দিল্লি পুলিশের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।
১৩ ঘণ্টা অবস্থানের পরে অবশেষে বিক্ষোভ তুলে নিল দিল্লি পুলিশের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। সিনিয়র অফিসারদের অনুরোধ মেনে নিয়েই ইন্ডিয়া গেট থেকে কাজে ফিরলেন খাকি উর্দির কর্মীরা। দিল্লি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন, গোটা ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে।
আইনজীবীদের হাতে লাগাতার নিগ্রহের অভিযোগে, মঙ্গলবার সকালে শুরু হয়েছিল পোস্টার হাতে নীরব প্রতিবাদ। আইটিও এলাকায় দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার খাকি উর্দিধারী। বাইরে বেরিয়ে এসে যথাযথ ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক। শান্ত হতে বলেছিলেন বিক্ষোভকারীদের। কিন্তু আন্দোলন থামাতে পারেননি।লাভ হয়নি কাজে ফেরার অনুরোধেও। দিল্লি পুলিশের বিক্ষোভ ছড়ায় ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত। সেই বিক্ষোভের জেরে অবরুদ্ধ হয়ে যায় দিল্লি-চণ্ডীগড় হাইওয়ে। বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানানো হয় বাংলা, কেরালার আইপিএস অ্যাসোসিয়েসান থেকে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেখা যায়, দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরে জমায়েত হচ্ছেন উর্দিতে থাকা এবং সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ কর্মীরা। গোটা সদর দফতর ঘিরে ফেলেন তাঁরা। তবে কোনও স্লোগান নয়, চিৎকার নয়, শুধু নীরব প্রতিবাদ। হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড। সেই প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘আমরা দুঃখিত। আমরা পুলিশ। আমাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। আমাদের পরিবার নেই। আমাদের কোনও মানবিক অধিকারও নেই।’ অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ড, ‘আমরা বিচার চাই।’
ঘটনার সূত্রপাত ২ নভেম্বর। দিল্লির তিসহাজারি আদালতের পার্কিং এরিয়ায় এক আইনজীবীর গাড়িতে পুলিশের গাড়ির ধাক্কার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে আদালত এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়। কমপক্ষে ২০ জন পুলিশ কর্মী আহত হন আইনজীবীদের হামলায়, এমনটাই পুলিশ কর্মীদের অভিযোগ। উত্তেজিত আইনজীবীরা ভাঙচুর চালান একের পর এক পুলিশের গাড়িতে। আগুন পর্যন্ত ধরিয়ে দেন। আইনজীবীদের পাল্টা অভিযোগ, কয়েকজন পুলিশ কর্মী এক নিরস্ত্র আইনজীবীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়, পুলিশের গাড়িতে তুলে ব্যাপক মারধরও করে।
আরও পড়ুন: ‘এনসিপির সঙ্গে কথা বলছি, তবে পওয়ার নন, মুখ্যমন্ত্রী হবেন আমাদেরই কেউ’, জানাল শিবসেনা
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত হোক, ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে কোমর বাঁধছে বিরোধীরা
ওই ঘটনার পর থেকেই দিল্লির অন্যান্য আদালতে কর্মবিরতি শুরু করেন আইনজীবীরা। তার পরে, দিল্লির সাকেত এবং করকরডুমা আদালতে আইনজীবীদের হাতে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। সোমবারই একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে, যেখানে দেখা যাচ্ছে— বাইকে সওয়ার এক পুলিশ কর্মীকে রাস্তায় আটকাচ্ছেন আইনজীবীরা। তার পরই শুরু হয় এলোপাথাড়ি মারধর। কোনও মতে বাইক ঘুরিয়ে পালিয়ে যান ওই পুলিশ কর্মী। পুলিশের উপর একই রকম হামলার ঘটনা ঘটে করকরডুমা আদালতেও।
দিল্লি পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের অভিযোগ, পর পর উর্দির উপর আক্রমণ নেমে আসার পরও কোনও ব্যবস্থা নেননি দিল্লি পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। অভিযোগ, বাহিনীর সদস্যদের পাশে থাকার পরিবর্তে, নীরব দর্শকই থেকেছে তাঁদের উঁচু তলা।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসতে থাকে তিস হাজারি আদালতের একের পর এক ভিডিয়ো ফুটেজ। যেখানে দেখা যাচ্ছে আইনজীবীরা কী ভাবে আদালতের লক আপের মধ্যে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করছেন। বাধা দেওয়ায় মাটিতে ফেলে মারা হচ্ছে পুলিশ কর্মীদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় পর পর এ ধরনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরই, সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক এবং কর্মী বাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকদের প্রকাশ্যে দোষারোপ করাও শুরু করেন।
রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ পুলিশকর্মীদের।
প্রতিবাদী পুলিশ কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দিল্লি পুলিশের প্রাক্তন শীর্ষ আধিকারিকদের অনেকেই। দিল্লির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার টুইট করে বলেন, ‘‘বাহিনীর কোনও নেতা নেই। বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে একতা নেই। এক জন সহকর্মী আক্রান্ত হলে বাকিরা তাঁকে বাঁচাতে যাচ্ছেন না।”
ঠিক একই ভাবে দিল্লি পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সমালোচনা শুরু হয় বাহিনীর অন্দরে, সামাজিক মাধ্যমে। পুলিশ কর্মীরা দাবি করেন— তলানিতে ঠেকেছে গোটা বাহিনীর মনোবল।
এর পর, মঙ্গলবার পুলিশের বেনজির এই বিক্ষোভে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। তড়িঘড়ি সদর দফতরের বাইরে বেরিয়ে আসেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বাহিনীর সদস্যদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘এটা পুলিশের পরীক্ষার সময়।” আশ্বাস দেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পাবেন। সূত্রের খবর, পর পর ওই হামলার ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে।