কংগ্রেসের প্রচার কমিটিতে প্রিয়রঞ্জনের নাম!

প্রায় আট বছর ধরে হাসপাতালে শয্যাশায়ী তিনি! শারীরবৃত্তীয় সূচকগুলি ঠিকঠাক থাকলেও, তাঁর মস্তিষ্ক সাড়া দেয় না। তাই স্নান খাওয়া সবই করিয়ে দিতে হয়! শুরুতে কংগ্রেসের নেতাদের মুখে ওঁর অভাব অনুভবের কথা আখছার শোনা গেলেও, এখন বলতে গেলে কালে ভদ্রে ‘প্রিয়দার’ খোঁজ পড়ে! প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে কি কংগ্রেস ভুলেই গেল!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ২০:৩৬
Share:

প্রায় আট বছর ধরে হাসপাতালে শয্যাশায়ী তিনি! শারীরবৃত্তীয় সূচকগুলি ঠিকঠাক থাকলেও, তাঁর মস্তিষ্ক সাড়া দেয় না। তাই স্নান খাওয়া সবই করিয়ে দিতে হয়! শুরুতে কংগ্রেসের নেতাদের মুখে ওঁর অভাব অনুভবের কথা আখছার শোনা গেলেও, এখন বলতে গেলে কালে ভদ্রে ‘প্রিয়দার’ খোঁজ পড়ে!

Advertisement

প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে কি কংগ্রেস ভুলেই গেল!

কে বলে? অনেক অনেক দিন পর আজ হঠাৎই অদ্ভুত ভাবে দলের এই বর্ষীয়াণ নেতার নাম আজ উঠে এল সর্বভারতীয় কংগ্রেসের ঘোষণায়! পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের জন্য আজ প্রচার কমিটি, নির্বাচন কমিটি ও ইস্তাহার কমিটি ঘোষণা করেছে এআইসিসি। দেখা গেল, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে চেয়ারম্যান করে নব্বই জনের যে প্রচার কমিটি তৈরি হয়েছে সেই তালিকায় নাম রয়েছে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির। তালিকার পনেরো নম্বরে নাম রয়েছে রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রিয়রঞ্জনবাবুর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সিরও।

Advertisement

ব্যাপারটা অবাক করার মতো নয়? এতোগুলো বছর ধরে হাসপাতালে শয্যাশায়ী যিনি, পাছে ওঁর শরীরে কোনও সংক্রমণ হয় সে জন্য বাড়িতে পর্যন্ত আনা যাচ্ছে না, তিনি প্রচার করবেন কী ভাবে! তা হলে কি ভুলবশত ওঁর নাম রাখা হল তালিকায়?

কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সংবাদমাধ্যমের ভাবনার ‘ভুলটা’ শুধরে দিতে পাল্টা যুক্তি দেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রিয়দা কেন্দ্রে শীর্ষ সারির মন্ত্রী ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন তিনি। বাংলার মানুষের খুব প্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি হাসপাতালে রয়েছেন তো কী! ওঁর ভাবমূর্তি আমরা প্রচারে ব্যবহার করতেই পারি!’’ এখানেই থেমে থাকেননি জোশী! এও বলেন, ‘‘বিজেপি যদি রাম, লক্ষণ, হনুমানের মতো পৌরাণিক চরিত্রকে প্রচারে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে কংগ্রেসের একজন নেতার ভাবমূর্তি কেন আমরা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারব না!’’

তবে সংবাদমাধ্যমকে এই যুক্তি দিলেও দলের মধ্যে পার পাননি জোশী। এআইসিসি-র ওই তালিকা নিয়ে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্যকে ফোন করা বলে উনি বলেন, ‘‘না না ওটা বড় ভুল হয়েছে। শুধরে দিতে বলব।’’ কিন্তু জোশীর যুক্তি শুনে আবার প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘ওঁ এই ব্যাপারটা তো ভাবিনি। তাহলে তো ঠিকই আছে।’’ কিন্তু ঘটনা শুনে খুবই অসন্তুষ্ট হন দীপাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘এটা আবার কী? এরকম কখনও হতে পারে নাকি!’’ পরে দীপা দেবী জানান, তিনি বিষয়টি দলের হাইকম্যান্ডের নজরে এনেছেন। তালিকা শুধরে দিতে বলা হয়েছে। কেননা ব্যাপারটা শুনে কংগ্রেস সভানেত্রীও ভীষণ অসন্তুষ্ট!

সনিয়া গাঁধীর অসন্তুষ্ট হওয়ারই কথা! কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রসায়ণের খোঁজ যাঁরা রাখে তাঁরা জানেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে কতটা পছন্দ করতেন কংগ্রেস সভানেত্রী। বাজপেয়ী জমানায় লোকসভায় মুখ্য সচেতক হিসাবে বিজেপি বিরোধী আক্রমণের দুর্গ দায়িত্ব নিয়ে সামলাতেন প্রিয়বাবু। মনমোহন জমানায় জল সম্পদ উন্নয়ন, তথ্য ও সম্প্রচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিভা পাটিলের নির্বাচনের সময় প্রিয়বাবুর রাজনৈতিক দ্যৌত্য ও কৌশলের কথা কংগ্রেসের নেতারা এখনও প্রসঙ্গ উঠলেই প্রশংসা করেন। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রিয়রঞ্জনবাবু স্মৃতি হারিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনের ব্যাপারে ব্যক্তিগত ভাবে যত্নশীল ছিলেন সনিয়া গাঁধী।

তবে এখানেও একটি প্রশ্ন থেকে যায়! সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে যে বিবৃতি আজ প্রকাশ হয়েছে, তাতে সংগঠনের তরফে সাধারণ সম্পাদক জনার্দন দ্বিবেদী লিখেছেন, ‘‘কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সম্মতিক্রমে এই তালিকা প্রকাশ করা হল।’’ প্রশ্ন হল, তখন সনিয়া গাঁধী দেখেননি কেন? জবাবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতা বলেন, আসলে সনিয়া গাঁধী প্রস্তাবে সই করেন ঠিকই। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকরা যে তালিকা পাঠান তা নিয়ে বিতর্ক না থাকলে সচরাচর সেটা সভানেত্রী পড়েও দেখেন না। তাছাড়া যেভাবে প্রচার কমিটি তৈরি করা হয়, তার মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে দলের সবাইকে অংশীদার করা ও খুশি রাখা। কেউ যেন মনে না করেন তাঁকে গোটা প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। যে কারণে পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রচার কমিটিতে নব্বই জনের নাম রয়েছে। আদতে শেষমেশ প্রদেশ সভাপতি, প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান এবং আর তিন চার জন নেতা মিলে প্রচারের ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলি নেন।

কংগ্রেসের ঘোষিত কমিটি নিয়ে সমস্যার এখানেই শেষ নয়। ইস্তেহার কমিটিতে নাম রাখা হয়েছে দেবপ্রসাদ রায় তথা আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক মিঠু রায়ের। মিঠুবাবু ইতিমধ্যেই কংগ্রেস-সিপি এম জোটের বিরোধিতা করে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এও জানিয়ে দিয়েছেন, এই জোট হলে তিনি এবার প্রার্থীও হবেন না। এই অবস্থায় তাঁকে কীভাবে ইস্তেহার কমিটিতে রাখা হল? এ ব্যাপারে মিঠুবাবু জানান, ‘‘দলীয় তরফে আমাকে এখনও জানানো হয়নি। আমাকে প্রস্তাব দিলে তখন ‘না’ জানিয়ে দেব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement