Sanjeev Sanyal

ইতিহাস বদলে নজর আর্থিক উপদেষ্টার

কয়েক দিন আগে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সিন্ধু সভ্যতাকে ‘সরস্বতী-সিন্ধু’ সভ্যতা বলে বর্ণনা করেছেন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৫২
Share:

সঞ্জীব সান্যাল

গাঁধীর অহিংস আন্দোলনের পাশে সশস্ত্র সংগ্রামের অধ্যায়কে স্কুল-কলেজের ইতিহাসের পাঠ্যক্রমে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার এবং একই সঙ্গে ‘সরস্বতী-সিন্ধু’ সভ্যতার কথাও ইতিহাস বইতে রাখা দরকার বলে মনে করছেন মোদী সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল।

Advertisement

কয়েক দিন আগে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সিন্ধু সভ্যতাকে ‘সরস্বতী-সিন্ধু’ সভ্যতা বলে বর্ণনা করেছেন। সেই পথেই হাঁটার কথা বলছেন আর্থিক উপদেষ্টাও। নির্মলার বক্তৃতার সময়েই প্রশ্ন উঠেছিল, অর্থমন্ত্রী কি তবে বেদের সরস্বতী নদী ও সিন্ধু সভ্যতার সময়কার সরস্বতী নদীকে এক বলে দেখাতে চাইছেন?

আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সঞ্জীব দাবি করলেন, “এ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে শুনেই আমি বিস্মিত। বিতর্ক হওয়া উচিত, কেন এত দিন এগুলো পাঠ্যক্রমে ছিল না, তা নিয়ে। সরস্বতী নদীকে কেন্দ্র করেই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। হরপ্পা সভ্যতার চিহ্ন মিলেছে শুকিয়ে যাওয়া নদীখাতে। এখন সময় এসেছে, এ সব পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার।” সঞ্জীব নিজে লিখেছেন ভারতে নদনদী-সাগরের ইতিহাস নিয়ে একাধিক বই।

Advertisement

সঞ্জীবের সঙ্গে একমত নন বহু গবেষকই। সিন্ধু সভ্যতাই বেদ-বর্ণিত সরস্বতী সভ্যতা, এমন প্রমাণ মিলেছে বলেও তাঁরা মনে করেন না। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বা বঙ্গবাসী কলেজে প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক প্রিয়দর্শিনী সেনগুপ্তরা যেমন বলছেন, হরপ্পা সভ্যতায় হরিয়ানা থেকে পাকিস্তানের চোলিস্তান মরুভূমি পর্যন্ত যে শুকনো নদীখাতের অস্তিত্ব মেলে, ঋগ্বেদে সরস্বতী নদীর বর্ণনা তার হাজার বছর পরের ঘটনা। সেই নদীর সঙ্গে বৈদিক সরস্বতীর মিল নেই। সেই সূত্র ধরে হরপ্পা আর বৈদিক সভ্যতাকে মিশিয়ে দিয়ে আর্যদের ভারতীয় ভূমিপুত্র দেখানোর চেষ্টা মানা যায় না বলে গবেষকদের অনেকেরই মত।

সঞ্জীব এ দিন সমালোচনা করলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসচর্চা নিয়েও। বলন, “অহিংসা আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাসও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অরবিন্দ ঘোষ, রাসবিহারী বসু, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল থেকে একেবারে সুভাষচন্দ্র বসু পর্যন্ত। সেই কাহিনি কেন পুরোপুরি ইতিহাসে নেই?” সঞ্জীবের অভিযোগ, ইচ্ছা করেই পাঠ্যবইয়ে বিপ্লবীদের ভূমিকাকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাঁর প্রশ্ন, “কেন আমরা এখনও ঔপনিবেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা ইতিহাস নিয়ে পড়ে থাকব?”

ইতিহাসবিদদের অনেকের মতে, গেরুয়া শিবির থেকে এই জাতীয় প্রশ্ন তোলা হচ্ছে গৈরিকীকরণের লক্ষ্যেই। আদতে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতীয় ইতিহাসকে মুক্ত করার কাজ অনেক দিন আগেই শুরু হয়েছে।

ইতিমধ্যে নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কয়েকটি গ্যালারিতে সশস্ত্র বিপ্লবীদের জায়গা দেওয়ার কথা বলেছেন। তার নাম ‘বিপ্লবী ভারত’ রাখা উচিত বলেও প্রস্তাব দেন। সঞ্জীব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বিপ্লবী ভারত মিউজিয়ামের কথা ঘোষণা করেছেন। আমাদের যে সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাসের কথা বলতে হবে, এটা তার অংশ।” বুধবার আমদাবাদে সঞ্জীব বলেন, বিপ্লবী ভগৎ সিংহ ও তাঁর সঙ্গীদের ফাঁসি থেকে বাঁচাতে গাঁধী যথেষ্ট চেষ্টা করেননি। গাঁধীর প্রপৌত্র তুষার গাঁধী আজ সঞ্জীবের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “অর্থনীতির কেন বেহাল দশা, এত দিনে জানলাম। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা তো ইতিহাস নিয়ে মিথ্যে প্রচারে ব্যস্ত!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement