পূজা খেড়কর। ছবি: সংগৃহীত।
মুসৌরির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মঙ্গলবার হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ বার সেই আমলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেরই তলব এড়িয়ে গেলেন পূজা খেড়কর!
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শিক্ষানবিশ আমলা পূজার বিরুদ্ধে উঠেছে একের পর এক অভিযোগ। মঙ্গলবার পূজাকে তলব করেছিল লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। কিন্তু তিনি হাজির হাননি বলেই সূত্রের খবর। তাঁর প্রশিক্ষণও অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে, তিনি আর কখনও এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। এই বিতর্কের মাঝেই মঙ্গলবার আবারও আমলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের তলব এড়িয়ে গেলেন পূজা। তাঁর নিয়োগ বাতিল করতে ইতিমধ্যেই শোকজ় নোটিশ জারি করেছে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)। ওই শিক্ষানবিশ আমলার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশও। খোঁজ চলছে পূজার।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, পূজার বিরুদ্ধে ভুল তথ্য এবং ভুয়ো পরিচয়পত্রের সাহায্যে সংরক্ষণের সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছে ইউপিএসসি। অপরাধ দমন শাখা সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
প্রশাসনিক দফতর (জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট)-এর তরফে গত ১৬ জুলাই পূজাকে পাঠানো নোটিসে বলা হয়েছিল, তাঁর প্রশিক্ষণ পর্ব আপাতত স্থগিত করা হল। ক্ষমতার অপব্যবহার, ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে সংরক্ষণের সুযোগ নেওয়া-সহ বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল পূজার বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। চাকরির জন্য ইউপিএসসিতে যে সব শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন পূজা, সেই সব শংসাপত্র পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গিয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রের পুণের সহকারী জেলাশাসক হিসাবে নিযুক্ত পূজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িতে মহারাষ্ট্র সরকারের স্টিকার, লালবাতি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষ ‘দখল’ করা এবং জেলাশাসকের সহকারীর কাছে বেআইনি দাবিদাওয়া পেশ করে সেই দাবি পূরণের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেখান থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। তার পর পূজার একের পর এক ‘কীর্তি’ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে এমবিবিএস পড়ার সময়ে ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করে নিজেকে ‘অনগ্রসর’ (ওবিসি) শ্রেণিভুক্ত বলে দেখিয়েছিলেন পূজা। ২০০৭ সালে মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে জাতিগত সংরক্ষণের সুবিধা নিতে ওবিসি নোম্যাডিক ট্রাইব-৩ ক্যাটেগরিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি, যা শুধুমাত্র বানজারি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সংরক্ষণের সুবিধা পেতে ভুয়ো জাতিপরিচয়গত শংসাপত্রের পর এ বার ভুয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের আবেদন করেন তিনি! দু’বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সেই ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমাও দেন— এক বার দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কথা উল্লেখ করে, আর এক বার মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে। তবে নিয়োগের আগে ২০২২ সালে এমস-এ প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হলেও ছ’বার নানা অজুহাতে পূজা তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এত গলদ সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে চাকরি পেলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।