ দার, সমির আহমেদ দার ও কামরানকে। এদের মধ্যে কামরান পাকিস্তানের নাগরিক।’’
গত ৩ মার্চ বন্দিপুরা থেকে পুলওয়ামা হামলায় জড়িত সন্দেহে হাকরিপোরা থেকে তারিক আহমেদ শাহ ও তাঁর মেয়ে ইনশা জানকে গ্রেফতার করে এনআইএ। তাঁদের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া ও সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে আব্বাস স্বীকার করেছেন, নিজের বাড়ি ছাড়াও তারিক আহমেদ শাহের বাড়িতে জঙ্গিদের থাকার বন্দোবস্তও তিনি করেছিলেন।
আরও পড়ুন: ধারেই ধাক্কা, ইয়েস ব্যাঙ্কের ত্রাতা এসবিআই
আদিলই যে পুলওয়ামা হামলায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল, ডিএনএ পরীক্ষায় ইতিধ্যেই সেটা প্রমাণ হয়েছে। পুলওয়ামা হামলার পর আদিলের শেষ ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় পাকিস্তান থেকে। তারিক আহমেদ শাহকে গ্রেফতারের পর এনআইএ-র গোয়েন্দারা এক প্রকার নিশ্চিত, এই তারিক আহমেদ শাহের বাড়িতেই রেকর্ড করা হয়েছিল আদিলের শেষ ভিডিয়ো। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শাকির বসির মাগরে নামে পুলওয়ামা থেকে এক কাঠের ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে এনআইএ। শাকিরের বিরুদ্ধে আদিলকে আশ্রয় দেওয়া এবং নানা ভাবে সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে। তার পর থেকেই পরপর গ্রেফতার এবং পুলওয়ামা তদন্তে নতুন করে গতি এসেছে।