হামলার পর দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: রয়টার্স।
অনেকটা সিরিয়া ও আফগানিস্তানের কায়দাতেই পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। হামলার ধরন দেখেই এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিরিয়া ও আফগানিস্তানে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে জঙ্গিরা গাড়িবোমা বা আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে থাকে। পুলওয়ামার ক্ষেত্রেও সেই কায়দাকে বেছে নেয় জঙ্গিরা। আর তাতেই নিহত হন ৪৪ জন জওয়ান। আহত হন ৪১ জন।
বৃহস্পতিবার জম্মু থেকে ৭৮টি গাড়িতে আড়াই হাজারেরও বেশি সেনা শ্রীনগর যাচ্ছিলেন। বিকেল তখন সওয়া ৩টে। অবন্তীপোরার লাট্টুমোরের কাছে সেই কনভয়ে গাড়ি নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় জইশ জঙ্গিরা। এই হামলাকে ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে নিরাপত্তার গাফিলতিরও। গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্য পাল মালিকও। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে এক সাক্ষাত্কারে মালিক বলেন, “গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি হাইওয়েতে ঢুকে পড়ল, আর সেটা চিহ্নিত করা, তল্লাশি চালানো গেল না! আমাদের এটা মেনে নিতে হবে গাফিলতি আমাদেরও ছিল।”
সেনার উপর বড়সড় আত্মঘাতী হামলার ছক কষছে জঙ্গিরা, গত ৮ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দারা এমনই একটি রিপোর্ট দিয়ে বাহিনীকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু তার পরেও কেন হামলা আটকানো গেল না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে একটি সূত্রের দাবি, গোয়েন্দাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে সেনা। কী ভাবে হামলা আটকানো যায় তা নিয়ে আলোচনাও হয়। শ্রীনগর-জম্মু হাইওয়ে দিয়ে কনভয়ের যাওয়ার কথা ছিল। দিনের বেলায় সেই কনভয় নিয়ে গেলে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেছিল সেনা। কারণ ওই সময় হাইওয়েতে প্রচুর সাধারণ যানবাহন থাকে। ফলে সেগুলোয় তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রেও বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই দিনে নয়, গভীর রাতে কনভয় নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনাও হয় বলে ওই সূত্রের দাবি। ওই সময় রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় সহজে গাড়িগুলোতে তল্লাশি চালাতে সুবিধা হবে। বা কনভয় না যাওয়া পর্যন্ত গাড়িগুলোকে প্রয়োজনে আটকে দেওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, রাতে রোড ওপেনিং পার্টি রাস্তার দু’ধারে আলো জ্বালিয়ে তল্লাশি চালাতে পারবে। যাতে কোনও অনুপ্রবেশকারী সেই কনভয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়।
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা সম্পর্কে এগুলি জানেন? খেলুন কুইজ
আরও পড়ুন: ৩৫০ কেজি বিস্ফোরকের গাড়িবোমা কাশ্মীরে, হত ৪৪ সিআরপিএফ জওয়ান
আরও পড়ুন: রাস্তায় পড়ে নিহতদের ব্যাগ-রুকস্যাক, কান্না চেপে সেগুলো কুড়চ্ছেন সেনারা
যে রাস্তা দিয়ে সেনা কনভয় যাচ্ছিল, সেই রাস্তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে সিআরপি, পুলিশ এবং সেনা। শুধু তাই নয়, ৫০ মিটার অন্তর চেকপোস্ট রয়েছে গোটা রাস্তায়। প্রশ্ন উঠছে, এত নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কেন হামলা আটকানো গেল না? গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তা পাওয়ার পরও বাহিনী খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি সত্যিই নিরাপত্তার ভিতরেই কোনও বড় ফাঁক ছিল? গোয়েন্দারা সেই উত্তরের খোঁজ চালাচ্ছেন। ফরেন্সিক দল তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তে নেমেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।
আরও পড়ুন: বেআব্রু গলদ, ফের কি সার্জিকাল স্ট্রাইক?
তদন্তে নেমে গোয়েন্দাদের হাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রের খবর, গোপনে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি ইন্টারনেটের মাধ্যমেও যোগাযোগ রাখছিল জঙ্গিরা। কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল জঙ্গিরা? কনভয় কোন পথে কখন যাচ্ছে সেই খবরই বা দিল কে বা কারা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ গোয়েন্দাদের।