—ফাইল চিত্র।
বিজেপি সরকারের ‘প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ’ এবং ভয় দেখানোর কৌশলের কাছে তাঁরা মাথা নত করবেন না বলে জানিয়ে দিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দিল্লির হিংসার ঘটনার চার্জশিটে ইয়েচুরি, যোগেন্দ্র যাদব, অধ্যাপক জয়তী ঘোষ, তথ্যচিত্র নির্মাতা রাহুল রায় প্রমুখের নাম রয়েছে। ইয়েচুরিদের অভিযোগ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে যে সব রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ বা সমাজকর্মী প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন, মামলায় জড়িয়ে তাঁদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু প্রতিবাদ করতে তিনি আবার যাবেন বলে জানিয়েছেন ইয়েচুরি। একই সুরে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং অন্য বামপন্থী নেতারাও।
সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠকের পরে ইয়েচুরি রবিবার বলেছেন, ‘‘দিল্লিতে গত ফেব্রুয়ারির হিংসায় ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। দিল্লি পুলিশ ঘটনার তদন্তের নামে আসলে সিএএ-বিরোধীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এ ভাবে প্রতিবাদ থামানো যাবে না। ভয় দেখালেই আমরা মাথা নত করব না! সংবিধান যদি লঙ্ঘন হয়, সংখ্যালঘুদের অধিকার যদি কেড়ে নেওয়া হয়, আমরা প্রতিবাদ করবই। সেটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, আবার প্রতিবাদ করতে যাব!’’ ইয়েচুরির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিবাদী কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য। দিল্লির হিংসা বা ভীমা কোরেগাঁও মামলা, সর্বত্রই একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
দিল্লি পুলিশের তরফে অবশ্য ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, অতিরিক্ত চার্জশিটে অন্যদের ‘স্বীকারোক্তি’র মধ্যে ইয়েচুরি, যোগেন্দ্রদের নাম রয়েছে। পুলিশ তাঁদের অভিযুক্ত করে কোনও ধারা দেয়নি। দিল্লি পুলিশ কি এই বিষয়ে তাঁদের কিছু জানিয়েছে? ইয়েচুরির জবাব, ‘‘দিল্লি পুলিশ আমাদের কিছুই জানায়নি। কিন্তু অন্যদের কাছ থেকে ‘আদায় করা স্বীকারোক্তি’র মধ্যে কিছু নাম থাকল, সেই নামগুলো বাইরে ফাঁস হয়ে গেল— এ সবই কি নিছক কাকতালীয়! তা ছাড়া, দিল্লিতে প্রতিবাদীদের যাঁরা হুমকি দিয়েছিলেন, বিজেপির যে নেতারা উস্কানিমূলক বক্তৃতা করে বেড়ালেন, তাঁদের নাম কোথাও নেই!’’
আরও পড়ুন: উমর খালিদ গ্রেফতার, দিল্লি হিংসা মামলায়, দেওয়া হল ইউএপিএ
দিল্লির ঘটনার উল্লেখ করেই কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছেন, ‘‘ইয়েচুরি, যোগেন্দ্র, জয়তীদের নাম চার্জশিটে টেনে এ দেশে স্বাভাবিক ন্যায়-বিচারের প্রক্রিয়াটাকেই তামাশায় পরিণত করা হয়েছে!’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল, জয়রাম রমেশ, শশী তারুরেরাও। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘বিগত কয়েক মাসে দিল্লি পুলিশ জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এবং জেএনইউ-এর ছাত্র-ছাত্রী ও প্রাক্তনীদের অনেককেই গ্রেফতার করেছে। এর পরে তথাকথিত স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতির নামে ইয়েচুরি, জয়তীদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হল! দিল্লি পুলিশের ‘দাঙ্গা তদন্ত’কে মোদী সরকার ব্যবহার করছে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে।’’ সহযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে বামপন্থীরা লড়াই চালাবেন বলে মন্তব্য করেছেন দীপঙ্করবাবু।
আরও পড়ুন: আগামী বছরের গোড়াতেই আসতে পারে করোনার টিকা, আশা হর্ষ বর্ধনের
এরই পাশাপাশি, সিপিএমের পলিটব্যুরো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আয়কর দেয় না এমন পরিবার পিছু ৬ মাসের জন্য ১০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য ও বিনা মূল্যে ১০ কিলো আনাজ, একশো দিনের কাজ প্রকল্পকে ২০০ দিনে নিয়ে যাওয়া, শহরে রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প এবং সংবিধান রক্ষার দাবিতে আগামী ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর দেশ জুড়ে পথে নেমে ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে কর্মসূচি চলবে।