ফেব্রুয়ারি মাসের পরে আজ বৈঠকে বসেছিলেন কমিশনের সদস্যেরা। ফাইল ছবি
জম্মুতে ছ’টি ও কাশ্মীরে একটি বিধানসভা আসন বাড়ানোর প্রস্তাব দিল জম্মু-কাশ্মীরের জন্য গঠিত আসন পুনর্বিন্যাস কমিশন। বিজেপি বাদে কমিশনের ওই প্রস্তাবকে কার্যত খারিজ করে দিয়েছে উপত্যকার বাকি সব রাজনৈতিক দলই। উপত্যকার দলগুলির অভিযোগ, জম্মুতে আসন বৃদ্ধির মাধ্যমে আসলে জম্মু-কাশ্মীরে ক্ষমতা দখলের ছক কষছে বিজেপি। বিজেপির সেই স্বপ্ন পূরণ যাতে হয় তা মাথায় রেখেই হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের পরে আজ বৈঠকে বসেছিলেন কমিশনের সদস্যেরা। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জনসংখ্যার বিন্যাসের উপরে ভিত্তি করে জম্মুতে ছ’টি আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে আগামী দিনে জম্মুর আসন সংখ্যা হবে ৪৩। সেখানে কাশ্মীরের একটি বেড়ে আসন সংখ্যা হয়েছে ৪৭। মোট আসনের মধ্যে ৭টি আসন তফসিলি জাতি ও ন’টি আসন জনজাতির জন্য সংরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে শেষ আসন পুনর্বিন্যাস হয়েছে ১৯৯৪-৯৫ সালে। প্রায় ২৫ বছর পরে নতুন করে আসন পুনর্বিন্যাসের মুখে দাঁড়িয়ে জম্মু-কাশ্মীর। রাজনীতির অনেকের মতে, এত দিন যারা কাশ্মীরে বেশি আসন পেত তারাই জম্মু-কাশ্মীর শাসন করে এসেছে। সেই ছবিটিই পাল্টাতে চেয়েছে বিজেপি। বিজেপির মূল জনভিত্তি হল জম্মুতে। সেই জম্মুতে যদি বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তা হলে কেবল মাত্র হিন্দু ভোটের উপরে ভর করে জম্মু-কাশ্মীর শাসন করতে সক্ষম হবে বিজেপি। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই কারণেই পরিকল্পিত ভাবে জম্মুতে এক ধাক্কায় এতগুলো আসন বাড়ানো হয়েছে।
আজকের ওই খসড়া প্রস্তাবের বিরোধিতায় সরব হয়েছে উপত্যকার সব দলই। উপত্যকার মূল দুই রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও মেহবুবা মুফতির দল পিডিপি ওই প্রস্তাবকে কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এনসি নেতা ওমর আবদুল্লার কথায়, ‘‘কোনও ভাবেই ওই প্রস্তাবকে মেনে নেওয়া যায় না। যে ভাবে জম্মুতে ছ’টি ও কাশ্মীরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট, ২০১১ সালের আদমশুমারিকে উপেক্ষা করা হয়েছে এ ক্ষেত্রে।’’
২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সঙ্গেই রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয় কেন্দ্র। তারপর থেকেই রাজ্যের মর্যাদা চেয়ে বিধানসভা ভোটের দাবি জানিয়ে সরব উপত্যকার রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু কেন্দ্র গোড়া থেকেই আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ করে তবে ভোটে যাওয়ার পক্ষপাতী। বিরোধীদের মতে, আসন পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে আসন বাড়িয়ে নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে ভোটে জেতার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। আজ খসড়া প্রস্তাব সেই ইঙ্গিত দেওয়ায় ক্ষুব্ধ পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির অভিযোগ, ‘‘কাশ্মীরে একক ভাবে ক্ষমতা দখলের বিজেপির যে রাজনৈতিক স্বপ্ন রয়েছে তা চরিতার্থ করতেই ওই কমিশন গড়া হয়েছিল। আজ চেনা ছকে হেঁটেই রিপোর্ট দিয়েছে কমিশন।’’ উল্টো দিকে বিজেপি শিবিরের যুক্তি, দীর্ঘ সময় ধরে আসন পুনর্বিন্যাস আটকে ছিল। এর ফলে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের উপকার হবে।