কলেজের ভিতরে বিক্ষোভ চলছে। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
বহিরাগতদের হাতে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে উত্তাল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ গার্গী কলেজ। ঘটনার দিনই পড়ুয়াদের তরফে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও, সোমবার, ঘটনার চার দিন পর কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই ঢিলেমি নিয়েই এ দিন সকাল থেকে কলেজের ভিতরে বিক্ষোভে শামিল হন পড়ুয়ারা। মূল ফটকের সামনেও শতাধিক পড়ুয়া জড়ো হন বলে জানা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও #স্পিকআপগার্গী লিখে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কলেজের পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের একাংশ। পড়ুয়াদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অধ্যক্ষা প্রমীলা কুমারের ইস্তফারও দাবি তুলছেন তাঁরা।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, গত ৬ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে অন্য কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি ছিল। আবার ওইদিনই কলেজের বাইরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থনে মিছিল বেরিয়েছিল। ওই মিছিল থেকেই মত্ত অবস্থায় এক দল লোক ট্রাকে চেপে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে তখন থিকথিকে ভিড়। তারই মধ্যে বহিরাগতেরা ঢুকে মেয়েদের যৌন হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। অশালীন মন্তব্য, গায়ে হাত দেওয়া এমনকি ছাত্রীদের সামনে তারা হস্তমৈথুন করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে মেয়েরা ভয় পেয়ে শৌচাগারের দিকে ছুটে পালালে, সেখানে তাঁদের আটকে রাখা হয় বলেও দাবি পড়ুয়াদের।
নিরাপত্তারক্ষীদের সামনেই বিকাল ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ভিতর এই তাণ্ডব চলে বলে অভিযোগ। তা নিয়ে ওই দিন রাতেই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান পড়ুয়ারা। কিন্তু এ দিন দুপুর পর্যন্ত কলেজের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ুয়াদের তরফে তা নিয়ে লেখালিখিতে নড়েচড়ে বসে জাতীয় মহিলা কমিশন। হেনস্থার শিকার পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে কলেজে পৌঁছন কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। সক্রিয় হয় দিল্লি পুলিশও। কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় তারা। তার পরেই কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয় বলে জানা গিয়েছে। যার ভিত্তিতে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে হৌজ থানায় ৪৫২, ৩৫৪, ৫০৯ এবং ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ দিল্লির ডিসিপি অতুল ঠাকুর।
আরও পড়ুন: রাস্তা আটকে অনির্দিষ্টকাল প্রতিবাদ চলতে পারে না, শাহিন বাগ নিয়ে নোটিস সুপ্রিম কোর্টের
আরও পড়ুন: মৃত বেড়ে ৯০০, চিনে এ বার নিখোঁজ করোনার খবর করা সাংবাদিক
গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘গার্গী কলেজে আমাদের মেয়েদের সঙ্গে যে অভব্যতা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এই ধরনের আচরণ কখনওই বরদাস্ত করা হবে না। অপরাধীদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত। শিক্ষাঙ্গনে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই।’’
গার্গী কলেজের এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংসদে সরব হয়েছে কংগ্রেসও। দলের সাংসদ গৌরব গগৈ সোমবার বিষয়টি লোকসভায় তুলে ধরেন। তা নিয়ে হইচই শুরু হলে, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ ও উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অপরাধ প্রমাণ হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।